২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলন চলাকালে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে প্রথমবারের মতো রায় ঘোষণা করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী অভিযান পরিচালনার নির্দেশ ও নিষ্ঠুরতা প্রতিরোধে ব্যর্থতার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। একই মামলায় বিভিন্ন ঘটনায় সম্পৃক্ততার ভিত্তিতে সাবেক পুলিশপ্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। রায়ে নিহত ও আহত আন্দোলনকারীদের ক্ষতিপূরণের নির্দেশসহ রাষ্ট্রের অনুকূলে সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। গত বছরের ১৮ জুলাই শেখ হাসিনার সঙ্গে শেখ ফজলে নূর তাপসের এবং পরে হাসানুল হক ইনুর কথোপকথনে উঠে আসে যে, আন্দোলনরত ছাত্র–জনতার অবস্থান শনাক্ত করার জন্য তিনি ড্রোন ব্যবহারের নির্দেশ দেন এবং আন্দোলনকারীদের দমন করতে হেলিকপ্টার ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে হত্যার আদেশ প্রদান করেন। তাঁর এই নির্দেশ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অধীনস্থরা কোনো প্রকার বাধা দেয়নি। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট রাজধানীর চানখাঁরপুলে ছয়জন আন্দোলনকারীকে পুলিশ গুলি করে হত্যা করে। একই দিনে আশুলিয়ায়ও ছয়জন আন্দোলনকারীকে হত্যা করে তাঁদের লাশ পুড়িয়ে ফেলা হয়। এই তিনটি ঘটনা—যা জুলাই আন্দোলনের সময় সংঘটিত—মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয়, এবং এই অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল–১ সোমবার এ রায় প্রদান করেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য ছিলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। গণ–অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে এটাই প্রথম কোনো মামলার রায়। একই মামলার আরেক আসামি, সাবেক পুলিশপ্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। রায়ে উল্লেখ করা হয়, শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের বাংলাদেশে অবস্থিত সব সম্পত্তি রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত হবে। পাশাপাশি ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনে নিহত ব্যক্তিদের পরিবারকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। আহতদের ক্ষেত্রেও তাঁদের আঘাতের মাত্রা ও ক্ষতির ভিত্তিতে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে সরকারকে বলা হয়েছে। মামলায় শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে পাঁচটি অভিযোগ গঠন করা হয়, যার প্রত্যেকটিতে একাধিক ঘটনা অন্তর্ভুক্ত ছিল। সার্বিকভাবে এই পাঁচটি অভিযোগের মধ্যে ছিল—উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান; আন্দোলনকারীদের নির্মূল করতে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ; রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যা; রাজধানীর চানখাঁরপুলে ছয় আন্দোলনকারীকে হত্যা; এবং আশুলিয়ায় ছয়জনকে হত্যা করে লাশ পুড়িয়ে ফেলা। মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলায় পাঁচটি অভিযোগের মধ্যে তিনটিতে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এসব অভিযোগের মধ্যে রয়েছে—২০২৪ সালের ১৪ জুলাই গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনার আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলে উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান; একই রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মাকসুদ কামালের সঙ্গে কথোপকথনে আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকার’ আখ্যা দিয়ে তাঁদের ফাঁসি দেওয়ার হুমকি প্রদান; এবং উসকানি ও আদেশ দেওয়ার পর অধীনস্থদের মাধ্যমে এসব অপরাধ সংঘটন রোধে কোনো উদ্যোগ না নেওয়া, যার ফলশ্রুতিতে রংপুরে আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যা করা হয়। যে অভিযোগে শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড প্রথম অভিযোগের অধীনে থাকা তিনটি ঘটনায় তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত বলেন—প্রথমটি উসকানি, দ্বিতীয়টি হত্যার নির্দেশ এবং তৃতীয়টি নিষ্ঠুরতা প্রতিরোধে নিষ্ক্রিয়তা এবং দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে শান্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থতা। আন্তর্জাতিক অপরাধ আইনের বিধান অনুযায়ী এগুলো শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এই তিন ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে তাঁকে স্বাভাবিক মৃত্যু পর্যন্ত কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। রায়ের ভাষ্যে বলা হয়, একাধিক ঘটনায় প্রমাণিত হয়েছে যে শেখ হাসিনা আন্দোলনকারীদের হত্যার উদ্দেশ্যে ড্রোন, হেলিকপ্টার ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছিলেন। চারখাঁরপুলের ছয়জন আন্দোলনকারীকে হত্যার ঘটনা তাঁর নির্দেশ বাস্তবায়নের ফল বলেও রায়ে উল্লেখ করা হয়। একইভাবে আশুলিয়ায় ছয়জন আন্দোলনকারীকে হত্যা করে তাঁদের লাশ পুড়িয়ে ফেলার ঘটনাও তাঁর একই ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধের অংশ। এই তিনটি ঘটনায় তাঁকে মৃত্যুদণ্ড প্রদানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রায় ঘোষণার সময় আদালতকক্ষে উপস্থিত অনেকেই হাততালি দিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। তখন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান সবাইকে আদালতের শৃঙ্খলা বজায় রাখার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, তাঁদের উচ্ছ্বাস আদালতের বাইরে প্রকাশ করলে তা আরও শোভনীয় হবে। যে অভিযোগে আসাদুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড রায়ে বলা হয়, আসাদুজ্জামান খান কামাল মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনে সহযোগিতা করেছেন এবং নিষ্ঠুরতা প্রতিরোধে কিংবা প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থ হয়েছেন। চানখাঁরপুলে ছয়জন আন্দোলনকারীকে হত্যার ঘটনায় তাঁর দায় প্রমাণিত হয়েছে। একইভাবে আশুলিয়ার ছয়জন আন্দোলনকারীকে হত্যার ক্ষেত্রেও তাঁর সহযোগিতা ও ব্যর্থতা উল্লেখ করা হয়। এই দুই ঘটনার মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুনের পাঁচ বছরের কারাদণ্ড রায়ে বলা হয়, মামলার আরেক আসামি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুন তদন্তের সময় সত্য উদ্ঘাটনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তিনি ৩৬ দিনের আন্দোলনের প্রায় সব ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন এবং বস্তুগত প্রমাণ উপস্থাপনে সহায়তা করেন। তাঁর স্বীকারোক্তি ও সহযোগিতা বিবেচনায় তাঁর সর্বোচ্চ শাস্তি না দিয়ে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। রায় ঘোষণার পর প্রসিকিউটর গাজী মনোয়ার হোসেন তামিম বলেন, তিন আসামির বিরুদ্ধে পাঁচটি অভিযোগ আনা হলেও এগুলো ছয়টি কাউন্টে ভাগ করা হয়েছিল এবং দুটি অভিযোগ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটি প্রযোজ্য হওয়ায় মৃত্যুদণ্ড এবং আমৃত্যু কারাদণ্ড দুই ধরনের সাজা দেওয়া সম্ভব ছিল। অপরাধের নৃশংসতা, গুরুত্ব ও গভীরতা বিবেচনায় তিনটি কাউন্টে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড এবং বাকি তিনটিতে আমৃত্যু কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে। অন্যদিকে দুটি অভিযোগে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তিনি রাজসাক্ষী হওয়ায় মৃত্যুদণ্ড যোগ্য অপরাধ করলেও তাঁর ক্ষমা প্রার্থনা এবং গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্য আদালতকে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে সহায়তা করেছে—এসব বিবেচনায় তাঁর সাজায় নমনীয়তা দেখানো হয়েছে।
আজ বাংলাদেশের আদালত যে রায় দিয়েছে, তা সারা দেশ এবং বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তেও প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। এই রায় ও সাজা একটি মৌলিক নীতিকে পুনঃনিশ্চিত করেছে : যত ক্ষমতাবানই হোক, কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। ২০২৪ সালের জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষতিগ্রস্ত হাজারো মানুষ এবং এখনও সেই ক্ষত বহনকারী পরিবারগুলোর জন্য এই রায় সীমিত মাত্রায় হলেও ন্যায়বিচার এনে দিয়েছে। আমরা বছরের পর বছরের নিপীড়নে ভেঙে পড়া গণতান্ত্রিক ভিত্তি পুনর্নির্মাণের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছি। যে অপরাধগুলো নিয়ে বিচার হয়েছে— তরুণ ও শিশু, যাদের একমাত্র অস্ত্র ছিল তাদের কণ্ঠস্বর, তাদের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী বল প্রয়োগের আদেশ, যা আমাদের আইন এবং সরকার–নাগরিক সম্পর্কের মৌলিক বন্ধনকে লঙ্ঘন করেছে। এসব জঘন্য কর্মকাণ্ড বাংলাদেশের মূল মূল্যবোধ— মর্যাদা, দৃঢ়তা ও ন্যায়বিচারের প্রতি অঙ্গীকার— কে আঘাত করেছে। প্রায় ১,৪০০ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। তারা শুধুই সংখ্যা নন; তারা ছিলেন আমাদের ছাত্রছাত্রী, অভিভাবক এবং অধিকারসম্পন্ন নাগরিক। গত কয়েক মাসের সাক্ষ্যে উঠে এসেছে, কীভাবে নিরস্ত্র বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী শক্তি— এমনকি হেলিকপ্টার থেকেও— ব্যবহার করা হয়েছিল। এই রায় তাদের ভোগান্তিকে স্বীকৃতি দেয় এবং আমাদের বিচারব্যবস্থায় অপরাধীদের জবাবদিহির নিশ্চয়তা পুনর্ব্যক্ত করে। বাংলাদেশ এখন বৈশ্বিক জবাবদিহিতার ধারায় পুনরায় যুক্ত হচ্ছে। পরিবর্তনের পক্ষে দাঁড়ানো শিক্ষার্থী ও নাগরিকরা এটি গভীরভাবে উপলব্ধি করেছিলেন, এবং তাদের অনেকেই জীবন দিয়ে মূল্য দিয়েছেন— তাদের বর্তমান উৎসর্গ করেছেন আমাদের ভবিষ্যতের জন্য। সামনের পথচলায় শুধু আইনি জবাবদিহিতা নয়, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ও নাগরিকদের মধ্যে আস্থা পুনর্গঠনও জরুরি। প্রকৃত প্রতিনিধিত্বের জন্য মানুষ কেন সবকিছু ঝুঁকির মুখে ফেলে— তা বোঝা এবং সেই আস্থার উপযুক্ত প্রতিষ্ঠান ও ব্যবস্থা তৈরি করা অপরিহার্য। আজকের রায় সেই যাত্রার একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, বাংলাদেশ সাহস ও বিনয়ের সাথে সামনে থাকা চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করবে। আইনের শাসন, মানবাধিকার এবং প্রতিটি মানুষের সম্ভাবনার প্রতি অঙ্গীকারের মাধ্যমে ন্যায়বিচার বাংলাদেশে শুধু নামেমাত্র টিকে থাকবে না; এটি প্রতিষ্ঠিত হবে এবং সুদৃঢ় হবে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশের সব রাজনৈতিক দলকে গণতন্ত্র রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। রবিবার (১৬ নভেম্বর) প্রেস ক্লাবে মওলানা ভাসানীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় তিনি বলেন, দেশে রাজনীতি বিভ্রান্তির মধ্যে রয়েছে এবং বর্তমান সময়টা জটিল সংকটে পড়েছে। ফখরুল বলেন, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিলেও কিছু গোষ্ঠি রাজনীতিতে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করতে চাচ্ছে। তাই সকল রাজনৈতিক দলকে দ্রুত নির্বাচন প্রক্রিয়াকে সমর্থন দিয়ে জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য কাজ করতে হবে। তিনি আরও উল্লেখ করেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো নেই, নির্বাচিত সরকার ছাড়া এটি সমাধান সম্ভব নয়। একই সঙ্গে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আসন্ন গণহত্যার রায়কে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় আতঙ্ক বিরাজ করছে, যা নৈরাজ্য তৈরির চেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিএনপি মহাসচিব বলেন, মওলানা ভাসানী স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখেছিলেন ও কল্যাণকর রাষ্ট্রের চিন্তা করেছিলেন, যা তিনি পূর্ণ করতে পারেননি। বিএনপির প্রতি তার দায়বদ্ধতা রয়েছে, কারণ তিনি দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সঙ্গে সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ দিক নির্দেশনা দিয়েছেন।
জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার রায় ঘোষণা করা হবে আগামী ১৭ নভেম্বর (সোমবার)। বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ তারিখ নির্ধারণ করেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি শফিউল আলম মাহমুদ ও অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। মামলার আসামিদের মধ্যে শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বর্তমানে পলাতক। তবে রায় ঘোষণার দিন ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত ছিলেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, যিনি মামলার অন্যতম আসামি থেকে পরে রাজসাক্ষী হয়ে যান। রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয় গত ২৩ অক্টোবর। ওইদিন রাষ্ট্রপক্ষে পাঁচ দিন এবং আসামিপক্ষে তিন দিন যুক্তি উপস্থাপন শেষে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান সমাপনী বক্তব্য দেন। এরপর ট্রাইব্যুনাল রায় ঘোষণার তারিখ নির্ধারণের জন্য ১৩ নভেম্বর দিন ঠিক করে আদেশ দেন।
জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে প্রায় সাড়ে তিন মাস চিকিৎসাধীন থাকার পর বাড়ি ফিরলেন মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় আহত দশ বছর বয়সী যমজ শিশু সারিনাহ জাহান সায়রা ও সাইবাহ জাহান সায়মা। এ পর্যন্ত বিমান দুর্ঘটনায় অগ্নিদগ্ধ ৩৩ জন চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরেছেন। আজ বুধবার সকালে ইনস্টিটিউটের পরিচালকের কার্যালয়ে দুই শিশুকে বিদায় জানান হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীরা। এসময় জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের পরিচালক মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন বলেন, ‘মাইলস্টোন স্কুলের বিমান দুর্ঘটনায় আহত ৫৭ জন এই ইনস্টিটিউট থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন। তাদের মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন ২০ জন। একজনকে ট্রমা ম্যানেজমেন্টের জন্য মানসিক হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তিনজন এখনো চিকিৎসাধীন আছেন, তবে তারা সবাই আশঙ্কামুক্ত।’ দুই যমজ শিশুর মধ্যে সায়রা ৩০ শতাংশ এবং সায়মা ১৫ শতাংশ দগ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। পরিচালক মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য স্টাফরা দগ্ধ প্রত্যেক রোগীকে আন্তরিক সেবা দিয়েছেন। তাঁরা কঠোর পরিশ্রম করেছেন। সরকারের পক্ষ থেকেও আমাদের প্রয়োজনীয় সর্বোচ্চ সহযোগিতা দেওয়া হয়েছে। ‘আহতদের মধ্যে যারা বাড়ি ফিরেছেন, তাদের সঙ্গে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে এবং ফলোআপ চিকিৎসা দিচ্ছে,’ যোগ করেন তিনি। এসময় তিনি সিঙ্গাপুর, ভারত, চীন ও যুক্তরাজ্যসহ যেসব বিদেশি চিকিৎসক আহতদের চিকিৎসায় সহযোগিতা করেছেন, তাঁদের প্রতিও ধন্যবাদ জানান। দুই যমজ শিশুর বাবা-মা ইয়াসিন মজুমদার ও আকলিমা আক্তার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের আন্তরিকতা এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। গত ২১ জুলাই দুপুরে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি দোতলা ভবনে বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়। এ ঘটনায় মোট ৩৬ জন নিহত এবং ১২৪ জন আহত হন। তদন্ত কমিটি দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে যুদ্ধবিমানের পাইলটের উড্ডয়ন-ত্রুটি চিহ্নিত করেছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে জানানো হয়েছে, এ ভাষণটি বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি), বিটিভি নিউজ এবং বিটিভি ওয়ার্ল্ডে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে। সরকারি সূত্র জানিয়েছে, প্রধান উপদেষ্টা তাঁর এ ভাষণে চলমান রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক পরিস্থিতি এবং জুলাই জাতীয় সনদ বা সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ঘোষণা করতে পারেন। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি সংস্কার প্রক্রিয়ার অগ্রগতি, জাতীয় ঐক্য গঠন এবং নির্বাচনী ব্যবস্থার ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা নিয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেবেন। জাতীয় পর্যায়ে এটি প্রধান উপদেষ্টার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ হিসেবে দেখা হচ্ছে, যা দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নতুন দিকনির্দেশনা দিতে পারে বলে অনেকের ধারণা।
দশম গ্রেডসহ তিন দফা দাবি আদায়ে টানা তৃতীয় দিনের মতো শহীদ মিনারে অবস্থান করছেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা। রোববার (১০ নভেম্বর) সকাল থেকেই দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে আসা শিক্ষকরা শহীদ মিনার চত্বরে জড়ো হন। কেউ গাছের ছায়ায় বসে আছেন, কেউ আবার মাইকে বক্তব্য দিচ্ছেন। মাঝে মাঝে দেশাত্মবোধক গান ও কবিতাও শোনা যাচ্ছে তাঁদের অবস্থানস্থলে। শিক্ষক নেতারা জানিয়েছেন, সরকার এখনো তাঁদের দাবির বিষয়ে কোনো আশ্বাস দেয়নি। তাই তাঁরা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তাঁদের দাবি পূরণ না হলে কর্মসূচি আরও কঠোর করা হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তাঁরা। এই আন্দোলনের কারণে সারাদেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। ফলে শিক্ষা কার্যক্রমে স্থবিরতা নেমে এসেছে। সামনে পঞ্চম শ্রেণির বৃত্তি পরীক্ষা ও বার্ষিক পরীক্ষা থাকায় অভিভাবকরা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। অন্যদিকে, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। শিক্ষকরা আশা করছেন, দ্রুত সমাধান না এলে তাঁরা ঢাকায় আরও বড় পরিসরে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন।
ঢাকা মেট্রোরেলের সব কর্মকর্তা ও কর্মচারীর ছুটি বাতিল করেছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। রোববার প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক (প্রশাসন) এ কে এম খায়রুল আলমের স্বাক্ষরে এ বিষয়ে অফিস আদেশ জারি করা হয়। আদেশে বলা হয়েছে, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ডিএমটিসিএলের ভবন, ডিপো, স্টেশন এবং প্রকল্প এলাকায় কর্মরত সবার ছুটি বাতিল থাকবে। যদিও এতে কারণ উল্লেখ করা হয়নি, তবে সূত্র জানিয়েছে—রাজনৈতিক অস্থিরতার আশঙ্কায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আগামী ১৩ নভেম্বর ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে মামলার রায় ঘোষণার তারিখ নির্ধারিত আছে। এ নিয়ে অনলাইনে ‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচির আহ্বান জানানো হয়েছে। নাশকতা বা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি এড়াতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরামর্শে ডিএমটিসিএল সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে ছুটি বাতিল ও নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ১৫টি জেলায় নতুন জেলা প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগ দিয়েছে। নতুন পদায়ন অনুযায়ী, কিছু জেলার ডিসির দায়িত্বে পরিবর্তন আনা হয়েছে এবং নতুন কিছু কর্মকর্তাকে নতুন দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বদলিকৃত ডিসিদের মধ্যে বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক (ডিসি) আহমেদ কামরুল হাসানকে নোয়াখালী, কুষ্টিয়ার ডিসি আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীনকে হবিগঞ্জ, ভোলার ডিসি মো. আজাদ জাহানকে গাজীপুর, বরগুনার ডিসি মোহাম্মদ শফিউল আলমকে ঢাকা, সিরাজগঞ্জের ডিসি মুহাম্মদ নজরুল ইসলামকে গাইবান্ধা এবং খুলনার ডিসি মো. তৌফিকুর রহমানকে বগুড়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, সিলেট জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সন্দ্বীপ কুমার সিংহকে বরগুনা, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের সচিব (উপসচিব) মো. আমিনুল ইসলামকে সিরাজগঞ্জ, বাণিজ্য উপদেষ্টার একান্ত সচিব মো. আব্দুল্লাহ আল মাহমুদকে মাগুরা, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আবু সাঈদকে পিরোজপুর, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের পাবনার জোনাল সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা মিজ আফরোজা আখতারকে সাতক্ষীরা, স্থানীয় সরকার ফেনীর উপপরিচালক (উপসচিব) গোলাম মো. বাতেনকে বাগেরহাট, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারীর (ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়) একান্ত সচিব স. ম. জামশেদ খোন্দকারকে খুলনা, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের পরিচালক মো. ইকবাল হোসেনকে কুষ্টিয়া এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উপসচিব ডা. শামীম রহমানকে ভোলার ডিসি পদে পদায়ন করা হয়েছে। নতুন এই ডিসি পদায়নগুলো জেলা প্রশাসনের কার্যক্রমের উন্নতি এবং সরকারের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সহায়ক হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ডিসিদের পুরো তালিকা দেখতে চাইলে এখানে ক্লিক করুন
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দেশের স্কুল-কলেজে ম্যানেজিং কমিটি ও গভর্নিং বডি নির্বাচন সংক্রান্ত সকল কার্যক্রম অবিলম্বে স্থগিত করার জন্য নির্বাচন কমিশনে (ইসি) লিখিত দাবি জানিয়েছে বিএনপি। বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) বিএনপির তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের কাছে কয়েক দফা প্রস্তাবনা জমা দেয়। প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান। তাঁর সঙ্গে ছিলেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইসমাইল জবিউল্লাহ এবং ইসির সাবেক অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ জাকারিয়া। এঁরা সবাই বিএনপির নির্বাচন কমিশন বিষয়ক কমিটির সদস্য। ইসিতে দেওয়া লিখিত প্রস্তাবে দলটি জানিয়েছে, ২০২৪ সালের জুলাই মাসের গণঅভ্যুত্থানের পর সারাদেশে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ম্যানেজিং কমিটি/গভর্নিং বডি গঠিত হয়েছিল। কিন্তু জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়সূচি ঘোষণার ঠিক আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হঠাৎ করে আগামী ১ নভেম্বরের মধ্যে তড়িঘড়ি করে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নতুন করে নির্বাচন সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছে। বিএনপি এটিকে 'সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত' বলে মনে করছে। প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে, এই ধরনের কার্যক্রমের ফলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বার্ষিক পরীক্ষার প্রস্তুতি, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ এবং ভোটকেন্দ্রের নির্বাচনী কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হতে পারে। এতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো বিশাল আয়োজনে শিক্ষক, অভিভাবক এবং সাধারণ ভোটারদের মধ্যে চরম বিশৃঙ্খলা তৈরি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তাই, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ম্যানেজিং কমিটি/গভর্নিং বডি নির্বাচন সংক্রান্ত নির্দেশনাটি দ্রুত স্থগিত করা আবশ্যক।
ইতিহাস গড়ার পথে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত। আর্থিক সংকটে জর্জরিত পাঁচটি বেসরকারি শরীয়াহভিত্তিক ব্যাংক একীভূতকরণের এক ঐতিহাসিক প্রস্তাবনা নীতিগতভাবে অনুমোদন করেছে উপদেষ্টা পরিষদ। এই বিশাল সমন্বয়ের ফলে দেশের অর্থনীতিতে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতে চলেছে, যার প্রাথমিক লক্ষ্য ব্যাংকিং খাতের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা এবং আমানতকারীদের স্বার্থ সুরক্ষিত করা। ৯ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এই যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ব্রিফিংয়ে নিশ্চিত করেন, দুর্বল ও সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংকগুলোর ঝুঁকি মোকাবেলা করতেই বাংলাদেশ ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যে পাঁচ ব্যাংক মিশে যাচ্ছে এক স্রোতে একীভূত হয়ে যে নতুন ব্যাংকটি গঠিত হবে, তার জন্য প্রাথমিকভাবে 'ইউনাইটেড ইসলামী ব্যাংক' অথবা 'সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক' নামে দুটি প্রস্তাবনা রাখা হয়েছে। যে পাঁচটি প্রতিষ্ঠান তাদের পৃথক অস্তিত্ব বিলীন করে একটি বৃহত্তর শক্তিতে পরিণত হচ্ছে, তারা হলো— ১. ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ২. গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ৩. ইউনিয়ন ব্যাংক ৪. এক্সিম ব্যাংক ৫. সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক আমানত ও চাকরির নিরাপত্তা: সরকারের পূর্ণ আশ্বাস এই একীভূতকরণের ফলে আমানতকারীদের মনে যে সংশয় সৃষ্টি হয়েছিল, তার নিরসন করেছে সরকারের ঘোষণা। প্রেস সচিব দৃঢ়ভাবে জানিয়েছেন, "একীভূত হওয়ার পর কেউ চাকরি হারাবেন না। আগের আমানত সবাই ফেরত পাবেন।" তবে আমানত ফেরতের প্রক্রিয়া হবে সুসংগঠিত। জানা গেছে, আমানত সুরক্ষা আইনের সংশোধনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে, যেসব গ্রাহকের আমানতের পরিমাণ ২ লক্ষ টাকা বা তার কম, তারা এককালীন পুরো অর্থ উত্তোলনের সুযোগ পাবেন। বাকি আমানতকারীদের অর্থ ধাপে ধাপে পরিশোধ করা হবে। আমানত সুরক্ষা আইনকে যুগোপযোগী করে তোলার সংশোধনীও উপদেষ্টা পরিষদ অনুমোদন করেছে। প্রাথমিক মূলধন ও মালিকানা কৌশল নতুন এই ব্যাংকের মেরুদণ্ড শক্তিশালী করতে সরকার এক বিশাল মূলধনের আশ্বাস দিয়েছে। ব্যাংকটির মূলধন হিসেবে সরকার ২০ হাজার কোটি টাকার আর্থিক সহায়তা দেবে। এই অতিরিক্ত পুঁজির জোগান আসবে বাজেট, বৈদেশিক ঋণ এবং প্রয়োজনে ডিপোজিট ইন্স্যুরেন্স ফান্ড থেকে। মালিকানার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে, ইউনাইটেড ইসলামী ব্যাংক প্রাথমিকভাবে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন থাকবে, যার তত্ত্বাবধানে থাকবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ। এই রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে ব্যাংকটিকে সম্পূর্ণ স্থিতিশীল করে তোলার পর, উপযুক্ত সময়ে তা বেসরকারি মালিকানায় হস্তান্তর করা হবে। সরকার আশা করছে, এই পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পাঁচ বছরের মতো সময় লাগতে পারে। উল্লেখ্য, এই একীভূতকরণের কার্যক্রম বাস্তবায়নে গত ৮ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নরকে আহ্বায়ক করে একটি আট সদস্যের ওয়ার্কিং কমিটি গঠন করা হয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪ক বিলুপ্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব নিয়ে এসেছে, যা সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি প্রদর্শন সংক্রান্ত। কমিশন এই প্রস্তাবটি তাদের ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’–এ অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি বিবেচনা করছে। এই লক্ষ্যে, কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজের নামে গত বৃহস্পতিবার রাজনৈতিক দল ও জোটসমূহের কাছে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে জানানো হয় যে, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে 'জুলাই সনদ ২০২৫' প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নবিষয়ক বৈঠক শেষ হয়েছে। এখন কমিশন বিদ্যমান সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪ক-এ উল্লিখিত বিধান—যা রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার ও প্রধান বিচারপতির কার্যালয়সহ সকল সরকারি, আধা-সরকারি অফিস, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, এবং বিদেশে অবস্থিত দূতাবাস ও মিশনসমূহে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি সংরক্ষণ ও প্রদর্শনকে সাংবিধানিকভাবে বাধ্যতামূলক করে—সেই অনুচ্ছেদটি বিলুপ্তির প্রস্তাব সনদে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে। দলগুলোর করণীয়: চিঠিতে রাজনৈতিক দলগুলোকে ১১ অক্টোবর শনিবার বিকেল চারটার মধ্যে তাদের লিখিত মতামত কমিশন বরাবর, অথবা কমিশনের নির্দিষ্ট ই-মেইল বা হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে পাঠানোর জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। প্রয়োজনে কমিশন থেকে আরও তথ্য জানার জন্যও যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। দলীয় প্রতিক্রিয়া: আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির চেয়ারম্যান কমিশন থেকে চিঠি পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন, তবে তিনি জানান যে এ বিষয়ে এখনো কোনো মতামত পাঠাননি। প্রেক্ষাপট: উল্লেখ্য, ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ সরকার ২০১১ সালের ৩০ জুন সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী আনে। এই সংশোধনীর মাধ্যমেই শাসনতন্ত্রের প্রথম ভাগে 'জাতির পিতার প্রতিকৃতি' শিরোনামে অনুচ্ছেদ ৪ক যুক্ত হয়, যা নির্দিষ্ট স্থানে জাতির পিতার প্রতিকৃতি সংরক্ষণের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা আরোপ করে।
সরকারি ১১-২০ গ্রেডের চাকরিজীবীরা অবিলম্বে ন্যায্য ও বৈষম্যহীন নবম পে স্কেল বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন। তাঁরা ১৩ গ্রেডের নতুন বেতন কাঠামো প্রস্তাব করেছেন, যেখানে সর্বনিম্ন বেতন ৩২,০০০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ১,২৮,০০০ টাকা নির্ধারণের দাবি জানানো হয়েছে। আজ শুক্রবার (১০ অক্টোবর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের মাওলানা মোহাম্মদ আকরাম খাঁ হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ১১-২০ গ্রেড সরকারি চাকরিজীবী ফোরামের সদস্যরা এই দাবি পেশ করেন। মূল দাবি ও প্রস্তাবিত ভাতা সংগঠনটি জীবনযাত্রার ব্যয়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বিভিন্ন ভাতা বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে: বাড়িভাড়া ভাতা: ঢাকা সিটি কর্পোরেশন এলাকায়: মূল বেতনের ৮০% অন্যান্য সিটি কর্পোরেশন এলাকায়: ৭০% অন্যান্য এলাকায়: ৬০% চিকিৎসা ভাতা: ৬,০০০ টাকা শিক্ষা ভাতা (সন্তান প্রতি): ৩,০০০ টাকা যাতায়াত ভাতা: ঢাকা: ৩,০০০ টাকা অন্যান্য এলাকা: ২,০০০ টাকা ইউটিলিটি ভাতা: ২,০০০ টাকা টিফিন ভাতা: দৈনিক ১০০ টাকা (মাসিক ২,২০০ টাকা) বৈশাখী ভাতা: ৫০% ঝুঁকি ভাতা: ২,০০০ টাকা পাহাড়ি ও উপকূলীয় অঞ্চলের কর্মচারীদের জন্য অতিরিক্ত ভাতা: ৪০% পেনশন ও অন্যান্য দাবি ফোরাম পেনশন সুবিধা বিদ্যমান ৯০% থেকে বাড়িয়ে ১০০% করার এবং আনুতোষিকের হার প্রতি ১ টাকায় ২৩০ টাকার পরিবর্তে ৫০০ টাকা করার দাবি জানিয়েছে। সাধারণ সম্পাদক মো. মাহমুদুল হাসান তাঁর লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করেন, ২০১৫ সালের পে স্কেলে ব্যাপক বৈষম্য ছিল এবং গত ১০ বছরে ১১-২০ গ্রেডের কর্মচারীরা দুটি পে স্কেল থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। তাই বর্তমান বাজারদর ও জীবনযাত্রার ব্যয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এই নতুন, বৈষম্যমুক্ত ও বাস্তবসম্মত বেতন কাঠামো প্রণয়ন করা জরুরি। আল্টিমেটাম সংগঠনটির সভাপতি মো. লুৎফর রহমান ঘোষণা দেন, আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে এই বৈষম্যমুক্ত নবম পে স্কেল বাস্তবায়ন করতে হবে। অন্যথায় কর্মচারীরা আবার রাস্তায় নামতে বাধ্য হবেন। তাঁরা প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস কর্তৃক নবম পে কমিশন গঠনে ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং আশা প্রকাশ করেছেন যে কমিশন একটি ন্যায্য বেতন কাঠামো প্রস্তাব করবে।
প্রেস সচিব শফিকুল আলম নিশ্চিত করেছেন যে নির্বাচন নিয়ে আর কোনো সংশয় নেই এবং আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতেই ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। শুক্রবার (১০ অক্টোবর) বিকেলে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এই ঘোষণা দেন। প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, "নির্বাচন নিয়ে যত সংশয় ছিল, সব ধুয়েমুছে গেছে। এ নিয়ে কোনো সংশয় নেই।" তিনি আরও আশা প্রকাশ করেন যে দীর্ঘ ১৬ বছর 'ফেক ইলেকশন' দেখার পর এবার জনগণ 'রিয়েল ইলেকশন' দেখবে। তাঁর মতে, "এবার ইতিহাসের অন্যতম একটা সেরা নির্বাচন হবে।" নির্বাচনের প্রস্তুতি প্রসঙ্গে তিনি জানান, ইতোমধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নির্বাচনি আমেজ শুরু হয়ে গেছে। তিনি উদাহরণ হিসেবে হালুয়াঘাটে নেতাদের পোস্টার দেখতে পাওয়ার কথা উল্লেখ করেন। তিনি বিশ্বাস করেন যে দলগুলো যখন আগামী দুই-তিন সপ্তাহ পর থেকে প্রার্থী ঘোষণা শুরু করবে, তখন নির্বাচনি পরিবেশ আরও বেশি জমজমাট হয়ে উঠবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ইমেরিটাস অধ্যাপক, স্বনামধন্য কথাসাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। আজ শুক্রবার বিকেল ৫টায় রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন। অন্যপ্রকাশের প্রধান নির্বাহী মাজহারুল ইসলাম এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন, যিনি হাসপাতালে অধ্যাপক মনজুরুল ইসলামের চিকিৎসার বিষয়ে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছিলেন। অসুস্থতা ও চিকিৎসা অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম গত শুক্রবার (৩ অক্টোবর) অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিনি ধানমন্ডিতে ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশে যাওয়ার পথে গাড়িতে থাকা অবস্থায় অসুস্থতা অনুভব করেন। গাড়িচালকের সহায়তায় তাঁকে দ্রুত পার্শ্ববর্তী একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে খবর পেয়ে মাজহারুল ইসলামসহ ঘনিষ্ঠজনরা যান। চিকিৎসকেরা জানান যে তাঁর ‘ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাক’ হয়েছিল। এরপর তাঁকে ল্যাবএইড হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং সেখানেই তাঁর হৃদ্যন্ত্রে স্টেন্টিং করা (রিং পরানো) হয়। শারীরিক অবস্থার অবনতি ও লাইফ সাপোর্ট শনিবার থেকে অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। অক্সিজেন লেভেল কমে যাওয়া এবং ফুসফুসে পানি জমার কারণে পরিস্থিতি খারাপের দিকে গেলে রোববার সন্ধ্যায় তাঁকে লাইফ সাপোর্ট দেওয়া হয়। প্রায় ৪৮ ঘণ্টা লাইফ সাপোর্টে থাকার পর তাঁর অবস্থার সামান্য উন্নতি হলেও পরে আবার অবনতি হয়। অবশেষে, আজ বিকেল ৫টায় চিকিৎসকেরা লাইফ সাপোর্ট সরিয়ে নিলে তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়। পরিবার, বন্ধু ও স্বজনদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের মরদেহ আজ বারডেমের হিমঘরে রাখা হবে। সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য আগামীকাল শনিবার সকাল ১১টায় তাঁর মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নেওয়া হবে। এরপর বাদ জোহর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। তাঁকে মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হতে পারে।
৪৯তম বিশেষ বিসিএসের লিখিত (এমসিকিউ টাইপ) পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে শুক্রবার (১০ অক্টোবর)। বিশেষ এই বিসিএস পরীক্ষাটি কেবল ঢাকায় অনুষ্ঠিত হওয়ায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের চাকরিপ্রার্থীরা ইতোমধ্যে রাজধানীর পথে রওনা হচ্ছেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) থেকে ঢাকায় পরীক্ষায় অংশ নিতে আসা প্রার্থীদের সুবিধার্থে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সংগঠন রুয়া (রাবি ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন) ছয়টি বাসের ব্যবস্থা করেছে। সংগঠনটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জোহা চত্বর থেকে বাসগুলো ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাবে। পরীক্ষার পর শুক্রবার (১০ অক্টোবর) বিকেল ৩টায় ফেরার যাত্রা শুরু হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকা থেকে, এবং বাসগুলো শিক্ষার্থীদের রাজশাহী পৌঁছে দেবে। রুয়ার যুগ্ম-প্রচার, প্রকাশনা ও জনসংযোগবিষয়ক সম্পাদক আশরাফুল আলম ইমন এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, রুয়ার উদ্যোগে এ পর্যন্ত ৭৩১ জন শিক্ষার্থী আবেদন করেছেন। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন বিভাগ ২০০ শিক্ষার্থীর জন্য ৪টি বাস বরাদ্দ দেয়। বাকি শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে রাবির উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাঈন উদ্দিন রুয়ার সভাপতি মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান-এর সহযোগিতা কামনা করেন। রুয়া জানিয়েছে, ঢাকায় যাতায়াতের পুরো প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও সুবিধার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়েছে।
সম্প্রতি দুর্গাপূজা, বিজয়া দশমী, ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহম, প্রবারণা পূর্ণিমা এবং লক্ষ্মীপূজা উপলক্ষে দেশের নিম্নমাধ্যমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ১২ দিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এই ছুটি শুরু হয়েছিল ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে, যা চলবে ৭ অক্টোবর পর্যন্ত। তবে, শিক্ষামন্ত্রণালয়ের এক চিঠিতে ৮ ও ৯ অক্টোবর কোনো পরীক্ষা না নেয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যাতে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছেন। কেউ কেউ মনে করেছেন, ৯ অক্টোবর পর্যন্ত ছুটি বৃদ্ধি করা হয়েছে, যা আসলে সঠিক নয়। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) উপ-পরিচালক মো. ইউনুছ ফারুকী এই বিষয়ে পরিষ্কার করেছেন যে, ছুটি শুধুমাত্র ৭ অক্টোবর পর্যন্ত। ৮ অক্টোবর থেকে শ্রেণি কার্যক্রম পুনরায় চালু হবে। ৮ ও ৯ অক্টোবর শুধুমাত্র পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে না, তবে স্কুল খুলে যাবে। এটি একটি ভুল বোঝাবুঝির বিষয়, এবং মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় কোনো ছুটি বাড়ানোর কথা বলা হয়নি। যারা ৯ অক্টোবর পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করেছে, তারা ভুল করেছে। সঠিক তথ্য পেতে চাইলে মাউশিতে যোগাযোগ করা যেতে পারে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রকাশিত বার্ষিক শিক্ষাপঞ্জি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, দুর্গাপূজা উপলক্ষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানভেদে ছুটির দিনগুলোতে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য রয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে পূজার আমেজ শুরু হচ্ছে ২৬ সেপ্টেম্বর থেকেই। কারণ ওই দুই দিন (২৬ ও ২৭ সেপ্টেম্বর) সাপ্তাহিক বন্ধের পর ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে পূজার ছুটি কার্যকর হবে। একটানা ছুটি কাটিয়ে ৭ অক্টোবরের পর আবার নতুন উদ্যমে শুরু হবে ক্লাস। একইভাবে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী সরকারি ও বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং কলেজগুলোতেও ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে ৭ অক্টোবর পর্যন্ত টানা বারো দিনের ছুটি মিলবে। ৮ অক্টোবর থেকে আবার গরমিল ছাড়া ক্লাস চলবে যথারীতি। অন্যদিকে, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থা ভিন্ন। শিক্ষাপঞ্জি অনুযায়ী, এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে দুর্গাপূজার জন্য ছুটি থাকবে মাত্র দুই দিন—১ ও ২ অক্টোবর। তবে এর সঙ্গে যোগ হবে ৩ ও ৪ অক্টোবরের সাপ্তাহিক বন্ধ। ফলে মোট ছুটি দাঁড়াবে চার দিনে। ৫ অক্টোবর থেকে পুরোদমে আবার চলবে পাঠদান। 👉 প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে ছুটি দীর্ঘায়িত হলেও মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তুলনামূলকভাবে সীমিত এই ছুটির মেয়াদ শিক্ষার্থীদের পাঠচর্চার ধারাবাহিকতায় রাখবে এক ধাপ এগিয়ে।
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে (নিম্নমাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তর) চলতি বছরের ৩০ নভেম্বরের মধ্যে নিয়মিত ম্যানেজিং কমিটি গঠন এবং ১ ডিসেম্বর থেকে সব অ্যাডহক কমিটি বিলুপ্ত করার যে পরিপত্র শিক্ষা মন্ত্রণালয় জারি করেছিল, তার কার্যক্রম স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগ থেকে গত ৮ সেপ্টেম্বর পরিপত্রটি জারি করা হয়। ওই পরিপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে করা এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে আজ মঙ্গলবার বিচারপতি কাজী জিনাত হক ও বিচারপতি আইনুন নাহার সিদ্দিকার সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এই আদেশ দেন। আইনজীবীদের তথ্যমতে, নিম্নমাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটি প্রবিধানমালা–২০২৪ এ চলতি বছরের ২৮ ও ৩১ আগস্ট সংশোধনী আনে ঢাকাসহ বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ড। সংশোধনের মাধ্যমে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মনোনয়নসংক্রান্ত ১৩(১) বিধি এবং যোগ্যতাসংক্রান্ত ৬৪(৩) বিধি পরিবর্তন করা হয়। এই দুই বিধির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে এমরান হোসেনসহ চারটি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অ্যাডহক কমিটির সভাপতি গত রোববার রিট আবেদন করেন। আদালতে রিট আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ফখরুল ইসলাম। তাঁর সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মো. মুজাহিদুল ইসলাম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নূর মুহাম্মদ আজমী। পরে আইনজীবী ফখরুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, দেশের নয়টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে প্রায় ২০ হাজারের বেশি বেসরকারি মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এই বোর্ডগুলো ম্যানেজিং কমিটি পরিচালনাসংক্রান্ত প্রবিধানমালায় সংশোধন আনে, যেখানে বলা হয়েছে— সরকারি, আধা সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত নবম গ্রেডের নিচে নন এমন কর্মকর্তা এবং অবসরপ্রাপ্ত হলে পঞ্চম গ্রেডের কর্মকর্তা ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হতে পারবেন। অর্থাৎ বেসরকারি এসব প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শুধুমাত্র সরকারি বা আধা সরকারি কর্মকর্তা ছাড়া অন্য কেউ হতে পারবেন না। আগে যেখানে সভাপতি নির্বাচনের মাধ্যমে হতেন, সেখানে এখন এই যোগ্যতাসীমা আরোপ করা হয়েছে— যা আবেদনকারীদের মতে বৈষম্যমূলক। রিটে আদালতের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে, সংশোধিত ১৩(১) এবং ৬৪(৩) বিধি কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না। হাইকোর্ট রুল জারি করে ৮ সেপ্টেম্বরের পরিপত্রের কার্যক্রম স্থগিত করেছেন। ফলে বেসরকারি মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অ্যাডহক কমিটি আপাতত কাজ চালিয়ে যেতে পারবে।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রাজস্ব খাতে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা-২০২৩ এর ৩য় গ্রুপের ( ০৩ টি পার্বত্য জেলা ব্যতীত ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের ২১ টি জেলা) লিখিত পরীক্ষার ফলাফল আজ প্রকাশিত হয়েছে। পরীক্ষায় ২৩,০৫৭ (তেইশ হাজার সাতান্ন) জন উত্তীর্ণ হয়েছে। ২৯ মার্চ ২০২৪ এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষার্থী ছিলেন ৩ লাখ ৪৯ হাজার ২৯৩ জন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট www.mopme.gov.bd এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট www.dpe.gov.bd -তে ফলাফল পাওয়া যাবে। উত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীরা মোবাইলেও মেসেজ পাবেন। মৌখিক পরীক্ষার তারিখ, সময় ও স্থান পরবর্তীতে জানানো হবে।
বেসরকারি স্কুল-কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি হিসেবে শুধু সরকারি কর্মকর্তা (নবম গ্রেডের নিচে নয়) বা অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (পঞ্চম গ্রেডের নিচে নয়) মনোনয়ন দেওয়ার বিধান সংবলিত প্রজ্ঞাপনের কার্যকারিতা স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে আদালত রুল জারি করে জানতে চেয়েছেন যে, বেসরকারি স্কুল-কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি হিসেবে কেবল সরকারি কর্মকর্তা বা অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে মনোনয়নের এই বিধান কেন অসাংবিধানিক ও বেআইনি ঘোষণা করা হবে না। আদেশের দিন ও বেঞ্চ বুধবার (২২ অক্টোবর) বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি আসিফ হাসানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন। রিটের কারণ ও আইনজীবীর বক্তব্য বেসরকারি স্কুল-কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি পদে কেবল সরকারি কর্মকর্তাদের মনোনয়নের এই বিধানকে চ্যালেঞ্জ করে অ্যাডভোকেট মোকছেদুর রহমান আবির রিটটি দায়ের করেন। রিটের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন। তিনি বলেন, বেসরকারি স্কুল-কলেজের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি পদে শুধু সরকারি কর্মকর্তাদের মনোনয়নের বিধান বৈষম্যমূলক। এই যুক্তিতেই আদালত প্রজ্ঞাপনটির কার্যকারিতা স্থগিত করেছেন। প্রজ্ঞাপনের মূল বিষয়বস্তু গত সেপ্টেম্বরে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বেসরকারি স্কুল-কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি সরকারি চাকরিজীবী ছাড়া অন্য কেউ হতে পারবেন না। এই পদে নবম গ্রেড বা তার ওপরের পদে কর্মরত কিংবা পঞ্চম গ্রেড বা তার ওপরের পদে অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তারাই দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। এছাড়া, সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সভাপতির প্রার্থীর ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক বা সমমান হতে হবে। সরকারি কর্মকর্তা ছাড়াও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সভাপতি হতে পারবেন। আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়মিত কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে। আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয়ক খন্দোকার এহসানুল কবির জানান, বিদ্যমান নিয়মে সামান্য সংশোধন এনে শুধু সভাপতি পদটির জন্য এই পরিবর্তন আনা হয়েছিল।
ঢাকা: মিরপুরের মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে উন্নয়নমূলক কাজের নামে শ্রমিকদের মজুরি বাবদ বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্ত প্রতিবেদনে দেখা যায়, মাত্র দুই মাসের মধ্যে শ্রমিকদের পারিশ্রমিক ও মজুরি খাতে ৩,১৮,৮৯,০৫৪/- (তিন কোটি আঠারো লক্ষ ঊননব্বই হাজার চুয়ান্ন) টাকা ব্যয় করা হয়েছে। এই বিপুল অঙ্কের অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা (PPR) সম্পূর্ণরূপে লঙ্ঘন করা হয়েছে। কোটি কোটি টাকার মজুরি, টেন্ডার নেই তদন্ত প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২0২৪ সালের ২০ ডিসেম্বর থেকে ২০২৫ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত (প্রায় দুই মাস) এডহক কমিটির নির্দেশে ৪ কোটি ৬৬ লক্ষ টাকার উন্নয়ন কাজ করা হয়। এই কাজের মধ্যে নির্মাণ ও মেরামতের জন্য ব্যবহৃত শ্রমিক মজুরি বাবদ ব্যয়িত অর্থের হিসাব নিম্নরূপ: কাজের বিবরণ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যয়িত টাকার পরিমাণ রং করা (লেবার) বান্না এন্টারপ্রাইজ ১,৩০,৯২,৯৭৭/- রাজমিস্ত্রী, কাঠ, সেনিটারী (লেবার) মেসার্স শিলা এন্টারপ্রাইজ ৬১,২০,৪৬০/- টাইলস, মোজাইক ও ইলেকট্রিক (লেবার) তানভীর এন্টারপ্রাইজ ১৩,৭৭,৪৭৪/- গ্রীল, অভিভাবক সেড (লেবার) মেসার্স মোল্লা ওয়েল্ড ১২,৪৮,১৪৩/- মোট শ্রমিক মজুরি ব্যয় ৩,১৮,৮৯,০৫৪/- (এছাড়া মালামাল ক্রয় বাবদ আরও ১,২৩,৭৪,৪৩৭/- টাকা নগদে ব্যয় করা হয়)। বিধি লঙ্ঘন করে স্পট কোটেশন তদন্তে ডিআইএ নিশ্চিত করেছে যে, এই বিশাল অঙ্কের মজুরি প্রদানের ক্ষেত্রে কোনো প্রকার দরপত্র বা টেন্ডার আহ্বান করা হয়নি। পিপিআর-এর লঙ্ঘন: পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা (PPR) অনুযায়ী, ৬,০০,০০০/- (ছয় লক্ষ) টাকার অধিক মজুরি প্রদানের ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতামূলক দরপত্রের মাধ্যমে সর্বনিম্ন দরদাতাকে কার্যাদেশ প্রদান করতে হয়। ক্ষমতার অপব্যবহার: কিন্তু মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ৬ লক্ষ টাকার সীমা অতিক্রম করে প্রায় সোয়া তিন কোটি টাকা ব্যয় করেছে 'স্পট কোটেশনের' মাধ্যমে। এই পদ্ধতিতে কাজ দেওয়ায় প্রতিযোগিতামূলক দর নিশ্চিত হয়নি, যা আর্থিক অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাতের পথ সুগম করেছে বলে প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়। বাতিল কমিটি দিয়ে কাজ করানোর অভিযোগ তদন্ত প্রতিবেদন আরও জানায়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক নতুন এডহক কমিটি গঠনের নির্দেশ (১৮/১১/২০২৪) জারির পরও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জনাব মোঃ আখলাক আহম্মেদ পূর্বের (বাতিলকৃত) এডহক কমিটির মাধ্যমেই কার্যক্রম চালিয়ে যান। বাতিল কমিটির মাধ্যমে বিপুল অঙ্কের এই উন্নয়ন কাজ করানো হয়েছে, যা মন্ত্রণালয়ের আদেশ অমান্য করার শামিল। রাজস্ব ফাঁকি উন্নয়ন কাজের জন্য ঠিকাদারদের পরিশোধিত ৩,১২,১৮,০০০/- টাকার ওপর ধার্যকৃত ভ্যাট ও আয়কর সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া হয়নি। শ্রমিক মজুরি বাবদ ব্যয়িত বিপুল অঙ্কের অর্থের ওপরও এই রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হয়েছে। সরকারি কোষাগারে ফেরতযোগ্য মোট ৩৮,০২,২৫০/- (আটত্রিশ লক্ষ দুই হাজার দুইশত পঞ্চাশ) টাকা অবিলম্বে জমা দেওয়ার জন্য প্রতিবেদনে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লিখিত এই ঘটনা প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক এবং আর্থিক ব্যবস্থাপনায় চরম বিশৃঙ্খলা ও দুর্নীতির ইঙ্গিত দেয়, যেখানে একটি বাতিল কমিটি মাত্র দুই মাসে বিপুল অঙ্কের টাকা টেন্ডার ছাড়াই মজুরি খাতে ব্যয় করে সরকারি বিধিমালাকে পুরোপুরি উপেক্ষা করেছে। ( দ্বিতীয় পর্ব আসছে শিগগিরই, কারা কারা এই লুটপাটে জড়িত তাদেরও পরিচয় তুলে ধরা হবে )