মাউশির ডিজি অধ্যাপক ড. মুহম্মদ আজাদ খানের পদত্যাগ: 'স্বাস্থ্যগত কারণ' নাকি 'অপমানবোধ'?

অধ্যাপক ড. মুহম্মদ আজাদ খান
অধ্যাপক ড. মুহম্মদ আজাদ খান

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক ড. মুহম্মদ আজাদ খান তাঁর দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চেয়েছেন। গত ৭ অক্টোবর, মঙ্গলবার, তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিবের কাছে তাঁর পদত্যাগপত্র জমা দেন। যদিও পদত্যাগপত্রে 'স্বাস্থ্যগত কারণের' কথা উল্লেখ করা হয়েছে, তবে সংশ্লিষ্ট মহলে এই আকস্মিক পদত্যাগকে ঘিরে 'অপমানবোধের' একটি তীব্র গুঞ্জন তৈরি হয়েছে।

অব্যাহতির আনুষ্ঠানিক কারণ: স্বাস্থ্যগত সমস্যা

অধ্যাপক ড. মুহম্মদ আজাদ খান তাঁর পদত্যাগপত্রে উল্লেখ করেছেন যে, তিনি ২০ ফেব্রুয়ারি মহাপরিচালকের পদে যোগদান করেছিলেন। কিন্তু "স্বাস্থ্যগত কারণে দায়িত্ব পালন আমার পক্ষে কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। তাই আমি মহাপরিচালকের দায়িত্ব হতে অব্যাহতি প্রার্থনা করছি।"

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, তিনি তাঁর আবেদনের সমর্থনে চিকিৎসা সংক্রান্ত নথিপত্রও জমা দিয়েছেন। এই আনুষ্ঠানিক কারণ অনুসারে, শারীরিক অসুস্থতার কারণেই তিনি শিক্ষা প্রশাসনের শীর্ষ এই পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

 

পদত্যাগের নেপথ্য কারণ: নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি বিতর্ক

অধ্যাপক ড. মুহম্মদ আজাদ খান পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার মাত্র একদিন আগে, ৬ অক্টোবর, সোমবার, শিক্ষা মন্ত্রণালয় মাউশির মহাপরিচালক পদে নতুন নিয়োগের জন্য একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। এই ঘটনাটিই মূলত বিতর্কের মূল কারণ।

  • নজিরবিহীন ঘটনা: মাউশির ইতিহাসে এমন নজির নেই যে, বর্তমান ডিজি দায়িত্বে থাকা অবস্থায়ই নতুন ডিজি নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে।

  • 'অপমানজনক' অনুভূতি: মাউশির একাধিক কর্মকর্তার নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন যে, কর্মরত ডিজির উপস্থিতিতে এমন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করাকে অধ্যাপক ড. আজাদ খান 'অপমানজনক' বা 'অপমানিত' বোধ করেছেন। এই অপমানবোধ থেকেই তিনি স্বেচ্ছায় পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন।

অর্থাৎ, যদিও পদত্যাগপত্রে স্বাস্থ্যগত কারণের কথা বলা হয়েছে, তবে ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে—নতুন ডিজি খোঁজার জন্য মন্ত্রণালয়ের 'নজিরবিহীন' বিজ্ঞপ্তিই তাঁর আকস্মিক অব্যাহতি চাওয়ার প্রধান কারণ।


 

ফেইসবুকে সাবেক ডিজির মন্তব্য

পদত্যাগের পরদিন, অধ্যাপক ড. আজাদ খান তাঁর ব্যক্তিগত ফেইসবুক অ্যাকাউন্টে একটি স্ট্যাটাস দেন, যা আরও আলোচনার জন্ম দিয়েছে। যদিও স্ট্যাটাসটি সরাসরি পদত্যাগ বা মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তি নিয়ে ছিল না, তবে তাঁর একটি মন্তব্যে তিনি ইঙ্গিত দেন যে, "জনবিচ্ছিন্ন গোষ্ঠীর অনেককে (যারা পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে) ভোগ করতে হবে।" এই ধরনের মন্তব্য তাঁর পদত্যাগের পেছনে প্রশাসনের সাথে অসন্তোষ বা বিরোধের আভাস দিচ্ছে।

বর্তমানে পদটি শূন্য হওয়ায়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় দ্রুততম সময়ে নতুন মহাপরিচালক নিয়োগের মাধ্যমে মাউশির প্রশাসনিক কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখার উদ্যোগ নেবে বলে জানা গেছে।

Tags

মাউশি অধ্যাপক-আজাদ-খান পদত্যাগ ডিজি শিক্ষা-মন্ত্রণালয় নিয়োগ-বিজ্ঞপ্তি মাউশি-ডিজি-পদত্যাগ
মন্তব্য করুন

মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে গার্ল গাইডস ও রেঞ্জার কার্যক্রম গতিশীল করার সাত দফা নির্দেশনা

 

 

ভূমিকা: শিক্ষার্থীদের মধ্যে সেবা, নেতৃত্ব ও সুনাগরিকত্বের গুণাবলী বিকাশে দেশের সকল মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গার্ল গাইডস ও রেঞ্জার কার্যক্রম একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই কার্যক্রমকে আরও কার্যকর ও গতিশীল করতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) সম্প্রতি সাত দফা নির্দেশনা জারি করেছে। গত সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) জারি করা এই অফিস আদেশে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের এই নির্দেশনাগুলো যথাযথভাবে পালনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

মাউশির সাত দফা নির্দেশনা:

গার্ল গাইডস ও রেঞ্জার কার্যক্রমের মানোন্নয়ন ও সঠিক পরিচালনা নিশ্চিত করতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের জন্য নিম্নোক্ত সাতটি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে:

১. ইউনিট গঠন ও নিয়মিত কার্যক্রম: প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গার্ল গাইডস ও রেঞ্জার ইউনিট গঠন নিশ্চিত করতে হবে। ইউনিটগুলোকে নিয়মিত প্রশিক্ষণ, সেবামূলক কার্যক্রম এবং সভার আয়োজন করতে হবে।

২. বার্ষিক রিপোর্ট দাখিল: গার্ল গাইডস ও রেঞ্জার কার্যক্রমের বার্ষিক রিপোর্ট প্রতি বছর ৩১ জানুয়ারির মধ্যে সংশ্লিষ্ট আঞ্চলিক অফিসে এবং ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে মাউশিতে আবশ্যিকভাবে প্রেরণ করতে হবে।

৩. ত্রৈমাসিক রিপোর্ট দাখিল প্রক্রিয়া: প্রতি ত্রৈমাসিকের রিপোর্ট পরবর্তী মাসের ৫ তারিখের মধ্যে আঞ্চলিক অফিসে জমা দিতে হবে। আঞ্চলিক অফিসগুলো আবার এসব রিপোর্ট ১০ অক্টোবরের মধ্যে অধিদপ্তরের নির্ধারিত ই-মেইল (girlguides2025@gmail.com) ঠিকানায় পাঠাবে।

৪. প্রতিষ্ঠান প্রধানের দায়িত্ব: প্রতিষ্ঠান প্রধানকে নিয়মিতভাবে ইউনিট গঠন, প্রশিক্ষণ ও সেবামূলক কার্যক্রমের সভা আয়োজন নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি ত্রৈমাসিক ও বার্ষিক রিপোর্টগুলো নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে জমা দেওয়ার বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হবে।

৫. তহবিলের সঠিক ব্যবহার ও পরিশোধ: গার্ল গাইডস ও রেঞ্জার, গার্ল ইন স্কাউট এর তহবিলে আদায়কৃত ফি প্রতিষ্ঠান প্রধান ও গার্ল গাইডস ও রেঞ্জার গাইডারের যৌথ স্বাক্ষরে উত্তোলন করতে হবে এবং এই অর্থ কেবল গার্ল গাইডস ও রেঞ্জার কার্যক্রমেই ব্যয় করা যাবে। এছাড়া, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায়কৃত ফি সরকারি পরিপত্র অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট উপজেলা ও জেলা গার্ল গাইডস ও রেঞ্জারে নিয়মিত পরিশোধ করা আবশ্যক।

৬. কার্যক্রম পরিকল্পনা ও মনিটরিং: গার্ল গাইডস ও রেঞ্জার গাইডারকে এক বছরের জন্য কার্যক্রমের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা তৈরি করে গ্রুপ কমিটির অনুমোদন নিতে হবে এবং সে অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। প্রতিষ্ঠান প্রধান এই কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে কিনা তা নিয়মিত তদারকি করবেন।

৭. গাইডার নিয়োগ ও স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজে সম্পৃক্ততা: যে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গার্ল গাইডস ও রেঞ্জার গাইডার নেই, প্রতিষ্ঠান প্রধান অতি দ্রুত সংশ্লিষ্ট জেলা বা আঞ্চলিক কার্যালয়ে যোগাযোগ করে গাইডার নিয়োগের ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। এছাড়াও, শিক্ষাঙ্গনে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার কাজে গার্ল গাইডস ও রেঞ্জার সদস্যদের স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে সম্পৃক্ত করতে হবে।

মন্তব্য করুন

দারুল ইহসানের সনদধারী গ্রন্থাগার শিক্ষকদের তথ্য চাইল মাউশি

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রন্থাগার ও তথ্যবিজ্ঞান বিষয়ে সনদ অর্জনকারী সহকারী শিক্ষকদের তথ্য চেয়েছে।

মাউশির সহকারী পরিচালক এস এম মোসলেম উদ্দিন স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এই তথ্য জানানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়। চিঠিতে বলা হয়েছে, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসের এমপিও কমিটির সিদ্ধান্ত এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার ভিত্তিতে এই তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।

দারুল ইহসান থেকে সনদপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট ছক অনুযায়ী ই-মেইলের মাধ্যমে এই তথ্য মাউশিতে পাঠাতে হবে।

শিক্ষকদের যে সকল তথ্য জানাতে হবে, তার মধ্যে রয়েছে:

  • জেলার নাম

  • শিক্ষকের নাম ও পদবি

  • কর্মস্থলের ঠিকানা

  • প্রতিষ্ঠানে যোগদানের তারিখ

  • দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্জিত সনদ ও ক্যাম্পাসের নাম

  • দারুল ইহসানের সনদের পরে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অন্য কোনো সনদ অর্জন করা হয়েছে কি না (যদি থাকে, সেই তথ্য)।

মন্তব্য করুন

নজিরবিহীন আন্দোলনের মুখে অন্তর্বর্তী সরকারের সিদ্ধান্ত; খুশি শিক্ষকরা, ক্লাসে ফেরার ঘোষণা

দীর্ঘ ১০ দিনের লাগাতার আন্দোলনের মুখে অবশেষে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের দাবি মেনে নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। তিন দফা দাবির মধ্যে অন্যতম, বাড়িভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে 'সমঝোতা' হওয়ায় শিক্ষক নেতারা আপাতত আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছেন। সরকারের পক্ষ থেকে মূল বেতনের ১৫ শতাংশ হারে বাড়িভাড়া ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে।

মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) সচিবালয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে শিক্ষক নেতাদের এক বৈঠকে এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। এরপরই শিক্ষকরা আনুষ্ঠানিকভাবে আন্দোলন স্থগিত করে ক্লাসে ফেরার প্রতিশ্রুতি দেন।

আন্দোলনের মুখে নমন সরকার:

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা মূল বেতনের ২০ শতাংশ হারে বাড়িভাড়া ভাতাসহ মোট তিন দফা দাবিতে টানা আন্দোলন চালিয়ে আসছিলেন। তাদের এই নজিরবিহীন আন্দোলনের মুখে সরকার দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়।

মঙ্গলবার সকালে শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে শিক্ষক প্রতিনিধিদের বৈঠকের পরই ১৫ শতাংশ বাড়িভাড়ার সিদ্ধান্তে উভয়পক্ষ ঐকমত্যে পৌঁছায়। এরপর দুপুরে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত সম্মতিপত্র দেওয়া হয়।

১৫ শতাংশ কার্যকর হবে দুই ধাপে:

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের প্রবিধি অনুবিভাগের উপসচিব মোসা. শরীফুন্নেসার সই করা সম্মতিপত্রে বাড়িভাড়া কার্যকর হওয়ার সময়সূচি বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। সম্মতি অনুযায়ী, বাড়িভাড়া ভাতা দু'টি ধাপে কার্যকর হবে:

  • প্রথম ধাপ: চলতি বছরের ১ নভেম্বর থেকে শিক্ষক-কর্মচারীরা মূল বেতনের সাড়ে ৭ শতাংশ হারে (সর্বনিম্ন ২ হাজার টাকা) বাড়িভাড়া ভাতা পাবেন।

  • দ্বিতীয় ধাপ: আগামী অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে আরও সাড়ে ৭ শতাংশ বাড়িভাড়া ভাতা যুক্ত হবে।

ফলে সবমিলিয়ে তারা মোট ১৫ শতাংশ (সর্বনিম্ন ২ হাজার টাকা) বাড়িভাড়া ভাতা পাবেন। এই নতুন সম্মতির ফলে আগের (১৬ অক্টোবর) দেওয়া সম্মতিপত্রটি বাতিল বলে গণ্য হবে।

শিক্ষকদের প্রতিক্রিয়া:

সরকারের সিদ্ধান্তে সন্তোষ প্রকাশ করে শিক্ষক নেতারা জানান, আপাতত তারা এই সিদ্ধান্তে খুশি। এজন্য তারা শহীদ মিনারে গিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দেবেন এবং ক্লাসে ফিরে যাবেন।

যদিও শিক্ষক-কর্মচারীরা ২০ শতাংশ হারে বাড়িভাড়া ভাতার দাবিতে অনড় ছিলেন, তবুও টানা আন্দোলনের মুখে সরকারের এই সিদ্ধান্তকে শিক্ষক নেতারা সার্বিক পরিস্থিতিতে 'বিজয়' হিসেবে দেখছেন।

তবে, আন্দোলনকারী শিক্ষক নেতারা এই বৈঠকেও আরও দুটি গুরুত্বপূর্ণ দাবি সরকারকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করতে বলেছেন। দাবিগুলো হলো: চিকিৎসাভাতা ১৫০০ টাকা করা এবং কর্মচারীদের উৎসব ভাতা ৭৫ শতাংশ করা।

মন্তব্য করুন

এইচএসসি ফলে ইংরেজি বিপর্যয়

দেশে বিদ্যালয়ের প্রাথমিক পর্যায় থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত দীর্ঘ ১২ বছর ইংরেজি ভাষা শিক্ষা বাধ্যতামূলক হওয়া সত্ত্বেও অধিকাংশ শিক্ষার্থীর মধ্যে ইংরেজিভীতি কাটছে না। মুখস্থ-নির্ভর শিক্ষণ পদ্ধতি এবং জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ায় এই ভাষা দ্রুত মস্তিষ্ক থেকে হারিয়ে যায়। যার ভয়াবহ প্রতিফলন দেখা গেছে ২০২৫ সালের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফলে।ৃ

ফলাফলে ভয়াবহ চিত্র

এবারের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় মোট অকৃতকার্য ৫ লাখ ৮ হাজার ৭০১ জন শিক্ষার্থীর প্রায় এক-তৃতীয়াংশের ভরাডুবি হয়েছে ইংরেজি বিষয়ে। ইংরেজিতে পাশের হার ৭৭ শতাংশ থেকে কমে ৫৮ শতাংশে নেমে এসেছে, যা গত দুই দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন। গত পাঁচ বছরে (২০২১-২০২৫) গড় পাশের হার প্রায় ৪০ শতাংশ কমেছে (২০২১ সালে ৯৫.২৬% থেকে ২০২৫ সালে ৫৭.১২%)।

আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এবার মোট পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৫৮.৮৩ শতাংশ পাশ করেছে। বিষয়ভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ইংরেজি, হিসাব বিজ্ঞান এবং আইসিটি—এই তিনটি বিষয়ে ফল সবচেয়ে খারাপ। ইংরেজিতে ফেল করেছেন ৩৮.৮ শতাংশ শিক্ষার্থী। ঢাকা ও বরিশালে পাশের হার ৭০ শতাংশের কাছাকাছি থাকলেও, যশোর বোর্ডে তা সর্বনিম্ন—মাত্র ৫৪.৮২ শতাংশ। বিশেষ করে, ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রে নম্বর পাওয়ার হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে।

দুর্বলতার মূল কারণ: অদক্ষ শিক্ষক ও মুখস্থ নির্ভরতা:

শিক্ষাবিদ ও শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা এই বিপর্যয়ের প্রধান কারণ হিসেবে প্রাথমিক পর্যায় থেকেই অদক্ষ শিক্ষক দ্বারা পাঠদান এবং মুখস্থ-নির্ভর শিক্ষণ পদ্ধতিকে দায়ী করেছেন।

  • শিক্ষকের অভাব ও অদক্ষতা: মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুলগুলোর ৮৪ শতাংশ ইংরেজি শিক্ষকের নেই ইংরেজিতে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি। অর্থাৎ, ফল বিপর্যয়ের অন্যতম নেপথ্যে রয়েছে দক্ষ শিক্ষকের অভাব।

  • প্রাথমিক স্তরে দুর্বল ভিত্তি: শিক্ষাবিদদের মতে, একটি শিশুর ইংরেজির ভিত্তি তৈরি হয় প্রাথমিক স্তরে। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ওয়েভ ফাউন্ডেশনের ২০২৩ সালের জরিপ অনুযায়ী, প্রাথমিকের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির প্রায় ১৬ ভাগ শিক্ষার্থী ইংরেজি বইয়ের একটি বর্ণও পড়তে পারে না

  • ১২ বছর পরেও কথোপকথনে অক্ষমতা: মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) এক গবেষণায় দেখা গেছে, শিক্ষাজীবনে ১২ বছরের বেশি ইংরেজি পড়েও অনেক শিক্ষার্থী ভাষাটিতে সাধারণ কথোপকথন চালাতে এবং সাধারণ বাক্য গঠনে হিমশিম খায়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের একজন অধ্যাপক এই পরিস্থিতির জন্য শিক্ষার্থীদের ইংরেজি-ভীতি, শিখন পদ্ধতির জটিলতা এবং শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের অভাবকে মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তিনি আরও বলেন, শিক্ষার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ মেধাবী মানুষের প্রয়োজন হলেও, শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি, অপর্যাপ্ত বেতন এবং উপযুক্ত সম্মানের অভাবের কারণে মেধাবীরা শিক্ষকতা পেশায় আকৃষ্ট হচ্ছে না, যা ইংরেজির মান খারাপ হওয়ার একটি বড় কারণ।

উত্তরপত্রে হতাশাজনক চিত্র:

দীর্ঘদিন ধরে এইচএসসি পরীক্ষার পরীক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী একজন শিক্ষক জানান, অনেক শিক্ষার্থীর উত্তরপত্রের দিকে তাকালে অর্থহীন ও অসংলগ্ন লেখা চোখে পড়ে। সঠিক বাক্য গঠন ও মৌলিক ব্যাকরণের উপস্থিতি থাকে না। বানান ভুল এতটাই বেশি যে তা পড়তে পরীক্ষকদের কষ্ট হয়। অনেক সময় মনে হয় শিক্ষার্থীরা যেন কখনো কলেজে যায়নি বা বই কেনেনি। তারা ই-মেইল, চিঠি, দরখাস্ত বা অনুচ্ছেদ লেখার মৌলিক নিয়ম সম্পর্কেও ধারণা রাখে না, যা ইঙ্গিত করে যে শিক্ষার্থীরা ইংরেজি বোঝার পরিবর্তে মুখস্থ বিদ্যা কাজে লাগিয়ে পরীক্ষা দিয়েছে।

অন্যান্য কারণ:

শিক্ষাবোর্ডগুলোর কর্মকর্তারা এই পরিস্থিতির জন্য আরও কিছু কারণ উল্লেখ করেছেন:

  • মূল্যায়নে কঠোরতা: দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত পরীক্ষায় সহানুভূতির নম্বর বা অতিরিক্ত নম্বর দেওয়ার প্রথা এবার পুরোপুরি বন্ধ করে কঠোরভাবে মূল্যায়ন করা হয়েছে, ফলে ফলাফলে প্রকৃত সক্ষমতার প্রতিফলন ঘটেছে।

  • অন্যান্য দুর্বলতা: মফস্বলের কলেজগুলোতে অনলাইন বা ডিজিটাল কনটেন্টভিত্তিক পড়াশোনার অভাব, শিক্ষকের ঘাটতি, পরীক্ষার্থীদের দুর্বল লেখনশৈলী এবং শিক্ষার্থীদের পড়ার টেবিল থেকে দূরে সরে যাওয়াও ফলাফলের ওপর বড় প্রভাব ফেলেছে বলে মনে করা হচ্ছে।

মন্তব্য করুন

মাধ্যমিক ও কলেজ শিক্ষা অধিদপ্তর

ভেঙে হচ্ছে দুটি পৃথক অধিদপ্তর

মাউশিকে (মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর) ভেঙে দুটি পৃথক অধিদপ্তর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এর মধ্যে একটি হবে মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এবং অন্যটি হবে কলেজ শিক্ষা অধিদপ্তর

প্রধান উপদেষ্টা এই বিষয়ে সম্মতি দেওয়ার পর, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এখন এই দুটি পৃথক অধিদপ্তর গঠনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। অধিদপ্তর দুটির জন্য পৃথক জনবলকাঠামো (অর্গানোগ্রাম), কার্যতালিকা (অ্যালোকেশন অব বিজনেস) সহ পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাব প্রণয়নের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

আজ রোববার (১২ অক্টোবর, ২০২৫, ধরে নেওয়া হলো) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক অফিস আদেশে এই তথ্য জানানো হয়। এই কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের একজন যুগ্ম সচিবকে।

কমিটিকে আগামী ৩০ দিনের মধ্যে দুটি পৃথক জনবলকাঠামো প্রস্তুত করে মন্ত্রণালয়ে জমা দিতে বলা হয়েছে।

দীর্ঘদিনের দাবি ও বিতর্ক: মাউশিকে বিভক্ত করার এই উদ্যোগ নতুন নয়। ২০১০ সালের জাতীয় শিক্ষানীতিতেও মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরকে ভাগ করে 'মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর' এবং 'উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা অধিদপ্তর' করার কথা ছিল, যা তখন বাস্তবায়িত হয়নি। তবে, মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর ঠিকই গঠিত হয়েছিল। সাম্প্রতিক সরকারের আমলেও শিক্ষা সংস্কার প্রস্তাবে মাউশিকে দুই ভাগ করার বিষয়টি উঠে এসেছিল।

তবে, এই সিদ্ধান্ত নিয়ে শিক্ষা প্রশাসনে পরস্পরবিরোধী অবস্থান রয়েছে। বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা চান না মাউশিকে ভাগ করা হোক। অন্যদিকে, মাধ্যমিকের শিক্ষকেরা দ্রুত তাঁদের জন্য আলাদা 'মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর' করার পক্ষে।

মন্তব্য করুন

পরীক্ষার ভরা মৌসুমে কমিটি নির্বাচনের নির্দেশ: শিক্ষামহলে তীব্র উদ্বেগ

বার্ষিক ও নির্বাচনী পরীক্ষার মাঝে গভর্নিং বডি নির্বাচন সম্পন্ন করার নির্দেশে শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের চাপ বৃদ্ধি; বিঘ্নিত হতে পারে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচন সম্পন্ন করার নির্দেশ দেওয়ায় শিক্ষামহলে তীব্র উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। সাধারণত শিক্ষাবর্ষের শুরুতে, অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি মাসে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, যখন পাঠদানের চাপ কম থাকে। কিন্তু এবার গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার সময়ে এই সিদ্ধান্ত নেওয়ায় শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা বিপাকে পড়েছেন।

 

পরীক্ষার সময়সূচির সঙ্গে সংঘাত

মন্ত্রণালয়ের শিক্ষাপঞ্জি অনুসারে, নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসটি পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত সংবেদনশীল। ২০ নভেম্বর থেকে ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা চলবে। অন্যদিকে, দশম শ্রেণির নির্বাচনী পরীক্ষা (টেস্ট পরীক্ষা) অনুষ্ঠিত হবে ২৯ নভেম্বর থেকে ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত।

শিক্ষার্থীরা যখন চূড়ান্ত পড়াশোনা ও প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত, ঠিক সেই সময়ে নির্বাচনের আয়োজন করা হলে তা সরাসরি শিক্ষাব্যবস্থার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট সকলে।

আরো পড়ুন

  1. পরের বাজেটে বাড়তে পারে শিক্ষকদের বরাদ্দ: শিক্ষা উপদেষ্টা 
  2. মাউশির ডিজি অধ্যাপক ড. মুহম্মদ আজাদ খানের পদত্যাগ কেন ? 

শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ওপর অতিরিক্ত চাপ

শিক্ষকদের মতে, এই সময়ে তাঁরা প্রশ্নপত্র তৈরি, উত্তরপত্র মূল্যায়ন এবং পরীক্ষা পরিচালনার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যস্ত থাকেন। এর সঙ্গে ভোটের প্রস্তুতি, বুথ স্থাপন ও নির্বাচন পরিচালনার বাড়তি চাপ শিক্ষকদের ওপর এসে পড়বে। অন্যদিকে, নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা ও পরিবেশগত কারণে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ বিঘ্নিত হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। অভিভাবকরাও সন্তানের পরীক্ষা নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকার সময় নির্বাচনী প্রতিযোগিতায় জড়িয়ে পড়লে তার প্রভাব সন্তানের মানসিক চাপের ওপর পড়তে পারে।

 

তাড়াহুড়োর কারণ নিয়ে প্রশ্ন

দীর্ঘদিন ধরে দেশের বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরিচালনা কমিটির নির্বাচন বকেয়া থাকলেও, পরীক্ষার ঠিক আগ মুহূর্তে এই নির্দেশ কার্যকরের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন শিক্ষাবিদ ও অভিভাবকরা। অনেকে ধারণা করছেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করেই তড়িঘড়ি করে এই নির্বাচন এগিয়ে আনা হয়েছে।

এ বিষয়ে অভিভাবক ঐক্য ফোরামের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. জিয়াউল কবির দুলু বলেন, "স্কুল পরিচালনায় কমিটি জরুরি, তবে তা যেন শিক্ষার ক্ষতি করে না হয়। পরীক্ষার এই সংবেদনশীল সময়ে নির্বাচন আয়োজনের পেছনে অন্য কোনো উদ্দেশ্য কাজ করছে কি না, তা খতিয়ে দেখা দরকার।"

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক জানান, একই সময়ে নির্বাচন ও পরীক্ষা নিশ্চিতভাবেই শিক্ষার্থীদের অসুবিধায় ফেলবে। মন্ত্রণালয়ের উচিত— হয় নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তন করা, নতুবা পরীক্ষার রুটিনে পুনর্বিবেচনা করা। এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বা ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁদের কোনো সুস্পষ্ট মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

শিক্ষাবিদ ও সাধারণ অভিভাবকরা এখন জানতে চাইছেন—শিক্ষাব্যবস্থাকে ঝুঁকিতে ফেলে এই বিতর্কিত সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হবে কিনা।

মন্তব্য করুন
×