প্রাথমিক শিক্ষায় নতুন দিগন্ত: ৫৩৪ বিদ্যালয়ে ২৬১৭ কোটি টাকার ‘রূপান্তর যাত্রা’ শুরু

 দেশের প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থাকে যুগোপযোগী ও মানসম্মত করতে এক বিশাল অবকাঠামোগত উন্নয়ন কর্মসূচির সূচনা করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই)। প্রায় ২ হাজার ৬১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে, সারাদেশের ৫৩৪টি নির্বাচিত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চেহারা পাল্টে দেওয়ার এই মহাপরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে।

‘বিদ্যমান মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ১০টি সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচিত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়ন’ শীর্ষক এই প্রকল্পের আওতায়, গ্রামীণ ও নগরীর প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো এক নতুন রূপে সেজে উঠবে।

 

যেসব স্কুলে আসছে পরিবর্তনের ছোঁয়া

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) মিরাজুল ইসলাম উকিল, এনডিসি স্বাক্ষরিত এক সাম্প্রতিক চিঠিতে এই উদ্যোগের বিস্তারিত তথ্য জানানো হয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে দুটি প্রধান ধারার বিদ্যালয় উপকৃত হবে:

১. মডেল স্কুলসমূহ: ৬৪টি জেলার বিদ্যমান ৪৮৮টি মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এই স্কুলগুলোর তথ্য ইতিমধ্যেই আইপিইএমআইএস সিস্টেম থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। ২. সিটি কর্পোরেশন এলাকার স্কুলসমূহ: দেশের ১০টি সিটি কর্পোরেশন এলাকা থেকে নির্বাচিত ৪৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এই ৪৬টি বিদ্যালয়ের তালিকা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) কর্তৃক প্রত্যয়নসহ অধিদপ্তরে জমা দিতে হবে।

 

২ হাজার ৬১৭ কোটি টাকার রূপরেখা

শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এই বিশাল অঙ্কের অর্থ (২ হাজার ৬১৭ কোটি টাকা) ব্যয় হবে বিদ্যালয়ের মৌলিক অবকাঠামো উন্নয়নে, যা শিক্ষার্থীদের জন্য একটি আদর্শ শিক্ষা পরিবেশ নিশ্চিত করবে। প্রকল্পের মূল লক্ষ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে:

  • আধুনিক শ্রেণিকক্ষ নির্মাণ: শিক্ষার্থীদের আরামদায়ক ও কার্যকর পাঠদানের পরিবেশ সৃষ্টি।

  • স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নয়ন: স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট ও পরিচ্ছন্নতার মান নিশ্চিত করা।

  • বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ: নিরাপদ পানীয় জলের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।

  • প্রশাসনিক ভবনের আধুনিকায়ন: শিক্ষকদের জন্য উন্নত কর্মপরিবেশ তৈরি।

  • খেলার মাঠের উন্নয়ন: শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য উপযুক্ত খেলার পরিবেশ তৈরি।

 

সমন্বিত প্রচেষ্টায় বাস্তবায়নের অঙ্গীকার

এই গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পটি যৌথভাবে বাস্তবায়ন করছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। প্রকল্পের স্বচ্ছতা ও সঠিক নির্বাচন নিশ্চিত করতে সিটি কর্পোরেশন এলাকার ৪৬টি বিদ্যালয়ের তালিকা প্রেরণের ক্ষেত্রে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রত্যয়নপত্রে উপজেলা শিক্ষা অফিসার ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের স্বাক্ষর বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আশা প্রকাশ করেছেন, এই ব্যাপক অবকাঠামোগত উন্নয়নের ফলে দেশের প্রাথমিক শিক্ষার পরিবেশ আরও উন্নত হবে। এর ফলস্বরূপ, শিশুরা বিদ্যালয়ে আসার প্রতি আরও বেশি আগ্রহী হবে এবং জাতি গঠনের ভিত্তি আরও মজবুত হবে।

এই প্রকল্প কেবল ইট-সিমেন্টের উন্নয়ন নয়, বরং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য উন্নত শিক্ষণ-শিখন পরিবেশ নিশ্চিত করার এক সুদূরপ্রসারী বিনিয়োগ, যা বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষায় এক নতুন প্রাণের সঞ্চার করবে।

মন্তব্য করুন

প্রাথমিক শিক্ষকদের আন্দোলন চলবে

সরকারি আশ্বাসে কর্মবিরতি স্থগিতের পর ফের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন

সরকারি আশ্বাসে কর্মবিরতি স্থগিতের ঘোষণা দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই ফের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছেন প্রাথমিক শিক্ষক নেতারা। তারা জানিয়েছেন, চলমান কর্মবিরতি ও শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি একসঙ্গে চলবে। সোমবার (১০ নভেম্বর) বিকেল ৫টায় শিক্ষক নেতারা অর্থসচিব ও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবের সঙ্গে চূড়ান্ত বৈঠকে বসবেন।

এর আগে রোববার (৯ নভেম্বর) রাত সাড়ে নয়টায় সচিবালয়ে সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের পর শিক্ষক নেতারা কর্মবিরতি স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছিলেন। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মো. মাসুদ রানা।

বৈঠকে উপস্থিত প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামসুদ্দিন মাসুদ জানান, বৈঠকে তিনটি প্রধান দাবি তুলে ধরা হয়। এগুলো হলো— সহকারী শিক্ষকদের বেতন স্কেল ১৩তম গ্রেড থেকে ১০ম গ্রেডে উন্নীত করা, চাকরির ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্তির জটিলতা নিরসন, এবং সহকারী শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক পদে শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতির ব্যবস্থা করা।

বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা শেষে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় আশ্বাস দেয় যে এসব দাবি অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে এবং দ্রুততম সময়ে সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হবে। এই আশ্বাসের ভিত্তিতে শিক্ষক নেতারা কর্মবিরতি স্থগিতের ঘোষণা দেন, তবে শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

কিন্তু এরপরই বিষয়টি নিয়ে শিক্ষক মহলে মতানৈক্য তৈরি হয়। শহীদ মিনারে অবস্থানরত শিক্ষক ও নেতারা বিভক্ত হয়ে পড়েন। সবশেষ রোববার দিবাগত রাত ১২টা ৪০ মিনিটে সহকারী শিক্ষকদের ১০ম গ্রেড বাস্তবায়ন সমন্বয় পরিষদের সমন্বয়ক মু. মাহবুবুর রহমান জানান, দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, কর্মবিরতি স্থগিতের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি, কেউ ভুলভাবে প্রচার করে থাকতে পারেন।

তিনি আরও বলেন, আগামীকাল লক্ষাধিক শিক্ষক কেন্দ্রীয় অবস্থান কর্মসূচিতে যোগ দেবেন। শিক্ষকদের ঐক্যই আমাদের শক্তি। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি।

এর আগে শনিবার (৮ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে ‘কলম বিসর্জন’ কর্মসূচিতে অংশ নিতে গেলে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এতে বহু শিক্ষক আহত হন। পরে শিক্ষকরা শহীদ মিনারে অবস্থান নেন এবং রোববার থেকে সারাদেশের প্রায় ৬৫ হাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি শুরু হয়। এতে প্রায় ৩ লাখ ৮৪ হাজার শিক্ষক পাঠদান থেকে বিরত থাকেন।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্যমতে, দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৬৫ হাজার ৫৬৭টি। কর্মবিরতি শুরুর পর থেকে এসব বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

চলতি বছরের এপ্রিল মাসে সরকার প্রধান শিক্ষকদের বেতন ১১তম থেকে ১০ম গ্রেডে উন্নীত করলেও সহকারী শিক্ষকদের গ্রেড ১৩তম থেকে ১২তম করার প্রস্তাব দেয়। এতে বৈষম্যের অভিযোগ তুলে শিক্ষকরা আন্দোলনে নামেন।

মন্তব্য করুন

দশম গ্রেডসহ তিন দফা দাবি বাস্তবায়নে রোববার থেকে প্রাথমিক শিক্ষকদের অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি

দশম গ্রেডসহ তিন দফা দাবি বাস্তবায়ন ও পুলিশের হামলার প্রতিবাদে রোববার (৯ নভেম্বর) থেকে সারাদেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছেন প্রাথমিক সহকারী শিক্ষকরা। একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ারও ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

শনিবার (৮ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৬টায় গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ ঘোষণা দেন প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক ও প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি শামসুদ্দিন মাসুদ।

তিনি বলেন, “দশম গ্রেডসহ তিন দফা দাবি বাস্তবায়ন এবং পুলিশের হামলার প্রতিবাদে আগামীকাল (রোববার) থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি চলবে। একই সঙ্গে সারাদেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করা হবে।”

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৬৫ হাজার ৫৬৯টি। এসব বিদ্যালয়ে কর্মরত আছেন ৩ লাখ ৮৪ হাজারেরও বেশি শিক্ষক, আর শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় এক কোটি

এদিকে আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। শিক্ষকদের এই কর্মবিরতি ও আন্দোলনের কারণে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অভিভাবকরা।

মন্তব্য করুন

শিক্ষকদের ১৩ থেকে ১০ম গ্রেডে উন্নীত করার দাবি অযৌক্তিক: গণশিক্ষা উপদেষ্টা

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা ১৩তম গ্রেড থেকে সরাসরি ১০ম গ্রেডে উন্নীত হওয়ার যে দাবি তুলেছেন, সে বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার মন্তব্য করেছেন যে, এক লাফে ১০ম গ্রেডে যাওয়ার কোনো যুক্তি নেই। তিনি বলেন, অধিকাংশ সহকারী শিক্ষকই মনে করেন, এ দাবি বাস্তবসম্মত নয়।

ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার আরও বলেন, প্রধান শিক্ষকদের দশম গ্রেডে উন্নীত করা হলেও সাধারণ শিক্ষকদের সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ায় তাদের একই গ্রেডে আনা সম্ভব নয়। তাই একবারে ১৩ থেকে ১০ম গ্রেডে উন্নীত করার কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই। তবে, তিনি জানিয়েছেন যে, সহকারী শিক্ষকদের জন্য ১১তম গ্রেডের সুযোগ তৈরি করতে কাজ চলছে। পাশাপাশি, এ মুহূর্তে আন্দোলনে যাওয়াকে অযৌক্তিক মনে করেন তিনি।

অধ্যাপক রায় পোদ্দার প্রাথমিক শিক্ষার গুণগতমান উন্নয়নে শিক্ষাসংশ্লিষ্ট অংশীজনদের ভূমিকা নিয়ে খুলনা জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে আয়োজিত মতবিনিময় সভা শেষে এসব মন্তব্য করেন। সভায় বিভিন্ন প্রশাসনিক ও শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সেখানে শিক্ষকদের নৈতিকতা, ব্যবহারিক দক্ষতা, সহশিক্ষা কার্যক্রমসহ নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।

এদিকে, তিনি আরও জানান, সহকারী শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতির বিষয়টি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নীতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে করা হয়েছে। এখন ৮০ শতাংশ পদোন্নতি দেয়া হচ্ছে, যা আগে ছিল ৬৫ শতাংশ। বাকি ২০ শতাংশ পদ সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে পূর্ণ করা হবে।

মন্তব্য করুন

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতিতে অভিজ্ঞতা বাড়ল: নতুন নিয়োগ বিধিমালার গেজেট প্রকাশ

 সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালার বড় ধরনের পরিবর্তন এনে নতুন গেজেট প্রকাশ করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এই নতুন বিধিমালায় প্রধান শিক্ষক পদে সহকারী শিক্ষকদের পদোন্নতির জন্য প্রয়োজনীয় চাকরির অভিজ্ঞতা ৮ বছর থেকে বাড়িয়ে ১২ বছর করা হয়েছে। এছাড়া নিয়োগের যোগ্যতা, কোটা এবং পদোন্নতির ক্ষেত্রেও আনা হয়েছে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন।

নতুন বিধিমালায় পরিবর্তন: গত বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) রাতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মো. মাসুদ রানা স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে 'সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা, ২০২৫' জারি করা হয়। এই বিধিমালা অবিলম্বে কার্যকর হবে এবং এর মাধ্যমে আগের 'সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা, ২০১৯' রহিত হয়ে যাবে।

প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া: নতুন বিধিমালা অনুযায়ী, প্রধান শিক্ষক পদের ৮০ শতাংশ পদ পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করা হবে এবং বাকি ২০ শতাংশ পদে সরাসরি নিয়োগ দেওয়া হবে। তবে পদোন্নতির যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে সেই শূন্যপদগুলোও সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে পূরণ করা হবে।

পদোন্নতির যোগ্যতা (সহকারী শিক্ষকদের জন্য): প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতির জন্য সহকারী শিক্ষক বা সহকারী শিক্ষক (সঙ্গীত) বা সহকারী শিক্ষক (শারীরিক শিক্ষা) পদে কর্মরত শিক্ষকদের এখন মৌলিক প্রশিক্ষণ ও চাকরি স্থায়ীকরণসহ কমপক্ষে ১২ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। ২০১৯ সালের বিধিমালায় এই অভিজ্ঞতা ছিল ৮ বছর।

সরাসরি নিয়োগের যোগ্যতা: সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা হিসেবে কোনো স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অন্যূন দ্বিতীয় শ্রেণি বা সমমানের সিজিপিএসহ স্নাতক বা স্নাতক (সম্মান) বা সমমানের ডিগ্রি থাকতে হবে। তবে শিক্ষাজীবনের কোনো স্তরে তৃতীয় বিভাগ অথবা সমমানের জিপিএ বা সিজিপিএ গ্রহণযোগ্য হবে না। এছাড়া, প্রার্থীদের অবশ্যই লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে।

আসন্ন নিয়োগ কার্যক্রম: এই নতুন বিধিমালা অনুযায়ী আগামীতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি আগস্ট মাসের মধ্যেই সহকারী শিক্ষকের প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার শূন্যপদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হতে পারে। এছাড়া, দেশের প্রায় ৪০ হাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের বিপুলসংখ্যক শূন্যপদে শিগগির পদোন্নতি ও সরাসরি নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।

মন্তব্য করুন

ইউনেস্কোর কনফুসিয়াস সাক্ষরতা পুরস্কার ২০২৫ পেল চলনবিলের ‘ভাসমান স্কুল’

ভাসমান স্কুল
ভাসমান স্কুল

বাংলাদেশের চলনবিল এলাকার সৌরশক্তিচালিত 'ভাসমান স্কুল' ইউনেস্কোর মর্যাদাপূর্ণ কনফুসিয়াস সাক্ষরতা পুরস্কার ২০২৫ অর্জন করেছে। এটি শিক্ষায় নতুন উদ্ভাবন এবং জীবনব্যাপী শিক্ষার প্রসারে বিশ্বের অন্যতম সর্বোচ্চ সম্মান, যা চীনা সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় প্রদান করা হয়।

শুক্রবার সিধুলাই স্ব-নির্ভর সংস্থার একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই পুরস্কার প্রাপ্তির তথ্য জানানো হয়েছে। বিশ্বের শত শত মনোনয়নের মধ্য থেকে ইউনেস্কো যে তিনটি উদ্যোগকে বিজয়ী হিসেবে নির্বাচন করেছে, তার মধ্যে রয়েছে—বাংলাদেশের সিধুলাই ভাসমান স্কুল, আয়ারল্যান্ডের লার্ন উইথ নালা ই-লার্নিং এবং মরক্কোর সেকেন্ড চান্স স্কুল অ্যান্ড ইনক্লুসিভ এডুকেশন প্রোগ্রাম।

পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানটি ২৭ সেপ্টেম্বর চীনের শানডং প্রদেশের চুফু শহরে, কনফুসিয়াসের জন্মস্থানে অনুষ্ঠিত হয়। এই স্কুলের স্থপতি মোহাম্মদ রেজোয়ান তার প্রতিষ্ঠান সিধুলাই স্ব-নির্ভর সংস্থার পক্ষে ট্রফি ও সনদ গ্রহণ করেন।

চলনবিল অঞ্চলে বেড়ে ওঠা মোহাম্মদ রেজোয়ান শৈশবে প্রতি বছর বর্ষাকালে তার স্কুল বন্ধ হয়ে যেতে দেখতেন। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই তিনি ২০০২ সালে একটি নৌকাকে স্কুলে রূপান্তরিত করার উদ্ভাবনী উদ্যোগ নেন। তার এই উদ্যোগটি বিশ্বের প্রথম ভাসমান স্কুল হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। সৌরশক্তিনির্ভর এসব ভাসমান স্কুল এখনো লাইব্রেরি ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে চলেছে, যা বর্ষায় চারদিকে পানিবেষ্টিত গ্রামগুলোতেও শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে সহায়তা করে।

ইউনেস্কো এই উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেছে, বন্যাপ্রবণ অঞ্চলের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে স্থানীয়ভাবে তৈরি উদ্ভাবনী উপায়ে শিক্ষার আলো পৌঁছে দেওয়াই এই ভাসমান স্কুলের সাফল্যের মূল কারণ।

বর্তমানে সিধুলাইয়ের ভাসমান স্কুলের এই মডেল বাংলাদেশের বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা অনুসরণ করছে। শুধু তাই নয়, এই অনন্য উদ্যোগ এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার অনেক দেশেও অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।

মন্তব্য করুন

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শুরু হচ্ছে জাতীয় স্কুল ফিডিং কর্মসূচি

‘স্কুল ফিডিং’ কর্মসূচি
‘স্কুল ফিডিং’ কর্মসূচি

বিদ্যালয়ে উপস্থিতির হার বাড়ানো, শিক্ষার্থীদের মনোযোগ ধরে রাখা এবং পুষ্টি উন্নয়নের লক্ষ্য নিয়ে দেশের নির্বাচিত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে আজ শনিবার থেকে শুরু হচ্ছে জাতীয় ‘স্কুল ফিডিং’ কর্মসূচি। এর উদ্বোধন হবে নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার খুবজীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। উদ্বোধন করবেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার।

‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ফিডিং কর্মসূচি’ প্রকল্পের আওতায় ২০২৭ সাল পর্যন্ত দেশের ১৫০টি উপজেলার ১৯ হাজার ৪১৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩১ লাখ ১৩ হাজার শিক্ষার্থী প্রতিদিন পুষ্টিকর খাবার পাবে। সপ্তাহের পাঁচটি স্কুল দিবসে নির্ধারিত খাবারের তালিকায় রয়েছে—

  • রবিবার: ১২০ গ্রাম বনরুটি ও সিদ্ধ ডিম

  • সোমবার: বনরুটি ও ২০০ গ্রাম ইউএইচটি দুধ

  • মঙ্গলবার: ৭৫ গ্রাম ফর্টিফাইড বিস্কুট ও কলা/মৌসুমি ফল

  • বুধবার: বনরুটি ও সিদ্ধ ডিম

  • বৃহস্পতিবার: বনরুটি ও সিদ্ধ ডিম

প্রস্তাবিত খাদ্যতালিকা অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন প্রয়োজনীয় মোট এনার্জির ২৫.৯%, মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টের ৩২.২%, প্রোটিনের ১৬.৪% এবং ফ্যাটের ২১.৭% গ্রহণ করতে পারবে—যা শিশুদের শারীরিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ জানান, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক, সমতাভিত্তিক ও মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করাই এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য। পুষ্টিকর খাবার সরবরাহের মাধ্যমে শিশুদের পুষ্টির অবস্থা উন্নত করা এবং শ্রেণিকক্ষে তাদের মনোযোগ বাড়ানোও এই প্রকল্পের অংশ।

তিনি আরও বলেন, ফিডিং কর্মসূচি চালু হলে বিদ্যালয়ে পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার গ্রহণের হার ৯০ শতাংশের বেশি হবে এবং ক্ষুধা নিবারণের ফলে শেখার পরিবেশ আরও উন্নত হবে।

মন্তব্য করুন
×