মাইলস্টোন দুর্ঘটনা: সাড়ে তিন মাস চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরলেন যমজ দুই শিশু

জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে প্রায় সাড়ে তিন মাস চিকিৎসাধীন থাকার পর বাড়ি ফিরলেন মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় আহত দশ বছর বয়সী যমজ শিশু সারিনাহ জাহান সায়রা ও সাইবাহ জাহান সায়মা।

এ পর্যন্ত বিমান দুর্ঘটনায় অগ্নিদগ্ধ ৩৩ জন চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরেছেন।

আজ বুধবার সকালে ইনস্টিটিউটের পরিচালকের কার্যালয়ে দুই শিশুকে বিদায় জানান হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীরা।

এসময় জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের পরিচালক মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন বলেন, ‘মাইলস্টোন স্কুলের বিমান দুর্ঘটনায় আহত ৫৭ জন এই ইনস্টিটিউট থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন। তাদের মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন ২০ জন। একজনকে ট্রমা ম্যানেজমেন্টের জন্য মানসিক হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তিনজন এখনো চিকিৎসাধীন আছেন, তবে তারা সবাই আশঙ্কামুক্ত।’

দুই যমজ শিশুর মধ্যে সায়রা ৩০ শতাংশ এবং সায়মা ১৫ শতাংশ দগ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন।

পরিচালক মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য স্টাফরা দগ্ধ প্রত্যেক রোগীকে আন্তরিক সেবা দিয়েছেন। তাঁরা কঠোর পরিশ্রম করেছেন। সরকারের পক্ষ থেকেও আমাদের প্রয়োজনীয় সর্বোচ্চ সহযোগিতা দেওয়া হয়েছে।

‘আহতদের মধ্যে যারা বাড়ি ফিরেছেন, তাদের সঙ্গে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে এবং ফলোআপ চিকিৎসা দিচ্ছে,’ যোগ করেন তিনি।

এসময় তিনি সিঙ্গাপুর, ভারত, চীন ও যুক্তরাজ্যসহ যেসব বিদেশি চিকিৎসক আহতদের চিকিৎসায় সহযোগিতা করেছেন, তাঁদের প্রতিও ধন্যবাদ জানান।

 

দুই যমজ শিশুর বাবা-মা ইয়াসিন মজুমদার ও আকলিমা আক্তার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের আন্তরিকতা এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

গত ২১ জুলাই দুপুরে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি দোতলা ভবনে বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়। এ ঘটনায় মোট ৩৬ জন নিহত এবং ১২৪ জন আহত হন। তদন্ত কমিটি দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে যুদ্ধবিমানের পাইলটের উড্ডয়ন-ত্রুটি চিহ্নিত করেছে।

মন্তব্য করুন

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের বিবৃতি

এই রায় ও সাজা একটি মৌলিক নীতিকে পুনঃনিশ্চিত করেছে : যত ক্ষমতাবানই হোক, কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস

আজ বাংলাদেশের আদালত যে রায় দিয়েছে, তা সারা দেশ এবং বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তেও প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। এই রায় ও সাজা একটি মৌলিক নীতিকে পুনঃনিশ্চিত করেছে : যত ক্ষমতাবানই হোক, কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। ২০২৪ সালের জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষতিগ্রস্ত হাজারো মানুষ এবং এখনও সেই ক্ষত বহনকারী পরিবারগুলোর জন্য এই রায় সীমিত মাত্রায় হলেও ন্যায়বিচার এনে দিয়েছে।

আমরা বছরের পর বছরের নিপীড়নে ভেঙে পড়া গণতান্ত্রিক ভিত্তি পুনর্নির্মাণের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছি। যে অপরাধগুলো নিয়ে বিচার হয়েছে— তরুণ ও শিশু, যাদের একমাত্র অস্ত্র ছিল তাদের কণ্ঠস্বর, তাদের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী বল প্রয়োগের আদেশ, যা আমাদের আইন এবং সরকার–নাগরিক সম্পর্কের মৌলিক বন্ধনকে লঙ্ঘন করেছে। এসব জঘন্য কর্মকাণ্ড বাংলাদেশের মূল মূল্যবোধ— মর্যাদা, দৃঢ়তা ও ন্যায়বিচারের প্রতি অঙ্গীকার— কে আঘাত করেছে।

প্রায় ১,৪০০ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। তারা শুধুই সংখ্যা নন; তারা ছিলেন আমাদের ছাত্রছাত্রী, অভিভাবক এবং অধিকারসম্পন্ন নাগরিক। গত কয়েক মাসের সাক্ষ্যে উঠে এসেছে, কীভাবে নিরস্ত্র বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী শক্তি— এমনকি হেলিকপ্টার থেকেও— ব্যবহার করা হয়েছিল। এই রায় তাদের ভোগান্তিকে স্বীকৃতি দেয় এবং আমাদের বিচারব্যবস্থায় অপরাধীদের জবাবদিহির নিশ্চয়তা পুনর্ব্যক্ত করে।

বাংলাদেশ এখন বৈশ্বিক জবাবদিহিতার ধারায় পুনরায় যুক্ত হচ্ছে। পরিবর্তনের পক্ষে দাঁড়ানো শিক্ষার্থী ও নাগরিকরা এটি গভীরভাবে উপলব্ধি করেছিলেন, এবং তাদের অনেকেই জীবন দিয়ে মূল্য দিয়েছেন— তাদের বর্তমান উৎসর্গ করেছেন আমাদের ভবিষ্যতের জন্য।

সামনের পথচলায় শুধু আইনি জবাবদিহিতা নয়, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ও নাগরিকদের মধ্যে আস্থা পুনর্গঠনও জরুরি। প্রকৃত প্রতিনিধিত্বের জন্য মানুষ কেন সবকিছু ঝুঁকির মুখে ফেলে— তা বোঝা এবং সেই আস্থার উপযুক্ত প্রতিষ্ঠান ও ব্যবস্থা তৈরি করা অপরিহার্য। আজকের রায় সেই যাত্রার একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।

আমার দৃঢ় বিশ্বাস, বাংলাদেশ সাহস ও বিনয়ের সাথে সামনে থাকা চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করবে। আইনের শাসন, মানবাধিকার এবং প্রতিটি মানুষের সম্ভাবনার প্রতি অঙ্গীকারের মাধ্যমে ন্যায়বিচার বাংলাদেশে শুধু নামেমাত্র টিকে থাকবে না; এটি প্রতিষ্ঠিত হবে এবং সুদৃঢ় হবে।

মন্তব্য করুন

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ১২ দিনের ছুটি: ৭ অক্টোবর পর্যন্ত, ৮ অক্টোবর থেকে কার্যক্রম শুরু

সম্প্রতি দুর্গাপূজা, বিজয়া দশমী, ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহম, প্রবারণা পূর্ণিমা এবং লক্ষ্মীপূজা উপলক্ষে দেশের নিম্নমাধ্যমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ১২ দিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এই ছুটি শুরু হয়েছিল ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে, যা চলবে ৭ অক্টোবর পর্যন্ত।

তবে, শিক্ষামন্ত্রণালয়ের এক চিঠিতে ৮ ও ৯ অক্টোবর কোনো পরীক্ষা না নেয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যাতে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছেন। কেউ কেউ মনে করেছেন, ৯ অক্টোবর পর্যন্ত ছুটি বৃদ্ধি করা হয়েছে, যা আসলে সঠিক নয়।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) উপ-পরিচালক মো. ইউনুছ ফারুকী এই বিষয়ে পরিষ্কার করেছেন যে, ছুটি শুধুমাত্র ৭ অক্টোবর পর্যন্ত। ৮ অক্টোবর থেকে শ্রেণি কার্যক্রম পুনরায় চালু হবে। ৮ ও ৯ অক্টোবর শুধুমাত্র পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে না, তবে স্কুল খুলে যাবে।

এটি একটি ভুল বোঝাবুঝির বিষয়, এবং মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় কোনো ছুটি বাড়ানোর কথা বলা হয়নি। যারা ৯ অক্টোবর পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করেছে, তারা ভুল করেছে। সঠিক তথ্য পেতে চাইলে মাউশিতে যোগাযোগ করা যেতে পারে।

 
মন্তব্য করুন

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ম্যানেজিং কমিটি/গভর্নিং বডি নির্বাচন স্থগিতের দাবি জানাল বিএনপি

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দেশের স্কুল-কলেজে ম্যানেজিং কমিটি ও গভর্নিং বডি নির্বাচন সংক্রান্ত সকল কার্যক্রম অবিলম্বে স্থগিত করার জন্য নির্বাচন কমিশনে (ইসি) লিখিত দাবি জানিয়েছে বিএনপি।

বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) বিএনপির তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের কাছে কয়েক দফা প্রস্তাবনা জমা দেয়। প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান। তাঁর সঙ্গে ছিলেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইসমাইল জবিউল্লাহ এবং ইসির সাবেক অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ জাকারিয়া। এঁরা সবাই বিএনপির নির্বাচন কমিশন বিষয়ক কমিটির সদস্য।

ইসিতে দেওয়া লিখিত প্রস্তাবে দলটি জানিয়েছে, ২০২৪ সালের জুলাই মাসের গণঅভ্যুত্থানের পর সারাদেশে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ম্যানেজিং কমিটি/গভর্নিং বডি গঠিত হয়েছিল। কিন্তু জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়সূচি ঘোষণার ঠিক আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হঠাৎ করে আগামী ১ নভেম্বরের মধ্যে তড়িঘড়ি করে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নতুন করে নির্বাচন সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছে। বিএনপি এটিকে 'সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত' বলে মনে করছে।

প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে, এই ধরনের কার্যক্রমের ফলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বার্ষিক পরীক্ষার প্রস্তুতি, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ এবং ভোটকেন্দ্রের নির্বাচনী কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হতে পারে। এতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো বিশাল আয়োজনে শিক্ষক, অভিভাবক এবং সাধারণ ভোটারদের মধ্যে চরম বিশৃঙ্খলা তৈরি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তাই, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ম্যানেজিং কমিটি/গভর্নিং বডি নির্বাচন সংক্রান্ত নির্দেশনাটি দ্রুত স্থগিত করা আবশ্যক।

মন্তব্য করুন

শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার রায় ১৭ নভেম্বর

সুপ্রিম কোর্ট
সুপ্রিম কোর্ট

জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার রায় ঘোষণা করা হবে আগামী ১৭ নভেম্বর (সোমবার)

বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ তারিখ নির্ধারণ করেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি শফিউল আলম মাহমুদঅবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী

মামলার আসামিদের মধ্যে শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বর্তমানে পলাতক। তবে রায় ঘোষণার দিন ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত ছিলেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, যিনি মামলার অন্যতম আসামি থেকে পরে রাজসাক্ষী হয়ে যান।

রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয় গত ২৩ অক্টোবর। ওইদিন রাষ্ট্রপক্ষে পাঁচ দিন এবং আসামিপক্ষে তিন দিন যুক্তি উপস্থাপন শেষে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান সমাপনী বক্তব্য দেন।

এরপর ট্রাইব্যুনাল রায় ঘোষণার তারিখ নির্ধারণের জন্য ১৩ নভেম্বর দিন ঠিক করে আদেশ দেন।

মন্তব্য করুন

শেখ হাসিনা–আসাদুজ্জামান: মৃত্যুদণ্ডের রায়ের প্রধান ভিত্তিগুলো

শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান কামাল
শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান কামাল

২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলন চলাকালে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে প্রথমবারের মতো রায় ঘোষণা করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী অভিযান পরিচালনার নির্দেশ ও নিষ্ঠুরতা প্রতিরোধে ব্যর্থতার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। একই মামলায় বিভিন্ন ঘটনায় সম্পৃক্ততার ভিত্তিতে সাবেক পুলিশপ্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। রায়ে নিহত ও আহত আন্দোলনকারীদের ক্ষতিপূরণের নির্দেশসহ রাষ্ট্রের অনুকূলে সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।

গত বছরের ১৮ জুলাই শেখ হাসিনার সঙ্গে শেখ ফজলে নূর তাপসের এবং পরে হাসানুল হক ইনুর কথোপকথনে উঠে আসে যে, আন্দোলনরত ছাত্র–জনতার অবস্থান শনাক্ত করার জন্য তিনি ড্রোন ব্যবহারের নির্দেশ দেন এবং আন্দোলনকারীদের দমন করতে হেলিকপ্টার ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে হত্যার আদেশ প্রদান করেন। তাঁর এই নির্দেশ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অধীনস্থরা কোনো প্রকার বাধা দেয়নি। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট রাজধানীর চানখাঁরপুলে ছয়জন আন্দোলনকারীকে পুলিশ গুলি করে হত্যা করে। একই দিনে আশুলিয়ায়ও ছয়জন আন্দোলনকারীকে হত্যা করে তাঁদের লাশ পুড়িয়ে ফেলা হয়।

এই তিনটি ঘটনা—যা জুলাই আন্দোলনের সময় সংঘটিত—মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয়, এবং এই অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল–১ সোমবার এ রায় প্রদান করেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য ছিলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। গণ–অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে এটাই প্রথম কোনো মামলার রায়। একই মামলার আরেক আসামি, সাবেক পুলিশপ্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

রায়ে উল্লেখ করা হয়, শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের বাংলাদেশে অবস্থিত সব সম্পত্তি রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত হবে। পাশাপাশি ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনে নিহত ব্যক্তিদের পরিবারকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। আহতদের ক্ষেত্রেও তাঁদের আঘাতের মাত্রা ও ক্ষতির ভিত্তিতে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে সরকারকে বলা হয়েছে।

মামলায় শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে পাঁচটি অভিযোগ গঠন করা হয়, যার প্রত্যেকটিতে একাধিক ঘটনা অন্তর্ভুক্ত ছিল। সার্বিকভাবে এই পাঁচটি অভিযোগের মধ্যে ছিল—উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান; আন্দোলনকারীদের নির্মূল করতে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ; রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যা; রাজধানীর চানখাঁরপুলে ছয় আন্দোলনকারীকে হত্যা; এবং আশুলিয়ায় ছয়জনকে হত্যা করে লাশ পুড়িয়ে ফেলা।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলায় পাঁচটি অভিযোগের মধ্যে তিনটিতে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এসব অভিযোগের মধ্যে রয়েছে—২০২৪ সালের ১৪ জুলাই গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনার আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলে উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান; একই রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মাকসুদ কামালের সঙ্গে কথোপকথনে আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকার’ আখ্যা দিয়ে তাঁদের ফাঁসি দেওয়ার হুমকি প্রদান; এবং উসকানি ও আদেশ দেওয়ার পর অধীনস্থদের মাধ্যমে এসব অপরাধ সংঘটন রোধে কোনো উদ্যোগ না নেওয়া, যার ফলশ্রুতিতে রংপুরে আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যা করা হয়।

যে অভিযোগে শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড

প্রথম অভিযোগের অধীনে থাকা তিনটি ঘটনায় তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত বলেন—প্রথমটি উসকানি, দ্বিতীয়টি হত্যার নির্দেশ এবং তৃতীয়টি নিষ্ঠুরতা প্রতিরোধে নিষ্ক্রিয়তা এবং দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে শান্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থতা। আন্তর্জাতিক অপরাধ আইনের বিধান অনুযায়ী এগুলো শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এই তিন ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে তাঁকে স্বাভাবিক মৃত্যু পর্যন্ত কারাদণ্ড প্রদান করা হয়।

রায়ের ভাষ্যে বলা হয়, একাধিক ঘটনায় প্রমাণিত হয়েছে যে শেখ হাসিনা আন্দোলনকারীদের হত্যার উদ্দেশ্যে ড্রোন, হেলিকপ্টার ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছিলেন। চারখাঁরপুলের ছয়জন আন্দোলনকারীকে হত্যার ঘটনা তাঁর নির্দেশ বাস্তবায়নের ফল বলেও রায়ে উল্লেখ করা হয়। একইভাবে আশুলিয়ায় ছয়জন আন্দোলনকারীকে হত্যা করে তাঁদের লাশ পুড়িয়ে ফেলার ঘটনাও তাঁর একই ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধের অংশ। এই তিনটি ঘটনায় তাঁকে মৃত্যুদণ্ড প্রদানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

রায় ঘোষণার সময় আদালতকক্ষে উপস্থিত অনেকেই হাততালি দিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। তখন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান সবাইকে আদালতের শৃঙ্খলা বজায় রাখার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, তাঁদের উচ্ছ্বাস আদালতের বাইরে প্রকাশ করলে তা আরও শোভনীয় হবে।

যে অভিযোগে আসাদুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড

রায়ে বলা হয়, আসাদুজ্জামান খান কামাল মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনে সহযোগিতা করেছেন এবং নিষ্ঠুরতা প্রতিরোধে কিংবা প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থ হয়েছেন। চানখাঁরপুলে ছয়জন আন্দোলনকারীকে হত্যার ঘটনায় তাঁর দায় প্রমাণিত হয়েছে। একইভাবে আশুলিয়ার ছয়জন আন্দোলনকারীকে হত্যার ক্ষেত্রেও তাঁর সহযোগিতা ও ব্যর্থতা উল্লেখ করা হয়। এই দুই ঘটনার মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুনের পাঁচ বছরের কারাদণ্ড

রায়ে বলা হয়, মামলার আরেক আসামি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুন তদন্তের সময় সত্য উদ্ঘাটনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তিনি ৩৬ দিনের আন্দোলনের প্রায় সব ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন এবং বস্তুগত প্রমাণ উপস্থাপনে সহায়তা করেন। তাঁর স্বীকারোক্তি ও সহযোগিতা বিবেচনায় তাঁর সর্বোচ্চ শাস্তি না দিয়ে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

রায় ঘোষণার পর প্রসিকিউটর গাজী মনোয়ার হোসেন তামিম বলেন, তিন আসামির বিরুদ্ধে পাঁচটি অভিযোগ আনা হলেও এগুলো ছয়টি কাউন্টে ভাগ করা হয়েছিল এবং দুটি অভিযোগ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটি প্রযোজ্য হওয়ায় মৃত্যুদণ্ড এবং আমৃত্যু কারাদণ্ড দুই ধরনের সাজা দেওয়া সম্ভব ছিল। অপরাধের নৃশংসতা, গুরুত্ব ও গভীরতা বিবেচনায় তিনটি কাউন্টে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড এবং বাকি তিনটিতে আমৃত্যু কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে। অন্যদিকে দুটি অভিযোগে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তিনি রাজসাক্ষী হওয়ায় মৃত্যুদণ্ড যোগ্য অপরাধ করলেও তাঁর ক্ষমা প্রার্থনা এবং গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্য আদালতকে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে সহায়তা করেছে—এসব বিবেচনায় তাঁর সাজায় নমনীয়তা দেখানো হয়েছে।

মন্তব্য করুন

৪৯তম বিশেষ বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিতে রাবি শিক্ষার্থীদের জন্য রুয়ার বাসসেবা

৪৯তম বিশেষ বিসিএসের লিখিত (এমসিকিউ টাইপ) পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে শুক্রবার (১০ অক্টোবর)। বিশেষ এই বিসিএস পরীক্ষাটি কেবল ঢাকায় অনুষ্ঠিত হওয়ায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের চাকরিপ্রার্থীরা ইতোমধ্যে রাজধানীর পথে রওনা হচ্ছেন।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) থেকে ঢাকায় পরীক্ষায় অংশ নিতে আসা প্রার্থীদের সুবিধার্থে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সংগঠন রুয়া (রাবি ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন) ছয়টি বাসের ব্যবস্থা করেছে।

সংগঠনটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জোহা চত্বর থেকে বাসগুলো ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাবে। পরীক্ষার পর শুক্রবার (১০ অক্টোবর) বিকেল ৩টায় ফেরার যাত্রা শুরু হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকা থেকে, এবং বাসগুলো শিক্ষার্থীদের রাজশাহী পৌঁছে দেবে।

রুয়ার যুগ্ম-প্রচার, প্রকাশনা ও জনসংযোগবিষয়ক সম্পাদক আশরাফুল আলম ইমন এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, রুয়ার উদ্যোগে এ পর্যন্ত ৭৩১ জন শিক্ষার্থী আবেদন করেছেন। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন বিভাগ ২০০ শিক্ষার্থীর জন্য ৪টি বাস বরাদ্দ দেয়। বাকি শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে রাবির উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাঈন উদ্দিন রুয়ার সভাপতি মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান-এর সহযোগিতা কামনা করেন।

রুয়া জানিয়েছে, ঢাকায় যাতায়াতের পুরো প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও সুবিধার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়েছে।

মন্তব্য করুন
×