শিক্ষকদের ১৩ থেকে ১০ম গ্রেডে উন্নীত করার দাবি অযৌক্তিক: গণশিক্ষা উপদেষ্টা

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা ১৩তম গ্রেড থেকে সরাসরি ১০ম গ্রেডে উন্নীত হওয়ার যে দাবি তুলেছেন, সে বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার মন্তব্য করেছেন যে, এক লাফে ১০ম গ্রেডে যাওয়ার কোনো যুক্তি নেই। তিনি বলেন, অধিকাংশ সহকারী শিক্ষকই মনে করেন, এ দাবি বাস্তবসম্মত নয়।

ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার আরও বলেন, প্রধান শিক্ষকদের দশম গ্রেডে উন্নীত করা হলেও সাধারণ শিক্ষকদের সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ায় তাদের একই গ্রেডে আনা সম্ভব নয়। তাই একবারে ১৩ থেকে ১০ম গ্রেডে উন্নীত করার কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই। তবে, তিনি জানিয়েছেন যে, সহকারী শিক্ষকদের জন্য ১১তম গ্রেডের সুযোগ তৈরি করতে কাজ চলছে। পাশাপাশি, এ মুহূর্তে আন্দোলনে যাওয়াকে অযৌক্তিক মনে করেন তিনি।

অধ্যাপক রায় পোদ্দার প্রাথমিক শিক্ষার গুণগতমান উন্নয়নে শিক্ষাসংশ্লিষ্ট অংশীজনদের ভূমিকা নিয়ে খুলনা জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে আয়োজিত মতবিনিময় সভা শেষে এসব মন্তব্য করেন। সভায় বিভিন্ন প্রশাসনিক ও শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সেখানে শিক্ষকদের নৈতিকতা, ব্যবহারিক দক্ষতা, সহশিক্ষা কার্যক্রমসহ নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।

এদিকে, তিনি আরও জানান, সহকারী শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতির বিষয়টি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নীতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে করা হয়েছে। এখন ৮০ শতাংশ পদোন্নতি দেয়া হচ্ছে, যা আগে ছিল ৬৫ শতাংশ। বাকি ২০ শতাংশ পদ সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে পূর্ণ করা হবে।

মন্তব্য করুন

প্রাথমিক শিক্ষায় নতুন দিগন্ত: ৫৩৪ বিদ্যালয়ে ২৬১৭ কোটি টাকার ‘রূপান্তর যাত্রা’ শুরু

 দেশের প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থাকে যুগোপযোগী ও মানসম্মত করতে এক বিশাল অবকাঠামোগত উন্নয়ন কর্মসূচির সূচনা করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই)। প্রায় ২ হাজার ৬১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে, সারাদেশের ৫৩৪টি নির্বাচিত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চেহারা পাল্টে দেওয়ার এই মহাপরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে।

‘বিদ্যমান মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ১০টি সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচিত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়ন’ শীর্ষক এই প্রকল্পের আওতায়, গ্রামীণ ও নগরীর প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো এক নতুন রূপে সেজে উঠবে।

 

যেসব স্কুলে আসছে পরিবর্তনের ছোঁয়া

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) মিরাজুল ইসলাম উকিল, এনডিসি স্বাক্ষরিত এক সাম্প্রতিক চিঠিতে এই উদ্যোগের বিস্তারিত তথ্য জানানো হয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে দুটি প্রধান ধারার বিদ্যালয় উপকৃত হবে:

১. মডেল স্কুলসমূহ: ৬৪টি জেলার বিদ্যমান ৪৮৮টি মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এই স্কুলগুলোর তথ্য ইতিমধ্যেই আইপিইএমআইএস সিস্টেম থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। ২. সিটি কর্পোরেশন এলাকার স্কুলসমূহ: দেশের ১০টি সিটি কর্পোরেশন এলাকা থেকে নির্বাচিত ৪৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এই ৪৬টি বিদ্যালয়ের তালিকা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) কর্তৃক প্রত্যয়নসহ অধিদপ্তরে জমা দিতে হবে।

 

২ হাজার ৬১৭ কোটি টাকার রূপরেখা

শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এই বিশাল অঙ্কের অর্থ (২ হাজার ৬১৭ কোটি টাকা) ব্যয় হবে বিদ্যালয়ের মৌলিক অবকাঠামো উন্নয়নে, যা শিক্ষার্থীদের জন্য একটি আদর্শ শিক্ষা পরিবেশ নিশ্চিত করবে। প্রকল্পের মূল লক্ষ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে:

  • আধুনিক শ্রেণিকক্ষ নির্মাণ: শিক্ষার্থীদের আরামদায়ক ও কার্যকর পাঠদানের পরিবেশ সৃষ্টি।

  • স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নয়ন: স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট ও পরিচ্ছন্নতার মান নিশ্চিত করা।

  • বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ: নিরাপদ পানীয় জলের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।

  • প্রশাসনিক ভবনের আধুনিকায়ন: শিক্ষকদের জন্য উন্নত কর্মপরিবেশ তৈরি।

  • খেলার মাঠের উন্নয়ন: শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য উপযুক্ত খেলার পরিবেশ তৈরি।

 

সমন্বিত প্রচেষ্টায় বাস্তবায়নের অঙ্গীকার

এই গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পটি যৌথভাবে বাস্তবায়ন করছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। প্রকল্পের স্বচ্ছতা ও সঠিক নির্বাচন নিশ্চিত করতে সিটি কর্পোরেশন এলাকার ৪৬টি বিদ্যালয়ের তালিকা প্রেরণের ক্ষেত্রে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রত্যয়নপত্রে উপজেলা শিক্ষা অফিসার ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের স্বাক্ষর বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আশা প্রকাশ করেছেন, এই ব্যাপক অবকাঠামোগত উন্নয়নের ফলে দেশের প্রাথমিক শিক্ষার পরিবেশ আরও উন্নত হবে। এর ফলস্বরূপ, শিশুরা বিদ্যালয়ে আসার প্রতি আরও বেশি আগ্রহী হবে এবং জাতি গঠনের ভিত্তি আরও মজবুত হবে।

এই প্রকল্প কেবল ইট-সিমেন্টের উন্নয়ন নয়, বরং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য উন্নত শিক্ষণ-শিখন পরিবেশ নিশ্চিত করার এক সুদূরপ্রসারী বিনিয়োগ, যা বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষায় এক নতুন প্রাণের সঞ্চার করবে।

মন্তব্য করুন

প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার তৃতীয় গ্রুপের ফল প্রকাশ

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রাজস্ব খাতে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা-২০২৩ এর ৩য় গ্রুপের ( ০৩ টি পার্বত্য জেলা ব্যতীত ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের ২১ টি জেলা) লিখিত পরীক্ষার ফলাফল আজ প্রকাশিত হয়েছে। পরীক্ষায় ২৩,০৫৭ (তেইশ হাজার সাতান্ন) জন উত্তীর্ণ হয়েছে।

২৯ মার্চ ২০২৪ এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষার্থী ছিলেন ৩ লাখ ৪৯ হাজার ২৯৩ জন

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট www.mopme.gov.bd এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট www.dpe.gov.bd -তে ফলাফল পাওয়া যাবে। উত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীরা মোবাইলেও মেসেজ পাবেন।  মৌখিক পরীক্ষার তারিখ, সময় ও স্থান পরবর্তীতে জানানো হবে।

মন্তব্য করুন

শিশুদের পুষ্টি নিশ্চিতকরণ: ১৬৫ উপজেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে 'স্কুল ফিডিং' কর্মসূচি শুরু হচ্ছে নভেম্বরে

আগামী নভেম্বর মাস থেকে দেশের ১৬৫টি উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুরা পুষ্টিকর খাবার পেতে শুরু করবে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) আবু নূর মোহাম্মদ শামসুজ্জামান সম্প্রতি এ তথ্য জানিয়েছেন।

রাজধানীর মিরপুরে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কার্যালয়ে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)-কে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে মহাপরিচালক জানান, নভেম্বর মাসের ১৭ তারিখ থেকে এই 'স্কুল ফিডিং' কার্যক্রমটি চালু হবে। কর্মসূচির আওতায় দেশের ১৬৫টি উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মোট ৩১ লাখ শিশুকে পুষ্টিকর খাবার সরবরাহ করা হবে।

তিনি জানান, সপ্তাহে পাঁচ দিন শিশুদের ডিম, দুধ, কলা, পাউরুটি, বিস্কুট এবং দেশীয় ফলসহ বিভিন্ন খাবার দেওয়া হবে।

উপজেলা নির্বাচন প্রক্রিয়া ও ব্যতিক্রম: দারিদ্র্যের হার অনুযায়ী বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য ব্যবহার করে প্রতিটি জেলা থেকে সবচেয়ে দরিদ্র একটি করে উপজেলাকে এই কর্মসূচির জন্য নির্বাচন করা হয়েছে। নির্বাচিত উপজেলার সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে খাবার দেওয়া হবে। তবে ব্যতিক্রম হিসেবে বান্দরবান ও কক্সবাজার জেলার সকল উপজেলার সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এই স্কুল ফিডিং কার্যক্রমের আওতায় থাকবে।

মহাপরিচালক আশাবাদ ব্যক্ত করেন, মানসম্মত পুষ্টিকর খাবার যেমন—ডিম, দুধ, কলা, পাউরুটি, উন্নত মানের বিস্কুট ও মৌসুমি ফল সরবরাহ করার মাধ্যমে শিশুরা স্কুলে আরও বেশি মনোযোগী হবে এবং তাদের পুষ্টির চাহিদা পূরণ হবে। এর ফলে বিদ্যালয়ে শিশুদের ঝরে পড়ার হার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে।

মন্তব্য করুন

বেতন–পদোন্নতির দাবিতে রাস্তায় শিক্ষকরা, ক্লাস বন্ধ এক কোটি শিক্ষার্থীর

সারাদেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি

বেতন বৃদ্ধি ও পদোন্নতির দাবিতে আজ রোববার (৯ নভেম্বর) সকাল থেকে সারাদেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি শুরু করেছেন। এতে দেশের সাড়ে ৬৫ হাজারের বেশি বিদ্যালয়ের প্রায় এক কোটি শিশু শিক্ষার্থী পাঠচ্যুত হয়েছে।

বিদ্যালয়ে এলেও শিক্ষকরা পাঠদান না করায় শিক্ষার্থীদের ফিরে যেতে হচ্ছে খালি হাতে।

শাহবাগে হামলার পর কর্মসূচি এগিয়ে আনলেন শিক্ষকরা : ‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’-এর ডাকে এই কর্মবিরতি শুরু হয়। মূলত ১৫ নভেম্বরের পর কর্মবিরতির পরিকল্পনা থাকলেও, শনিবার (৮ নভেম্বর) শাহবাগে ‘কলম সমর্পণ’ কর্মসূচিতে পুলিশের হামলার পরই শিক্ষকরা তা আগাম শুরু করেন।

সংগঠনের অন্যতম নেতা ও বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ বলেন,

“আমাদের ওপর হামলায় বহু শিক্ষক আহত হয়েছেন, কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে আছেন। এমন পরিস্থিতিতে সারাদেশের শিক্ষকরা একযোগে ক্লাস বর্জন করেছেন। দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে।”

তিনি আরও জানান, তারা ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন এবং প্রয়োজনে “স্কুলে তালা ঝুলিয়ে” দেওয়ারও হুঁশিয়ারি দেন।

বার্ষিক পরীক্ষা নিয়ে অভিভাবকদের উদ্বেগ

আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু পরীক্ষার তিন সপ্তাহ আগে শিক্ষকরা কর্মবিরতিতে যাওয়ায় অভিভাবকরা চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।

মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা রজব আলী বলেন,

“আমার মেয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে, এবার বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নেবে। এখন ক্লাস বন্ধ থাকায় তার প্রস্তুতি ব্যাহত হচ্ছে। এতে ভবিষ্যৎ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”

এক বছরে দ্বিতীয় দফা আন্দোলন

চলতি বছর এ নিয়ে দ্বিতীয়বার কর্মবিরতিতে গেলেন প্রাথমিক শিক্ষকরা। এর আগে মে মাসে তারা ধাপে ধাপে এক ঘণ্টা, দুই ঘণ্টা এবং আধাবেলা কর্মবিরতি পালনের পর ২৬ মে থেকে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতিতে যান।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দারের আশ্বাসে ১ জুন তারা ক্লাসে ফেরেন। তবে শিক্ষকদের অভিযোগ—প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হয়নি।


১১তম গ্রেডের আশ্বাস, শিক্ষকদের দাবি ১০ম গ্রেড

‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’-এর নেতা আবুল কাশেম জানান, দীর্ঘদিন ধরে সহকারী শিক্ষকরা ১১তম গ্রেডের দাবি জানালেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। এখন নতুন পে-কমিশনের আলোকে তারা ১০ম গ্রেডের দাবি তুলেছেন।

“সরকার বলছে ১১তম গ্রেড দেবে, কিন্তু এখনো অনুমোদন দেয়নি। তাই আমরা দশম গ্রেডের দাবি নিয়ে রাস্তায় নেমেছি,” বলেন তিনি।


‘দশম গ্রেড যৌক্তিক নয়’—অভিযোগ উপদেষ্টার

এ বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন,

“প্রধান শিক্ষকরা দশম গ্রেডে উন্নীত হয়েছেন, তাই সহকারী শিক্ষকদের এক লাফে ১৩ থেকে ১০ম গ্রেডে আনা সম্ভব নয়। আমরা ১১তম গ্রেডের বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি।”

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) আবু নূর মো. শামসুজ্জামানও জানান,

“সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেডের জন্য আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করেছি। অনুমোদন পেলেই তা কার্যকর হবে।”


শিখন ঘাটতি বাড়ার আশঙ্কা

তিনি আরও বলেন,

“বার্ষিক পরীক্ষার আগে এ কর্মবিরতি শিক্ষার্থীদের ভয়াবহ ক্ষতির মুখে ফেলবে। বই পেতে দেরি, আগের কর্মবিরতি—সব মিলিয়ে শিখন ঘাটতি অনেক বেড়েছে।”

মন্তব্য করুন

ইউনেস্কোর কনফুসিয়াস সাক্ষরতা পুরস্কার ২০২৫ পেল চলনবিলের ‘ভাসমান স্কুল’

ভাসমান স্কুল
ভাসমান স্কুল

বাংলাদেশের চলনবিল এলাকার সৌরশক্তিচালিত 'ভাসমান স্কুল' ইউনেস্কোর মর্যাদাপূর্ণ কনফুসিয়াস সাক্ষরতা পুরস্কার ২০২৫ অর্জন করেছে। এটি শিক্ষায় নতুন উদ্ভাবন এবং জীবনব্যাপী শিক্ষার প্রসারে বিশ্বের অন্যতম সর্বোচ্চ সম্মান, যা চীনা সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় প্রদান করা হয়।

শুক্রবার সিধুলাই স্ব-নির্ভর সংস্থার একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই পুরস্কার প্রাপ্তির তথ্য জানানো হয়েছে। বিশ্বের শত শত মনোনয়নের মধ্য থেকে ইউনেস্কো যে তিনটি উদ্যোগকে বিজয়ী হিসেবে নির্বাচন করেছে, তার মধ্যে রয়েছে—বাংলাদেশের সিধুলাই ভাসমান স্কুল, আয়ারল্যান্ডের লার্ন উইথ নালা ই-লার্নিং এবং মরক্কোর সেকেন্ড চান্স স্কুল অ্যান্ড ইনক্লুসিভ এডুকেশন প্রোগ্রাম।

পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানটি ২৭ সেপ্টেম্বর চীনের শানডং প্রদেশের চুফু শহরে, কনফুসিয়াসের জন্মস্থানে অনুষ্ঠিত হয়। এই স্কুলের স্থপতি মোহাম্মদ রেজোয়ান তার প্রতিষ্ঠান সিধুলাই স্ব-নির্ভর সংস্থার পক্ষে ট্রফি ও সনদ গ্রহণ করেন।

চলনবিল অঞ্চলে বেড়ে ওঠা মোহাম্মদ রেজোয়ান শৈশবে প্রতি বছর বর্ষাকালে তার স্কুল বন্ধ হয়ে যেতে দেখতেন। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই তিনি ২০০২ সালে একটি নৌকাকে স্কুলে রূপান্তরিত করার উদ্ভাবনী উদ্যোগ নেন। তার এই উদ্যোগটি বিশ্বের প্রথম ভাসমান স্কুল হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। সৌরশক্তিনির্ভর এসব ভাসমান স্কুল এখনো লাইব্রেরি ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে চলেছে, যা বর্ষায় চারদিকে পানিবেষ্টিত গ্রামগুলোতেও শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে সহায়তা করে।

ইউনেস্কো এই উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেছে, বন্যাপ্রবণ অঞ্চলের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে স্থানীয়ভাবে তৈরি উদ্ভাবনী উপায়ে শিক্ষার আলো পৌঁছে দেওয়াই এই ভাসমান স্কুলের সাফল্যের মূল কারণ।

বর্তমানে সিধুলাইয়ের ভাসমান স্কুলের এই মডেল বাংলাদেশের বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা অনুসরণ করছে। শুধু তাই নয়, এই অনন্য উদ্যোগ এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার অনেক দেশেও অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।

মন্তব্য করুন

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শুরু হচ্ছে জাতীয় স্কুল ফিডিং কর্মসূচি

‘স্কুল ফিডিং’ কর্মসূচি
‘স্কুল ফিডিং’ কর্মসূচি

বিদ্যালয়ে উপস্থিতির হার বাড়ানো, শিক্ষার্থীদের মনোযোগ ধরে রাখা এবং পুষ্টি উন্নয়নের লক্ষ্য নিয়ে দেশের নির্বাচিত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে আজ শনিবার থেকে শুরু হচ্ছে জাতীয় ‘স্কুল ফিডিং’ কর্মসূচি। এর উদ্বোধন হবে নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার খুবজীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। উদ্বোধন করবেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার।

‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ফিডিং কর্মসূচি’ প্রকল্পের আওতায় ২০২৭ সাল পর্যন্ত দেশের ১৫০টি উপজেলার ১৯ হাজার ৪১৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩১ লাখ ১৩ হাজার শিক্ষার্থী প্রতিদিন পুষ্টিকর খাবার পাবে। সপ্তাহের পাঁচটি স্কুল দিবসে নির্ধারিত খাবারের তালিকায় রয়েছে—

  • রবিবার: ১২০ গ্রাম বনরুটি ও সিদ্ধ ডিম

  • সোমবার: বনরুটি ও ২০০ গ্রাম ইউএইচটি দুধ

  • মঙ্গলবার: ৭৫ গ্রাম ফর্টিফাইড বিস্কুট ও কলা/মৌসুমি ফল

  • বুধবার: বনরুটি ও সিদ্ধ ডিম

  • বৃহস্পতিবার: বনরুটি ও সিদ্ধ ডিম

প্রস্তাবিত খাদ্যতালিকা অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন প্রয়োজনীয় মোট এনার্জির ২৫.৯%, মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টের ৩২.২%, প্রোটিনের ১৬.৪% এবং ফ্যাটের ২১.৭% গ্রহণ করতে পারবে—যা শিশুদের শারীরিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ জানান, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক, সমতাভিত্তিক ও মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করাই এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য। পুষ্টিকর খাবার সরবরাহের মাধ্যমে শিশুদের পুষ্টির অবস্থা উন্নত করা এবং শ্রেণিকক্ষে তাদের মনোযোগ বাড়ানোও এই প্রকল্পের অংশ।

তিনি আরও বলেন, ফিডিং কর্মসূচি চালু হলে বিদ্যালয়ে পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার গ্রহণের হার ৯০ শতাংশের বেশি হবে এবং ক্ষুধা নিবারণের ফলে শেখার পরিবেশ আরও উন্নত হবে।

মন্তব্য করুন
×