চাকরি জাতীয়করণ চায় জমিয়াতুল মোদার্রেছীন
মাদরাসা শিক্ষক-কর্মচারীদের সর্ববৃহৎ অরাজনৈতিক সংগঠন বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন বেতন-ভাতার কোনো শতাংশ বৃদ্ধি নয়, বরং কর্মরত সকল মাদরাসা শিক্ষক-কর্মচারীর চাকরি জাতীয়করণের দাবি জানিয়েছে।
সংগঠনটির সভাপতি ও দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক আলহাজ্ব এ এম এম বাহাউদ্দীন বলেন, জমিয়াতুল মোদার্রেছীন ২০১৭ সালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শিক্ষক সমাবেশ করে এই দাবি জানিয়েছিল এবং দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা কাজ করবে।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, "আমরা কোনো শতাংশের হিসেবে বেতন-ভাতা চাই না, আমরা চাই জাতীয়করণ করে শতভাগ সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে—তবে সেটি রাস্তায় দাঙ্গাবাজী করে নয়, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে।"
স্ট্যান্টবাজির আন্দোলন নয়, আলোচনার মাধ্যমে দাবি আদায়:
জমিয়াত সভাপতি আন্দোলনরত শিক্ষকদের যৌক্তিক দাবির প্রতি সমর্থন জানালেও বলেন, বর্তমানে যারা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তারা কেবল "স্ট্যান্টবাজি" করছেন। তিনি দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে বলেন, বর্তমান সরকার চাইলেও এখন কোনো বেতন-ভাতা বৃদ্ধি করতে পারবে না।
তিনি আরও বলেন, "ড. ইউনূসূ সাহেব যে পরিস্থিরি উপর, যে অর্থনৈতিক অবস্থায় দায়িত্ব নিয়েছেন সেখান থেকে তিনি চাইলেই কি দিতে পারবেন, কোনোভাবেই সম্ভব নয়। এটা আমাদের বুঝতে হবে। যারা এটা বুঝেও শিক্ষকদের রাস্তায় রেখে পরিবেশ নষ্ট করছেন তারা শুধু স্ট্যান্টবাজি ছাড়া আর কিছুই করছেন না।"
ভবিষ্যৎ সরকারের ওপর আস্থা:
এ এম এম বাহাউদ্দীন জানান, আগামীতে যারা রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসবেন তারা ইতোমধ্যে চাকরি জাতীয়করণ করার অঙ্গীকার করেছেন। তিনি বিশ্বাস করেন, তখন শিক্ষকদের বেতন-ভাতার জন্য দাবিও করতে হবে না, শিক্ষক-কর্মচারীরা যা চান তার চেয়েও বেশি পাবেন।
তিনি দৃঢ়তার সাথে বলেন, "আগামী দিনে দেশের প্রধানমন্ত্রী হবেন তারেক রহমান, ইনশাআল্লাহ। কেউ কোনো কিছু পরিবর্তন করতে পারবে না। তিনি ক্ষমতায় আসলে ২ হাজার নয়, ৫ হাজার টাকা করে চাইলেও শিক্ষকরা পাবেন।"
ক্লাস বন্ধ রেখে আন্দোলনের সমালোচনা:
রাজধানীর মহাখালীস্থ গাউসূল আজম কমপ্লেক্সে বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের উদ্যোগে আয়োজিত 'মাদরাসা শিক্ষার মান উন্নয়নে শিক্ষিকাদের করণীয়' শীর্ষক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি সাম্প্রতিক এইচএসসি ফলাফলে বিপর্যয়ের কথা উল্লেখ করে বলেন, এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য "পিক টাইম"। সামনে নির্বাচন থাকায় এমনিতেই প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। এই সময়ে দাবি-দাওয়ার নাম করে ক্লাস বন্ধ রেখে আন্দোলন করা হচ্ছে এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে সবকিছু বন্ধ রাখার অপচেষ্টা চলছে। রাস্তায় দাঙ্গাবাজী করে দাবি আদায়ের নামে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির চেষ্টা হচ্ছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
নারী শিক্ষকদের গুরুত্ব ও সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির দাবি:
ইনকিলাব সম্পাদক সমাজ গঠনে নারীদের ভূমিকা ও গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, আলেম সমাজ সব সময় নারী শিক্ষা ও নারীর অগ্রগতির জন্য কাজ করেছে, বাধা হচ্ছে নারী শিক্ষা নিয়ে রাজনীতি। তিনি নারী শিক্ষকদের সুযোগ-সুবিধা আরো বাড়ানোর দাবি জানান। দেশের বাইরে প্রশিক্ষণের জন্য নারীদের, বিশেষ করে চীনে পাঠানোর ব্যবস্থার কথা বলেন।
তিনি দক্ষিণ কোরিয়া ও চীনের উন্নয়নে মা ও নারী শিক্ষকদের অগ্রণী ভূমিকার কথা উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশেও প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানে অগ্রগতি আনতে হলে নারী শিক্ষক ও শিক্ষিত মায়েদের প্রয়োজন। এজন্য শিক্ষকদের দাবি-দাওয়া বেশি আসা দরকার নারী শিক্ষকদের কাছ থেকে, কারণ তাদের কষ্ট বেশি।
জামায়াতের আন্দোলনের সমালোচনা:
জমিয়াত সভাপতি মিথ্যাচারের সমালোচনা করে বলেন, এক সময় সাঈদী ও নিজামী সাহেবরা শহীদ মিনারকে 'কুফরি-শিরক' বলতেন। এখন সেই জামায়াতের নেতৃত্বে শহীদ মিনারে গিয়ে শিক্ষকদের নিয়ে আন্দোলন করছে।
জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের মহাসচিবের বক্তব্য: অনুষ্ঠানে জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের মহাসচিব অধ্যক্ষ শাব্বীর আহমদ মোমতাজী বলেন, তারা দীর্ঘদিন ধরেই শিক্ষক-কর্মচারীদের চাকরি জাতীয়করণের দাবি জানিয়ে আসছেন এবং আন্দোলন করছেন। তারা চান শিক্ষকরা সরকারি চাকরিজীবীদের মতো শতভাগ সুযোগ-সুবিধা পাক, তবে তারা সব সময় সরকারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে দাবি আদায়ের পক্ষে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন- স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব রুহী রহমান এবং মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক দিলরুবা খান।