দেশব্যাপী ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের জ্বালাও-পোড়াও, সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) সকালে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ শাখার উদ্যোগে রাজধানীর পল্টন, গুলিস্তান জিরো পয়েন্ট ও প্রেসক্লাব এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। মিছিল শেষে বায়তুল মোকাররম উত্তর গেইটে এক প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন। এতে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সভাপতি আব্দুস সালাম এবং মহানগরীর অফিস সেক্রেটারি কামরুল আহসান হাসান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন মহানগরীর সমাজ কল্যাণ সম্পাদক ও পল্টন থানা আমীর শাহীন আহমেদ খান, সহকারী প্রচার সম্পাদক আবদুস সাত্তার সুমন, শাহবাগ পূর্ব থানা আমীর আহসান হাবীব, মতিঝিল দক্ষিণ থানা আমীর মুহাম্মদ মোতাছিম বিল্লাহসহ মহানগরীর বিভিন্ন থানার নেতাকর্মীরা। বিক্ষোভে সহস্রাধিক সাধারণ মানুষ অংশ নিয়ে জামায়াতে ইসলামীর প্রতিবাদ কর্মসূচির প্রতি সংহতি প্রকাশ করেন।
জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির রায়ের তারিখ ঘোষণা করা হবে আজ। বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল রায় ঘোষণার দিন নির্ধারণ করবেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। এর আগে গত ২৩ অক্টোবর মামলার বিচারকাজ শেষ করে ট্রাইব্যুনাল জানিয়েছিল, রায়ের তারিখ অল্প সময়ের মধ্যেই জানানো হবে। সে অনুযায়ী আজ (১৩ নভেম্বর) রায়ের তারিখ নির্ধারণের দিন ধার্য করা হয়েছে। রায়ের তারিখ ঘোষণাকে ঘিরে ট্রাইব্যুনাল এলাকায় নেওয়া হয়েছে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। নিয়মিত দায়িত্বে থাকা বাহিনীর পাশাপাশি অতিরিক্ত পুলিশ, সেনাবাহিনী, বিজিবি এবং সাদা পোশাকে গোয়েন্দা সদস্যরা মোতায়েন আছেন। সুপ্রিম কোর্ট এলাকায় দায়িত্বে থাকা এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আদালত ও ট্রাইব্যুনাল এলাকায় যেকোনো নাশকতা, হট্টগোল বা অপতৎপরতা ঠেকাতে বহুমাত্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তা থাকবে বিভিন্ন স্তরে ও পর্যায়ে।
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে গতকাল সোমবার রাতে রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে। লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বৈঠকের সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৈঠকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন জুলাই সনদ ও গণভোটের দাবিতে দলের অনড় অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করা হয়। একই সঙ্গে জুলাই সনদ ইস্যুতে সরকার যে সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে, তার সমালোচনা করা হয়। বৈঠক সূত্র জানায়, রাত সাড়ে ৮টায় শুরু হয়ে বৈঠকটি চলে প্রায় এক ঘণ্টা। নির্দিষ্ট কোনো এজেন্ডা না থাকলেও বৈঠকে আলোচনা হয়— দলীয় মনোনয়ন প্রক্রিয়া, জুলাই সনদ ও গণভোট ইস্যুতে মতভেদ নিরসন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরকারের আলোচনার সময়সীমা এবং দলের অভ্যন্তরীণ নীতিনির্ধারণসংক্রান্ত বিষয়ে। বিশেষভাবে আলোচনা হয়, সম্ভাব্য মনোনয়ন ঘোষণার পর বঞ্চিত নেতারা কীভাবে আচরণ করছেন এবং যেসব আসনে এখনো প্রার্থী চূড়ান্ত হয়নি, সেগুলো নিয়ে কী করা হবে। এ ছাড়া আগামী ১৩ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার মামলার রায় ঘোষণাকে ঘিরে নেতাকর্মীদের সতর্ক অবস্থানে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়। বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়াও স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমদ, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, বেগম সেলিমা রহমান, হাফিজ উদ্দিন আহমদ ও এ জেড এম জাহিদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-র মধ্যে দূরত্ব বেড়েছে। সমস্যা মূলত আসিফের দলের উচ্চ পদে নামানোর বিষয় নিয়ে। আসিফ চান দলের ‘মুখ্য সমন্বয়কারী’ পদে থাকা, কিন্তু এনসিপি নেতারা রাজি নন। এতে দলীয় অস্বস্তি এবং কমিটি সক্রিয় করার মাধ্যমে আসিফের পদক্ষেপও বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। আসিফের অনুসারীরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলন ও জাতীয় ছাত্রশক্তির বিভিন্ন শাখায় শীর্ষ পদে থাকলেও এনসিপি নেতারা তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। এর ফলে রাজনৈতিক দূরত্ব বেড়েছে, এবং এনসিপি মনে করছে আসিফ অভ্যুত্থানের শক্তির সঙ্গে ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ করছেন। রাজনৈতিক দিক থেকে দেখা যাচ্ছে, আসিফ ঢাকা-১০ আসনে ভোটার হওয়ার আবেদন করেছেন এবং এখানে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সম্ভাবনা আছে। আগে কুমিল্লা-৩ আসনে যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু সেখানে বিএনপি’র প্রার্থী থাকায় আসিফ ঢাকা-১০-এ আগ্রহী। তিনি সরকারি পদ থেকে শিগগিরই পদত্যাগ করে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করবেন। এনসিপি বর্তমানে নির্বাচন এককভাবে করবে নাকি জোটে যাবে, তা নিয়ে দ্বিধায়। দলটি জোট করলে সাময়িক সুবিধা হবে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে শক্তি কমে যেতে পারে। একক নির্বাচনে ব্যর্থ হলে দলের ভবিষ্যৎও শঙ্কার মধ্যে পড়ে। উপসংহারে, আসিফ-মাহমুদের দূরত্ব ও নির্বাচনী সিদ্ধান্ত এখন দলের ভবিষ্যত ও রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে।
আগামী জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের আসনে বসার কোনো পরিকল্পনা নেই জামায়াতে ইসলামী’র। দলটির শীর্ষ নেতারা আশাবাদী—তারা এবার সরকার গঠনের অংশীদার হবে, যদিও বাস্তবে ভোটের হিসাব তেমন নয়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বিএনপিই এককভাবে সবচেয়ে বেশি আসন পাবে, আর তাই ক্ষমতার অংশীদার হতে বিএনপির সঙ্গে আসন সমঝোতায় আগ্রহী জামায়াত। সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের দমন-পীড়ন, মামলা-হামলা ও আর্থিক ক্ষতির অভিজ্ঞতার কারণে জামায়াত কোনোভাবেই বিরোধী দলে বসতে চায় না। তারা মনে করে, এতে সাংগঠনিকভাবে ক্ষতি হবে। বরং বিএনপির সঙ্গে সমঝোতা করে বেশি আসন পাওয়া গেলে সংসদে তাদের প্রভাব বাড়বে এবং ভবিষ্যতের জন্য রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী অবস্থান তৈরি হবে। জামায়াতের নীতিনির্ধারণী মহলে এখন এ নিয়েই আলোচনা চলছে—বিএনপির জাতীয় সরকারের অংশীদার হিসেবে কেবিনেটেও জায়গা পাওয়া গেলে তা হবে দলের জন্য বড় সাফল্য। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করতে পারবে কি না, তা এখনো অনিশ্চিত। তবে সূত্র বলছে, তারা কিছু আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এতে তারা ৩৫ থেকে ৬০টি আসনে জয় পেতে পারে বলে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ হিসাব। জামায়াতের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র মনে করে, বিরোধী দলে গেলে সরকারের ব্যর্থতা নিয়ে কথা বলতে হবে, যা তাদের রাজনৈতিক অবস্থানকে জটিল করবে। কারণ তখন আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও সরকারের সমালোচক হবে—ফলে জামায়াতকে পরোক্ষভাবে বিএনপির বিপক্ষে অবস্থান নিতে হতে পারে। এই পরিস্থিতিকে তারা ‘আত্মঘাতী রাজনীতি’ বলে মনে করছে। জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, “জাতীয় পার্টি ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে অবৈধভাবে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে সহযোগিতা করেছে। জনগণ তাদের আর দেখতে চায় না।” তিনি দাবি করেন, আওয়ামী লীগের ছদ্মবেশী স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জনগণ চিহ্নিত করে প্রতিহত করবে। অন্যদিকে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড. হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, “জামায়াত কেন বিরোধী দলে যাবে? আমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পেয়ে সরকার গঠন করব, ইনশাআল্লাহ।” তিনি আরও বলেন, “আওয়ামী লীগের বর্ণচোরা প্রার্থীরা জনসমক্ষে টিকতে পারবে না। জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করবে।”
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মন্তব্য করেছেন যে, জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামী, মীর কাসেম আলী এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সাবেক সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীসহ বহু আলেম-ওলামাকে মিথ্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। শনিবার (২৫ অক্টোবর) জাতীয় শিল্পকলা একাডেমিতে দৈনিক নয়া দিগন্তের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই মন্তব্য করেন। মির্জা ফখরুল বলেন, গণতন্ত্রকামী শক্তির ওপর ফ্যাসিবাদী সরকারের দমন-পীড়নের কথা জাতি ভুলে যায়নি। তিনি অভিযোগ করেন, "আমাদের প্রায় ৬০ লাখ কর্মীর নামে মিথ্যা মামলা হয়েছে, ২০ হাজারের বেশি নেতাকর্মী হত্যাকাণ্ড ও গুমের শিকার হয়েছেন। জামায়াতের তৎকালীন আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, নয়া দিগন্তের প্রতিষ্ঠাতা মীর কাসেম আলী, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীসহ অনেক আলেম-ওলামাকে মিথ্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে—এটি জাতির ইতিহাসে এক কলঙ্কজনক অধ্যায়।" তিনি আরও বলেন, দেশের মানুষ একটি স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র চায়, যা কোনো বিদেশি শক্তির নিয়ন্ত্রণে নয়, জনগণের ইচ্ছায় পরিচালিত হবে। বিএনপি মহাসচিব এ সময় ১৯৭৫ সালের বাকশাল শাসনের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, তখন সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছিল, যার ফলে সাংবাদিকরা বেকার হয়েছিলেন এবং অনেকে রাস্তায় হকারি করেছেন। তিনি দাবি করেন, পরে জিয়াউর রহমানই সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনেন এবং বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, রাজনৈতিক সহিংসতা বা মতানৈক্য বড় আকারে বাড়তে না দিয়ে দলগুলোর উচিত নির্বাচনী ট্রেনেই ওঠা। তিনি আশা প্রকাশ করেন, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। মির্জা ফখরুল আরও বলেন, "যদি সঠিক সময়ে নির্বাচন হয়, তাহলেই আমরা প্রকৃত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে যেতে পারব।"
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ক্ষমতায় গেলে শিক্ষাক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার প্রয়াত অবিসংবাদিত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার শিক্ষা সংক্রান্ত বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, শিক্ষা এমন একটি শক্তি যা প্রয়োজনমতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রয়োগ করে সাফল্য লাভ করা যায়। শনিবার বিকালে কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তারেক রহমান এই মন্তব্য করেন। খন্দকার শামসুল আলম ফাউন্ডেশন কর্তৃক বিএনপি ঘোষিত ৩১ দফার ওপর আয়োজিত মেধাবৃত্তি পরীক্ষার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। এদিন তিনি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া কয়েকজন শিক্ষার্থীর প্রশ্নের জবাব দেন এবং তাদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেন। তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, লেখাপড়ার উন্নতির জন্য এবং ভালো ফলাফলের জন্য কঠোর অধ্যবসায়ের কোনো বিকল্প নেই। তারেক রহমান আরও জানান, বিএনপি ক্ষমতায় যেতে পারলে কৃষি ক্ষেত্রে উন্নয়নের জন্য খাল খনন কর্মসূচিকে অগ্রাধিকার দেবে। বক্তৃতার একপর্যায়ে তিনি বিএনপির ঘোষিত ৩১ দফার পাশাপাশি সমসাময়িক বিষয় নিয়ে খুব দ্রুত মুখোমুখি কথা বলার আশাবাদ ব্যক্ত করেন। বর্ণাঢ্য আয়োজনে অনুষ্ঠিত এই মেধাবৃত্তি পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালাম, কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি মো. শরীফুল আলম, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি রকিবুল ইসলাম রকিব, কিশোরগঞ্জ জজ কোর্টের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট মো. জালাল উদ্দীন, স্থানীয় বিএনপি নেতা ভিপি কামাল প্রমুখ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন খন্দকার আল আশরাফ মামুন। অনুষ্ঠানে উপজেলার ৮৪টি স্কুল-মাদ্রাসার ২০ সহস্রাধিক শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং জেলা ও উপজেলা বিএনপিসহ অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী, অভিভাবকরা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে গত ১৬ আগস্ট উপজেলার ১০টি কেন্দ্রে একযোগে এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ৮৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১০ হাজার ২১১ জন শিক্ষার্থী অংশ নেয়। জানা যায়, খন্দকার শামসুল আলম ফাউন্ডেশন এই আয়োজন করে। পরীক্ষায় ৩১ নম্বরের এমসিকিউ ভিত্তিক প্রশ্নের উত্তর দিতে শিক্ষার্থীরা ৩৫ মিনিট সময় পেয়েছিল। আয়োজকরা জানান, পরীক্ষা শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে ৩৫০ জন শিক্ষক, ৩০০ স্বেচ্ছাসেবক, পুলিশ ও গ্রাম পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করেন। গত ২০ সেপ্টেম্বর পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। বিএনপি ঘোষিত ৩১ দফা বাস্তবায়নে কাজ করছেন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান খন্দকার আল আশরাফ মামুন, যিনি যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক কর্মসংস্থান বিষয়ক সম্পাদক। খন্দকার আল আশরাফ মামুন বলেন, ৩১ দফা কী, কেন এবং কীভাবে বাস্তবায়ন সম্ভব— তা শিক্ষার্থীদের জানাতেই এই আয়োজন করা হয়েছিল। তিনি জানান, আশার চেয়ে অনেক বেশি সাড়া পাওয়া গেছে এবং এত শিক্ষার্থী অংশ নেবে— তা অকল্পনীয় ছিল। তিনি মনে করেন, এখান থেকে ৩১ দফা ধারণ করা নতুন প্রজন্ম তৈরি হবে। বিশেষ করে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে 'আগামী দিনের রাষ্ট্রনায়ক' বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে তাদের উৎসাহিত করায় তিনি আনন্দিত ও কৃতজ্ঞ। এই পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান উপলক্ষে পাকুন্দিয়া উপজেলা সদরে দিনব্যাপী উৎসবের আমেজ বিরাজ করছিল। এ ধরনের অনুষ্ঠানে খুশি হয়েছেন শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক ও এলাকাবাসী। অনুষ্ঠানে মেধাবৃত্তি পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের জন্য ৬০ জন শিক্ষার্থীর হাতে নগদ অর্থ পুরস্কার ও ক্রেস্ট তুলে দেওয়া হয়।
শুক্রবার, রাজধানীর রমনা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ১৯৯০ সালের স্বৈরাচারবিরোধী গণ-অভ্যুত্থানের শহীদ নাজির উদ্দিন জেহাদের ৩৫তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। কারও নাম সরাসরি উল্লেখ না করে তিনি প্রশ্ন তোলেন, বিএনপির নির্বাচনী প্রতীক 'ধানের শীষ' নিয়ে অযথা কেন টানাটানি হচ্ছে? তিনি বলেন, "ভাই, আমরা তো আপনাদের প্রতীকে বাধা দিইনি। আপনাদের প্রতীক নির্বাচন কমিশন দেবে, সে সিদ্ধান্ত তারাই নেবে।" এই মন্তব্য আসে যখন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) তাদের নির্বাচনী প্রতীক হিসেবে 'শাপলা' দাবি করে। তবে নির্বাচন কমিশন (ইসি) এনসিপিকে এই প্রতীক দিতে রাজি হয়নি। এর প্রতিক্রিয়ায়, গতকাল (বৃহস্পতিবার) ইসির সাথে বৈঠক শেষে এনসিপি'র মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী তাদের দাবি পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, "হয় শাপলা প্রতীক দিতে হবে, নয়তো ধান বা সোনালি আঁশ প্রতীক বাতিল করতে হবে।" তিনি আরও জানান, "শাপলা প্রতীক ছাড়া এনসিপি নিবন্ধন নেবে না।" আজকের সভায় মির্জা ফখরুল বলেন, "কিছু ব্যক্তি বা দল ধমক ও হুমকি দিচ্ছে যে নির্দিষ্ট প্রতীক না পেলে তারা নির্বাচনে যাবে না বা অমুকের প্রতীক বাতিল করতে হবে। আমরা তো বলিনি যে আপনাদের প্রতীক দেওয়া যাবে না। তাহলে বিএনপির 'ধানের শীষ' নিয়ে এমন অযথা টানাটানি কেন?" তিনি দৃঢ়তার সাথে বলেন যে 'ধানের শীষ' অপ্রতিরোধ্য এবং এটিকে থামানো যাবে না। মির্জা ফখরুল উল্লেখ করেন, "গ্রামেগঞ্জে গেলে একটাই স্লোগান—শুধু ধান লাগাও, ধান লাগাও—এটাই প্রধান সমস্যা। তাই তারা 'ধানের শীষ'-কে রুখে দিতে চায়, আটকে দিতে চায়। কারণ, ধানের শীষ জিতলে বাংলাদেশের শত্রুরা তাদের সব ষড়যন্ত্রে পরাজিত হয়ে চলে যেতে বাধ্য হবে।" শেখ হাসিনাকে 'দানব' (মনস্টার) আখ্যা দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, "দানব শেখ হাসিনা এমনি এমনি দিল্লি পালিয়ে যাননি; যেতে বাধ্য হয়েছেন। কারণ, আমরা সেই ভিত্তি তৈরি করেছি। দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে লড়াই, সংগ্রাম ও রক্ত দিয়ে আমরা সেই অর্জন করেছি।" তিনি মন্তব্য করেন, কয়েক দিনের লাফালাফিতে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয় না। মির্জা ফখরুল বলেন, "গণতন্ত্র গড়তে হলে অনেক পরিশ্রম, ত্যাগ এবং জনগণের কাছে যাওয়া দরকার। বিএনপি হলো গণতন্ত্রের জন্য মানুষের কাছে যাওয়া দল।" আমলাতন্ত্রকে একটি নির্দিষ্ট দলের পকেটে নেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ এনে মির্জা ফখরুল বলেন, "আমরা দেখছি আমলাতন্ত্রকে একটি দলের পকেটে নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। এটা আমরা কিছুতেই মেনে নেব না। নির্বাচনের সময় সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ আমলাতন্ত্র ও সরকার থাকতে হবে। নির্বাচন কমিশন এবং প্রশাসনকে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ থাকতে হবে; কোনো দলের কাছে যেন মাথা নত না করে।" সভাপতির বক্তব্যে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানুল্লাহ আমান শহীদ জেহাদের স্মৃতিচারণা করে বলেন, "সেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার সামনে শহীদ জেহাদের লাশ রেখে আমরা স্বৈরাচার পতনের শপথ নিয়েছিলাম। পরের দিনের হরতাল কর্মসূচিতে পুলিশের লাঠিচার্জের পর আমরা আহত অবস্থাতেও হাসপাতাল থেকে শহীদ মিনারে গিয়ে আবার শপথ নিই। শেষ পর্যন্ত আমরা স্বৈরাচারের পতন ঘটাতে সফল হয়েছিলাম।" বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকনের সঞ্চালনায় এ স্মরণসভায় বিএনপি নেতা আসাদুজ্জামান রিপন-সহ অন্যান্য নেতারাও বক্তব্য দেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রকাশিত বার্ষিক শিক্ষাপঞ্জি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, দুর্গাপূজা উপলক্ষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানভেদে ছুটির দিনগুলোতে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য রয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে পূজার আমেজ শুরু হচ্ছে ২৬ সেপ্টেম্বর থেকেই। কারণ ওই দুই দিন (২৬ ও ২৭ সেপ্টেম্বর) সাপ্তাহিক বন্ধের পর ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে পূজার ছুটি কার্যকর হবে। একটানা ছুটি কাটিয়ে ৭ অক্টোবরের পর আবার নতুন উদ্যমে শুরু হবে ক্লাস। একইভাবে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী সরকারি ও বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং কলেজগুলোতেও ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে ৭ অক্টোবর পর্যন্ত টানা বারো দিনের ছুটি মিলবে। ৮ অক্টোবর থেকে আবার গরমিল ছাড়া ক্লাস চলবে যথারীতি। অন্যদিকে, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থা ভিন্ন। শিক্ষাপঞ্জি অনুযায়ী, এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে দুর্গাপূজার জন্য ছুটি থাকবে মাত্র দুই দিন—১ ও ২ অক্টোবর। তবে এর সঙ্গে যোগ হবে ৩ ও ৪ অক্টোবরের সাপ্তাহিক বন্ধ। ফলে মোট ছুটি দাঁড়াবে চার দিনে। ৫ অক্টোবর থেকে পুরোদমে আবার চলবে পাঠদান। 👉 প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে ছুটি দীর্ঘায়িত হলেও মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তুলনামূলকভাবে সীমিত এই ছুটির মেয়াদ শিক্ষার্থীদের পাঠচর্চার ধারাবাহিকতায় রাখবে এক ধাপ এগিয়ে।
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে (নিম্নমাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তর) চলতি বছরের ৩০ নভেম্বরের মধ্যে নিয়মিত ম্যানেজিং কমিটি গঠন এবং ১ ডিসেম্বর থেকে সব অ্যাডহক কমিটি বিলুপ্ত করার যে পরিপত্র শিক্ষা মন্ত্রণালয় জারি করেছিল, তার কার্যক্রম স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগ থেকে গত ৮ সেপ্টেম্বর পরিপত্রটি জারি করা হয়। ওই পরিপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে করা এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে আজ মঙ্গলবার বিচারপতি কাজী জিনাত হক ও বিচারপতি আইনুন নাহার সিদ্দিকার সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এই আদেশ দেন। আইনজীবীদের তথ্যমতে, নিম্নমাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটি প্রবিধানমালা–২০২৪ এ চলতি বছরের ২৮ ও ৩১ আগস্ট সংশোধনী আনে ঢাকাসহ বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ড। সংশোধনের মাধ্যমে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মনোনয়নসংক্রান্ত ১৩(১) বিধি এবং যোগ্যতাসংক্রান্ত ৬৪(৩) বিধি পরিবর্তন করা হয়। এই দুই বিধির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে এমরান হোসেনসহ চারটি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অ্যাডহক কমিটির সভাপতি গত রোববার রিট আবেদন করেন। আদালতে রিট আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ফখরুল ইসলাম। তাঁর সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মো. মুজাহিদুল ইসলাম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নূর মুহাম্মদ আজমী। পরে আইনজীবী ফখরুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, দেশের নয়টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে প্রায় ২০ হাজারের বেশি বেসরকারি মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এই বোর্ডগুলো ম্যানেজিং কমিটি পরিচালনাসংক্রান্ত প্রবিধানমালায় সংশোধন আনে, যেখানে বলা হয়েছে— সরকারি, আধা সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত নবম গ্রেডের নিচে নন এমন কর্মকর্তা এবং অবসরপ্রাপ্ত হলে পঞ্চম গ্রেডের কর্মকর্তা ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হতে পারবেন। অর্থাৎ বেসরকারি এসব প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শুধুমাত্র সরকারি বা আধা সরকারি কর্মকর্তা ছাড়া অন্য কেউ হতে পারবেন না। আগে যেখানে সভাপতি নির্বাচনের মাধ্যমে হতেন, সেখানে এখন এই যোগ্যতাসীমা আরোপ করা হয়েছে— যা আবেদনকারীদের মতে বৈষম্যমূলক। রিটে আদালতের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে, সংশোধিত ১৩(১) এবং ৬৪(৩) বিধি কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না। হাইকোর্ট রুল জারি করে ৮ সেপ্টেম্বরের পরিপত্রের কার্যক্রম স্থগিত করেছেন। ফলে বেসরকারি মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অ্যাডহক কমিটি আপাতত কাজ চালিয়ে যেতে পারবে।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রাজস্ব খাতে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা-২০২৩ এর ৩য় গ্রুপের ( ০৩ টি পার্বত্য জেলা ব্যতীত ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের ২১ টি জেলা) লিখিত পরীক্ষার ফলাফল আজ প্রকাশিত হয়েছে। পরীক্ষায় ২৩,০৫৭ (তেইশ হাজার সাতান্ন) জন উত্তীর্ণ হয়েছে। ২৯ মার্চ ২০২৪ এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষার্থী ছিলেন ৩ লাখ ৪৯ হাজার ২৯৩ জন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট www.mopme.gov.bd এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট www.dpe.gov.bd -তে ফলাফল পাওয়া যাবে। উত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীরা মোবাইলেও মেসেজ পাবেন। মৌখিক পরীক্ষার তারিখ, সময় ও স্থান পরবর্তীতে জানানো হবে।
বেসরকারি স্কুল-কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি হিসেবে শুধু সরকারি কর্মকর্তা (নবম গ্রেডের নিচে নয়) বা অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (পঞ্চম গ্রেডের নিচে নয়) মনোনয়ন দেওয়ার বিধান সংবলিত প্রজ্ঞাপনের কার্যকারিতা স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে আদালত রুল জারি করে জানতে চেয়েছেন যে, বেসরকারি স্কুল-কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি হিসেবে কেবল সরকারি কর্মকর্তা বা অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে মনোনয়নের এই বিধান কেন অসাংবিধানিক ও বেআইনি ঘোষণা করা হবে না। আদেশের দিন ও বেঞ্চ বুধবার (২২ অক্টোবর) বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি আসিফ হাসানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন। রিটের কারণ ও আইনজীবীর বক্তব্য বেসরকারি স্কুল-কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি পদে কেবল সরকারি কর্মকর্তাদের মনোনয়নের এই বিধানকে চ্যালেঞ্জ করে অ্যাডভোকেট মোকছেদুর রহমান আবির রিটটি দায়ের করেন। রিটের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন। তিনি বলেন, বেসরকারি স্কুল-কলেজের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি পদে শুধু সরকারি কর্মকর্তাদের মনোনয়নের বিধান বৈষম্যমূলক। এই যুক্তিতেই আদালত প্রজ্ঞাপনটির কার্যকারিতা স্থগিত করেছেন। প্রজ্ঞাপনের মূল বিষয়বস্তু গত সেপ্টেম্বরে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বেসরকারি স্কুল-কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি সরকারি চাকরিজীবী ছাড়া অন্য কেউ হতে পারবেন না। এই পদে নবম গ্রেড বা তার ওপরের পদে কর্মরত কিংবা পঞ্চম গ্রেড বা তার ওপরের পদে অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তারাই দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। এছাড়া, সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সভাপতির প্রার্থীর ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক বা সমমান হতে হবে। সরকারি কর্মকর্তা ছাড়াও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সভাপতি হতে পারবেন। আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়মিত কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে। আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয়ক খন্দোকার এহসানুল কবির জানান, বিদ্যমান নিয়মে সামান্য সংশোধন এনে শুধু সভাপতি পদটির জন্য এই পরিবর্তন আনা হয়েছিল।
ঢাকা: মিরপুরের মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে উন্নয়নমূলক কাজের নামে শ্রমিকদের মজুরি বাবদ বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্ত প্রতিবেদনে দেখা যায়, মাত্র দুই মাসের মধ্যে শ্রমিকদের পারিশ্রমিক ও মজুরি খাতে ৩,১৮,৮৯,০৫৪/- (তিন কোটি আঠারো লক্ষ ঊননব্বই হাজার চুয়ান্ন) টাকা ব্যয় করা হয়েছে। এই বিপুল অঙ্কের অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা (PPR) সম্পূর্ণরূপে লঙ্ঘন করা হয়েছে। কোটি কোটি টাকার মজুরি, টেন্ডার নেই তদন্ত প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২0২৪ সালের ২০ ডিসেম্বর থেকে ২০২৫ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত (প্রায় দুই মাস) এডহক কমিটির নির্দেশে ৪ কোটি ৬৬ লক্ষ টাকার উন্নয়ন কাজ করা হয়। এই কাজের মধ্যে নির্মাণ ও মেরামতের জন্য ব্যবহৃত শ্রমিক মজুরি বাবদ ব্যয়িত অর্থের হিসাব নিম্নরূপ: কাজের বিবরণ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যয়িত টাকার পরিমাণ রং করা (লেবার) বান্না এন্টারপ্রাইজ ১,৩০,৯২,৯৭৭/- রাজমিস্ত্রী, কাঠ, সেনিটারী (লেবার) মেসার্স শিলা এন্টারপ্রাইজ ৬১,২০,৪৬০/- টাইলস, মোজাইক ও ইলেকট্রিক (লেবার) তানভীর এন্টারপ্রাইজ ১৩,৭৭,৪৭৪/- গ্রীল, অভিভাবক সেড (লেবার) মেসার্স মোল্লা ওয়েল্ড ১২,৪৮,১৪৩/- মোট শ্রমিক মজুরি ব্যয় ৩,১৮,৮৯,০৫৪/- (এছাড়া মালামাল ক্রয় বাবদ আরও ১,২৩,৭৪,৪৩৭/- টাকা নগদে ব্যয় করা হয়)। বিধি লঙ্ঘন করে স্পট কোটেশন তদন্তে ডিআইএ নিশ্চিত করেছে যে, এই বিশাল অঙ্কের মজুরি প্রদানের ক্ষেত্রে কোনো প্রকার দরপত্র বা টেন্ডার আহ্বান করা হয়নি। পিপিআর-এর লঙ্ঘন: পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা (PPR) অনুযায়ী, ৬,০০,০০০/- (ছয় লক্ষ) টাকার অধিক মজুরি প্রদানের ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতামূলক দরপত্রের মাধ্যমে সর্বনিম্ন দরদাতাকে কার্যাদেশ প্রদান করতে হয়। ক্ষমতার অপব্যবহার: কিন্তু মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ৬ লক্ষ টাকার সীমা অতিক্রম করে প্রায় সোয়া তিন কোটি টাকা ব্যয় করেছে 'স্পট কোটেশনের' মাধ্যমে। এই পদ্ধতিতে কাজ দেওয়ায় প্রতিযোগিতামূলক দর নিশ্চিত হয়নি, যা আর্থিক অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাতের পথ সুগম করেছে বলে প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়। বাতিল কমিটি দিয়ে কাজ করানোর অভিযোগ তদন্ত প্রতিবেদন আরও জানায়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক নতুন এডহক কমিটি গঠনের নির্দেশ (১৮/১১/২০২৪) জারির পরও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জনাব মোঃ আখলাক আহম্মেদ পূর্বের (বাতিলকৃত) এডহক কমিটির মাধ্যমেই কার্যক্রম চালিয়ে যান। বাতিল কমিটির মাধ্যমে বিপুল অঙ্কের এই উন্নয়ন কাজ করানো হয়েছে, যা মন্ত্রণালয়ের আদেশ অমান্য করার শামিল। রাজস্ব ফাঁকি উন্নয়ন কাজের জন্য ঠিকাদারদের পরিশোধিত ৩,১২,১৮,০০০/- টাকার ওপর ধার্যকৃত ভ্যাট ও আয়কর সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া হয়নি। শ্রমিক মজুরি বাবদ ব্যয়িত বিপুল অঙ্কের অর্থের ওপরও এই রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হয়েছে। সরকারি কোষাগারে ফেরতযোগ্য মোট ৩৮,০২,২৫০/- (আটত্রিশ লক্ষ দুই হাজার দুইশত পঞ্চাশ) টাকা অবিলম্বে জমা দেওয়ার জন্য প্রতিবেদনে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লিখিত এই ঘটনা প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক এবং আর্থিক ব্যবস্থাপনায় চরম বিশৃঙ্খলা ও দুর্নীতির ইঙ্গিত দেয়, যেখানে একটি বাতিল কমিটি মাত্র দুই মাসে বিপুল অঙ্কের টাকা টেন্ডার ছাড়াই মজুরি খাতে ব্যয় করে সরকারি বিধিমালাকে পুরোপুরি উপেক্ষা করেছে। ( দ্বিতীয় পর্ব আসছে শিগগিরই, কারা কারা এই লুটপাটে জড়িত তাদেরও পরিচয় তুলে ধরা হবে )