সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১০ হাজার সহকারী শিক্ষক নিয়োগ: আবেদন শুরু ৮ নভেম্বর

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১০ হাজার সহকারী শিক্ষক নিয়োগের জন্য নতুন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে। প্রথম ধাপে রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, ময়মনসিংহ ও রংপুর বিভাগের প্রার্থীদের আবেদন করার সুযোগ দেওয়া হবে। আগ্রহীরা আজ, ৮ নভেম্বর থেকে শুরু করে ২১ নভেম্বর পর্যন্ত অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন।

প্রার্থীদের জন্য বেতন হবে ২০১৫ সালের জাতীয় বেতন স্কেলের ত্রয়োদশ গ্রেডে। আবেদন করতে হলে প্রার্থীদের স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাত

মন্তব্য করুন

শিক্ষকদের ১৩ থেকে ১০ম গ্রেডে উন্নীত করার দাবি অযৌক্তিক: গণশিক্ষা উপদেষ্টা

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা ১৩তম গ্রেড থেকে সরাসরি ১০ম গ্রেডে উন্নীত হওয়ার যে দাবি তুলেছেন, সে বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার মন্তব্য করেছেন যে, এক লাফে ১০ম গ্রেডে যাওয়ার কোনো যুক্তি নেই। তিনি বলেন, অধিকাংশ সহকারী শিক্ষকই মনে করেন, এ দাবি বাস্তবসম্মত নয়।

ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার আরও বলেন, প্রধান শিক্ষকদের দশম গ্রেডে উন্নীত করা হলেও সাধারণ শিক্ষকদের সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ায় তাদের একই গ্রেডে আনা সম্ভব নয়। তাই একবারে ১৩ থেকে ১০ম গ্রেডে উন্নীত করার কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই। তবে, তিনি জানিয়েছেন যে, সহকারী শিক্ষকদের জন্য ১১তম গ্রেডের সুযোগ তৈরি করতে কাজ চলছে। পাশাপাশি, এ মুহূর্তে আন্দোলনে যাওয়াকে অযৌক্তিক মনে করেন তিনি।

অধ্যাপক রায় পোদ্দার প্রাথমিক শিক্ষার গুণগতমান উন্নয়নে শিক্ষাসংশ্লিষ্ট অংশীজনদের ভূমিকা নিয়ে খুলনা জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে আয়োজিত মতবিনিময় সভা শেষে এসব মন্তব্য করেন। সভায় বিভিন্ন প্রশাসনিক ও শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সেখানে শিক্ষকদের নৈতিকতা, ব্যবহারিক দক্ষতা, সহশিক্ষা কার্যক্রমসহ নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।

এদিকে, তিনি আরও জানান, সহকারী শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতির বিষয়টি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নীতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে করা হয়েছে। এখন ৮০ শতাংশ পদোন্নতি দেয়া হচ্ছে, যা আগে ছিল ৬৫ শতাংশ। বাকি ২০ শতাংশ পদ সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে পূর্ণ করা হবে।

মন্তব্য করুন

নাটোর থেকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ‘স্কুল ফিডিং’ কর্মসূচির শুরু

নাটোরের গুরুদাসপুরের খুবজীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ কর্মসূচির উদ্বোধন
নাটোরের গুরুদাসপুরের খুবজীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ কর্মসূচির উদ্বোধন

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ‘স্কুল ফিডিং’ কর্মসূচির উদ্বোধন করেছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার।

শনিবার (১৫ নভেম্বর) নাটোরের গুরুদাসপুরের খুবজীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপদেষ্টা বলেন, প্রাথমিক শিক্ষার গুণগতমান উন্নয়নে এই ফিডিং কর্মসূচি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এটি পুষ্টিহীনতা ও বিদ্যালয় চলাকালে শিশুদের ক্ষুধা দূর করতে সহায়তা করবে, ফলে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে আরও মনোযোগী হবে এবং বিদ্যালয়ে আসার আগ্রহ বাড়বে। তিনি জানান, শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে এই উদ্যোগটি সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত কর্মসূচি।

অনুষ্ঠানে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু নূর মো. শামসুজ্জামানের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন— প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মো. মাসুদ রানা, নাটোরের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক আরিফ হোসেন এবং ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রামের (ডব্লিউএফপি) আবাসিক প্রতিনিধি ও কান্ট্রি ডিরেক্টর ডমেনিকো স্কালপেল্লি। অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্য দেন প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ।

‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ফিডিং কর্মসূচি’র আওতায় ২০২৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৫০টি উপজেলার ১৯ হাজার ৪১৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩১ লাখ ১৩ হাজার শিক্ষার্থীকে সপ্তাহে পাঁচ দিন ফর্টিফাইড বিস্কুট, কলা বা মৌসুমি ফল, বনরুটি, ডিম এবং ইউএইচটি দুধ সরবরাহ করা হবে।

এতে বিদ্যালয়ে উপস্থিতির হার ৮০ শতাংশের বেশি হবে, ঝরে পড়া কমবে, প্রতি বছর প্রকৃত ভর্তির হার ১০ শতাংশের বেশি বাড়বে এবং শিশুদের বিদ্যালয়ে ধরে রাখার হার ৯৯ শতাংশে উন্নীত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। পাশাপাশি পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার গ্রহণের হার ৯০ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পাবে।

পর্যায়ক্রমে সারাদেশে এই কর্মসূচি বিস্তারের পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছে সরকার।

মন্তব্য করুন

প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে নারীদের বিশেষ কোটা বাতিল: নতুন বিধিমালায় ৭ শতাংশ কোটা ও নতুন পদ সৃষ্টি

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন এনে নতুন বিধিমালা প্রকাশ করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এই নতুন বিধিমালায় সহকারী শিক্ষক পদে নারীদের জন্য নির্ধারিত বিশেষ ৬০ শতাংশ কোটা বাতিল করা হয়েছে। এর পরিবর্তে মুক্তিযোদ্ধা ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীসহ অন্যান্যদের জন্য ৭ শতাংশ কোটা রেখে অবশিষ্ট ৯৩ শতাংশ পদ মেধাভিত্তিক করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে সংগীত ও শারীরিক শিক্ষা বিষয়ে আলাদা পদ সৃষ্টি করা হয়েছে।

নতুন বিধিমালা ও কোটা পরিবর্তন: ২৮ আগস্ট প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে 'সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা, ২০২৫' নামে এই প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়, যা অবিলম্বে কার্যকর হবে।

নতুন বিধিমালার অধীনে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরাসরি নিয়োগযোগ্য পদের ৯৩ শতাংশ হবে মেধাভিত্তিক। বাকি ৭ শতাংশ পদ নিম্নলিখিত কোটার আওতায় রাখা হয়েছে:

  • মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনার সন্তানদের জন্য: ৫ শতাংশ

  • ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর প্রার্থীদের জন্য: ১ শতাংশ

  • শারীরিক প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের প্রার্থীদের জন্য: ১ শতাংশ

তবে কোটার আওতায় যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে সেই শূন্য পদগুলো মেধার ভিত্তিতেই পূরণ করা হবে।

আগের কোটা বাতিল: স্মরণীয় যে, ২০১৯ সালের বিধিমালা অনুযায়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগে নারীদের জন্য ৬০ শতাংশ কোটা সংরক্ষিত ছিল। বাকি ৪০ শতাংশের মধ্যে ২০ শতাংশ ছিল পুরুষদের জন্য এবং ২০ শতাংশ ছিল পোষ্য কোটা। নতুন বিধিমালা কার্যকর হওয়ার ফলে 'সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা, ২০১৯' রহিত বলে বিবেচিত হবে।

অন্যান্য পরিবর্তন:

  • নিয়োগ পদ্ধতি: সরাসরি নিয়োগ ও পদোন্নতির মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগের সুযোগ থাকছে।

  • নিয়োগের স্থান: নিয়োগ প্রক্রিয়া উপজেলা ও ক্ষেত্রবিশেষে থানাভিত্তিক হবে।

  • বিষয়ভিত্তিক সংরক্ষণ: বিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রিধারীদের জন্য ২০ শতাংশ পদ এবং অন্যান্য বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রিধারীদের জন্য ৮০ শতাংশ পদ সংরক্ষিত থাকবে।

  • নতুন পদ সৃষ্টি: সংগীত ও শারীরিক শিক্ষা বিষয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে প্রথমবারের মতো আলাদা পদ সৃষ্টি করা হয়েছে।

মন্তব্য করুন

প্রাথমিক শিক্ষকদের আন্দোলন চলবে

সরকারি আশ্বাসে কর্মবিরতি স্থগিতের পর ফের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন

সরকারি আশ্বাসে কর্মবিরতি স্থগিতের ঘোষণা দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই ফের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছেন প্রাথমিক শিক্ষক নেতারা। তারা জানিয়েছেন, চলমান কর্মবিরতি ও শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি একসঙ্গে চলবে। সোমবার (১০ নভেম্বর) বিকেল ৫টায় শিক্ষক নেতারা অর্থসচিব ও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবের সঙ্গে চূড়ান্ত বৈঠকে বসবেন।

এর আগে রোববার (৯ নভেম্বর) রাত সাড়ে নয়টায় সচিবালয়ে সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের পর শিক্ষক নেতারা কর্মবিরতি স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছিলেন। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মো. মাসুদ রানা।

বৈঠকে উপস্থিত প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামসুদ্দিন মাসুদ জানান, বৈঠকে তিনটি প্রধান দাবি তুলে ধরা হয়। এগুলো হলো— সহকারী শিক্ষকদের বেতন স্কেল ১৩তম গ্রেড থেকে ১০ম গ্রেডে উন্নীত করা, চাকরির ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্তির জটিলতা নিরসন, এবং সহকারী শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক পদে শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতির ব্যবস্থা করা।

বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা শেষে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় আশ্বাস দেয় যে এসব দাবি অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে এবং দ্রুততম সময়ে সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হবে। এই আশ্বাসের ভিত্তিতে শিক্ষক নেতারা কর্মবিরতি স্থগিতের ঘোষণা দেন, তবে শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

কিন্তু এরপরই বিষয়টি নিয়ে শিক্ষক মহলে মতানৈক্য তৈরি হয়। শহীদ মিনারে অবস্থানরত শিক্ষক ও নেতারা বিভক্ত হয়ে পড়েন। সবশেষ রোববার দিবাগত রাত ১২টা ৪০ মিনিটে সহকারী শিক্ষকদের ১০ম গ্রেড বাস্তবায়ন সমন্বয় পরিষদের সমন্বয়ক মু. মাহবুবুর রহমান জানান, দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, কর্মবিরতি স্থগিতের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি, কেউ ভুলভাবে প্রচার করে থাকতে পারেন।

তিনি আরও বলেন, আগামীকাল লক্ষাধিক শিক্ষক কেন্দ্রীয় অবস্থান কর্মসূচিতে যোগ দেবেন। শিক্ষকদের ঐক্যই আমাদের শক্তি। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি।

এর আগে শনিবার (৮ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে ‘কলম বিসর্জন’ কর্মসূচিতে অংশ নিতে গেলে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এতে বহু শিক্ষক আহত হন। পরে শিক্ষকরা শহীদ মিনারে অবস্থান নেন এবং রোববার থেকে সারাদেশের প্রায় ৬৫ হাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি শুরু হয়। এতে প্রায় ৩ লাখ ৮৪ হাজার শিক্ষক পাঠদান থেকে বিরত থাকেন।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্যমতে, দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৬৫ হাজার ৫৬৭টি। কর্মবিরতি শুরুর পর থেকে এসব বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

চলতি বছরের এপ্রিল মাসে সরকার প্রধান শিক্ষকদের বেতন ১১তম থেকে ১০ম গ্রেডে উন্নীত করলেও সহকারী শিক্ষকদের গ্রেড ১৩তম থেকে ১২তম করার প্রস্তাব দেয়। এতে বৈষম্যের অভিযোগ তুলে শিক্ষকরা আন্দোলনে নামেন।

মন্তব্য করুন

দেশের প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বার্ষিক ছুটি কমছে: প্রস্তাব ৫৫-৬০ দিনে নামিয়ে আনার

শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি কমাতে এবং নিয়মিত পাঠদান নিশ্চিত করতে দেশের সরকারি-বেসরকারি সব প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বার্ষিক ছুটি কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বর্তমানে বছরে গড়ে ৭৫ দিন ছুটি দেওয়া হলেও, তা কমিয়ে ৫৫ থেকে ৬০ দিনে নামিয়ে আনার প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে শিক্ষকদের পক্ষ থেকে কিছু দাবি মেনে নেওয়ার শর্তে নতুন ছুটির সিদ্ধান্ত মানার কথা জানানো হয়েছে।

ছুটি কমানোর পরিকল্পনা: প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস ২০২৫ উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে। মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার জানান যে, বর্তমানে বছরে মাত্র ১৮০ দিন স্কুল খোলা থাকছে। বিভিন্ন আন্দোলন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের কারণে অতিরিক্ত ছুটি যুক্ত হয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিখন ঘাটতি বাড়ছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় বার্ষিক ছুটির সংখ্যা ১৬ থেকে ২০ দিন কমিয়ে ৫৫ থেকে ৬০ দিনে নামিয়ে আনার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। অধ্যাপক পোদ্দার আরও জানান, এই কাজ বাস্তবায়নে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে সঙ্গে নিয়ে কাজ করবে।

শিক্ষকদের জন্য উদ্যোগ: শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মধ্যে পর্যাপ্ত সময় নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করে উপদেষ্টা বলেন, শিক্ষকদের শিক্ষাবহির্ভূত কাজ থেকে বিরত রাখার উদ্যোগও নেওয়া হবে। তবে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সাপ্তাহিক ছুটি দুই দিনই থাকবে; এই ছুটি অন্যভাবে সমন্বয় করা হবে।

উচ্চপর্যায়ের আলোচনা: এর আগে গত মাসে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক যৌথ সভায় ছুটি কমানোর বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। সভায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ছুটি কমানোর প্রস্তাব উত্থাপন করা হলেও মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) এখনো তাতে সম্মতি জানায়নি। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মনে করছেন, শিক্ষার মান ও ধারাবাহিকতা রক্ষায় ছুটি কমিয়ে শিক্ষার সময় বাড়ানো প্রয়োজন।

সিদ্ধান্তের প্রাথমিক পর্যায়: যদিও বিষয়টি একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে এবং এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। প্রস্তাবটি বর্তমানে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে পর্যালোচনাধীন আছে এবং চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হলে তা আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে।

শিক্ষকদের শর্ত: এদিকে, প্রাথমিক শিক্ষকরা ছুটি কমানোর এই সিদ্ধান্ত মানতে আপত্তি জানিয়েছেন, যতক্ষণ না তাঁদের পূর্বের দাবিগুলো পূরণ করা হয়। প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক শামসুদ্দিন মাসুদ রবিবার (৭ সেপ্টেম্বর) দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ছুটি কমানোর আগে প্রাথমিক বিভাগকে 'নন-ভ্যাকেশনাল' (non-vacational) ঘোষণা করতে হবে। এটি হলে অবসরের পর শিক্ষকরা কিছু অতিরিক্ত সুবিধা পাবেন। পাশাপাশি, শিক্ষকদের তিন দফা দাবিতে চলমান আন্দোলনও মেনে নিতে হবে বলে তিনি জানান। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, জাতীয় দিবস ও প্রধান শিক্ষকের হাতে থাকা সংরক্ষিত ছুটিসহ ৭-৮ দিনের ছুটি শিক্ষকরা কখনোই ভোগ করতে পারেন না।

বিশ্লেষকদের অভিমত: শিক্ষাবিদ ও বিশ্লেষকরা মনে করেন, শিক্ষার মান উন্নয়নে নিয়মিত পাঠদান অত্যন্ত জরুরি। তবে ছুটি কমানোর সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করার আগে শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মতামত এবং বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনায় নেওয়া উচিত।

মন্তব্য করুন

চরাঞ্চলের স্কুলে পাঠদান বন্ধ, শ্রেণিকক্ষ ভাড়া দিয়ে অস্থায়ী আবাস গড়ে উঠেছে

ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার পদ্মা নদী বেষ্টিত দিয়ারা নাড়িকেল বাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে আবাসিক হোটেলের মতো ভাড়া দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সরকারি এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শ্রেণিকক্ষ ব্যবহার করা হচ্ছে বাইরের শ্রমিকদের অস্থায়ী থাকার জায়গা হিসেবে।

এ অঞ্চলের আরও অন্তত দশটি বিদ্যালয়ে একই চিত্র— কোথাও শিক্ষক আছেন কিন্তু শিক্ষার্থী নেই, আবার কোথাও শিক্ষার্থী আছে কিন্তু শিক্ষক অনুপস্থিত। ফলে বিদ্যালয়গুলো কাগজে-কলমে চালু থাকলেও বাস্তবে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ হয়ে পড়েছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, নদী বেষ্টিত এই এলাকার অনেক বিদ্যালয়ে বাইরের কৃষি শ্রমিকরা অস্থায়ীভাবে বসবাস করেন। সম্প্রতি কিছু স্কুল কক্ষ ভাড়া দেওয়া হয়েছে বলেও শোনা যাচ্ছে।

একজন স্থানীয় বাসিন্দা জানান, “কিছু মানুষ এখন বিদ্যালয়ের ভেতরে থাকে, রান্না-বান্নাও করে। শুনেছি তারা টাকা দিয়ে ঘর ব্যবহার করে। এটা তো সরকারি স্কুল— এমন হওয়া ঠিক নয়।”

চরখুনী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মেহেদী হাসান বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, “স্থানীয় মাতব্বর মান্নান শিকদার তার আবাদি জমিতে কাজের জন্য বাইরে থেকে কিছু শ্রমিক এনেছেন। তারাই স্কুলে অবস্থান করছেন। ভাড়া দেওয়া হয়নি, তারা জোর করে আছে। বিষয়টি উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে জানিয়েছি।”

শিক্ষার্থী না থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি জানান, “আমাদের স্কুলে শিক্ষার্থী খুবই কম। একটি রুমেই কষ্ট করে ক্লাস নিতে হয়।”

একই অবস্থা ইউনিয়নের মোজাফফরপুর, বিশ্বনাথপুর আকন্দি, নুরুদ্দিন সরদারেরকান্দি ও কটিকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও। কোথাও শিক্ষক আছেন কিন্তু শিক্ষার্থী নেই, কোথাও আবার উল্টো। শ্রেণিকক্ষ ধুলায় ঢাকা, মাঠে নেই শিশুদের কোলাহল।

স্থানীয় অভিভাবক রফিক শেখ বলেন, “আমাদের এলাকার স্কুলগুলো শুধু নামেই আছে। শিক্ষকরা মাসে এক-দুদিন এসে সই করে চলে যান। বাচ্চারা পড়াশোনার সুযোগ না পেয়ে মাদ্রাসায় চলে যাচ্ছে।”
রোকেয়া বেগম বলেন, “আমরা চাই সন্তানরা স্কুলে যাক, কিন্তু শিক্ষক না থাকায় তারা পড়াশোনা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। শিক্ষা ব্যবস্থা ঠিক না হলে এলাকার ভবিষ্যৎ অন্ধকার।”

অন্যদিকে, শিক্ষকরা নিজেদের সমস্যার কথা তুলে ধরে বলেন, দুর্গম চরাঞ্চলে প্রতিদিন বিদ্যালয়ে আসা অত্যন্ত কষ্টসাধ্য। নৌযান সংকট, নদীর স্রোত ও প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে নিয়মিত উপস্থিত থাকা সম্ভব হয় না।

মোজাফফরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রেজাউল ইসলাম বলেন, “চরাঞ্চলে প্রতিদিন স্কুলে যাওয়া সত্যিই কঠিন। বর্ষাকালে নদীর স্রোতের কারণে নৌকা পাওয়া যায় না।”
বিশ্বনাথপুর আকনকান্দি বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সাইফুর রহমান বলেন, “অনেক সময় নৌকা না পেলে পুরো দিনই স্কুলে পৌঁছানো যায় না। তাই কখনো কখনো দুপুরে ছুটি দিতে হয়।”

এ বিষয়ে সদরপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ মামুনুর রহমান বলেন, “বিদ্যালয় ভাড়া দেওয়া বা শ্রমিক থাকার বিষয়ে আমরা অবগত হয়েছি। ইতিমধ্যে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তের ফলাফলের ভিত্তিতে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

সূত্র: আরটিভি নিউজ

মন্তব্য করুন
×