নজিরবিহীন আন্দোলনের মুখে অন্তর্বর্তী সরকারের সিদ্ধান্ত; খুশি শিক্ষকরা, ক্লাসে ফেরার ঘোষণা
দীর্ঘ ১০ দিনের লাগাতার আন্দোলনের মুখে অবশেষে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের দাবি মেনে নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। তিন দফা দাবির মধ্যে অন্যতম, বাড়িভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে 'সমঝোতা' হওয়ায় শিক্ষক নেতারা আপাতত আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছেন। সরকারের পক্ষ থেকে মূল বেতনের ১৫ শতাংশ হারে বাড়িভাড়া ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে।
মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) সচিবালয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে শিক্ষক নেতাদের এক বৈঠকে এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। এরপরই শিক্ষকরা আনুষ্ঠানিকভাবে আন্দোলন স্থগিত করে ক্লাসে ফেরার প্রতিশ্রুতি দেন।
আন্দোলনের মুখে নমন সরকার:
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা মূল বেতনের ২০ শতাংশ হারে বাড়িভাড়া ভাতাসহ মোট তিন দফা দাবিতে টানা আন্দোলন চালিয়ে আসছিলেন। তাদের এই নজিরবিহীন আন্দোলনের মুখে সরকার দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়।
মঙ্গলবার সকালে শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে শিক্ষক প্রতিনিধিদের বৈঠকের পরই ১৫ শতাংশ বাড়িভাড়ার সিদ্ধান্তে উভয়পক্ষ ঐকমত্যে পৌঁছায়। এরপর দুপুরে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত সম্মতিপত্র দেওয়া হয়।
১৫ শতাংশ কার্যকর হবে দুই ধাপে:
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের প্রবিধি অনুবিভাগের উপসচিব মোসা. শরীফুন্নেসার সই করা সম্মতিপত্রে বাড়িভাড়া কার্যকর হওয়ার সময়সূচি বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। সম্মতি অনুযায়ী, বাড়িভাড়া ভাতা দু'টি ধাপে কার্যকর হবে:
-
প্রথম ধাপ: চলতি বছরের ১ নভেম্বর থেকে শিক্ষক-কর্মচারীরা মূল বেতনের সাড়ে ৭ শতাংশ হারে (সর্বনিম্ন ২ হাজার টাকা) বাড়িভাড়া ভাতা পাবেন।
-
দ্বিতীয় ধাপ: আগামী অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে আরও সাড়ে ৭ শতাংশ বাড়িভাড়া ভাতা যুক্ত হবে।
ফলে সবমিলিয়ে তারা মোট ১৫ শতাংশ (সর্বনিম্ন ২ হাজার টাকা) বাড়িভাড়া ভাতা পাবেন। এই নতুন সম্মতির ফলে আগের (১৬ অক্টোবর) দেওয়া সম্মতিপত্রটি বাতিল বলে গণ্য হবে।
শিক্ষকদের প্রতিক্রিয়া:
সরকারের সিদ্ধান্তে সন্তোষ প্রকাশ করে শিক্ষক নেতারা জানান, আপাতত তারা এই সিদ্ধান্তে খুশি। এজন্য তারা শহীদ মিনারে গিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দেবেন এবং ক্লাসে ফিরে যাবেন।
যদিও শিক্ষক-কর্মচারীরা ২০ শতাংশ হারে বাড়িভাড়া ভাতার দাবিতে অনড় ছিলেন, তবুও টানা আন্দোলনের মুখে সরকারের এই সিদ্ধান্তকে শিক্ষক নেতারা সার্বিক পরিস্থিতিতে 'বিজয়' হিসেবে দেখছেন।
তবে, আন্দোলনকারী শিক্ষক নেতারা এই বৈঠকেও আরও দুটি গুরুত্বপূর্ণ দাবি সরকারকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করতে বলেছেন। দাবিগুলো হলো: চিকিৎসাভাতা ১৫০০ টাকা করা এবং কর্মচারীদের উৎসব ভাতা ৭৫ শতাংশ করা।