মাউশির ডিজি অধ্যাপক ড. মুহম্মদ আজাদ খানের পদত্যাগ: 'স্বাস্থ্যগত কারণ' নাকি 'অপমানবোধ'?

অধ্যাপক ড. মুহম্মদ আজাদ খান
অধ্যাপক ড. মুহম্মদ আজাদ খান

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক ড. মুহম্মদ আজাদ খান তাঁর দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চেয়েছেন। গত ৭ অক্টোবর, মঙ্গলবার, তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিবের কাছে তাঁর পদত্যাগপত্র জমা দেন। যদিও পদত্যাগপত্রে 'স্বাস্থ্যগত কারণের' কথা উল্লেখ করা হয়েছে, তবে সংশ্লিষ্ট মহলে এই আকস্মিক পদত্যাগকে ঘিরে 'অপমানবোধের' একটি তীব্র গুঞ্জন তৈরি হয়েছে।

অব্যাহতির আনুষ্ঠানিক কারণ: স্বাস্থ্যগত সমস্যা

অধ্যাপক ড. মুহম্মদ আজাদ খান তাঁর পদত্যাগপত্রে উল্লেখ করেছেন যে, তিনি ২০ ফেব্রুয়ারি মহাপরিচালকের পদে যোগদান করেছিলেন। কিন্তু "স্বাস্থ্যগত কারণে দায়িত্ব পালন আমার পক্ষে কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। তাই আমি মহাপরিচালকের দায়িত্ব হতে অব্যাহতি প্রার্থনা করছি।"

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, তিনি তাঁর আবেদনের সমর্থনে চিকিৎসা সংক্রান্ত নথিপত্রও জমা দিয়েছেন। এই আনুষ্ঠানিক কারণ অনুসারে, শারীরিক অসুস্থতার কারণেই তিনি শিক্ষা প্রশাসনের শীর্ষ এই পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

 

পদত্যাগের নেপথ্য কারণ: নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি বিতর্ক

অধ্যাপক ড. মুহম্মদ আজাদ খান পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার মাত্র একদিন আগে, ৬ অক্টোবর, সোমবার, শিক্ষা মন্ত্রণালয় মাউশির মহাপরিচালক পদে নতুন নিয়োগের জন্য একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। এই ঘটনাটিই মূলত বিতর্কের মূল কারণ।

  • নজিরবিহীন ঘটনা: মাউশির ইতিহাসে এমন নজির নেই যে, বর্তমান ডিজি দায়িত্বে থাকা অবস্থায়ই নতুন ডিজি নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে।

  • 'অপমানজনক' অনুভূতি: মাউশির একাধিক কর্মকর্তার নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন যে, কর্মরত ডিজির উপস্থিতিতে এমন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করাকে অধ্যাপক ড. আজাদ খান 'অপমানজনক' বা 'অপমানিত' বোধ করেছেন। এই অপমানবোধ থেকেই তিনি স্বেচ্ছায় পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন।

অর্থাৎ, যদিও পদত্যাগপত্রে স্বাস্থ্যগত কারণের কথা বলা হয়েছে, তবে ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে—নতুন ডিজি খোঁজার জন্য মন্ত্রণালয়ের 'নজিরবিহীন' বিজ্ঞপ্তিই তাঁর আকস্মিক অব্যাহতি চাওয়ার প্রধান কারণ।


 

ফেইসবুকে সাবেক ডিজির মন্তব্য

পদত্যাগের পরদিন, অধ্যাপক ড. আজাদ খান তাঁর ব্যক্তিগত ফেইসবুক অ্যাকাউন্টে একটি স্ট্যাটাস দেন, যা আরও আলোচনার জন্ম দিয়েছে। যদিও স্ট্যাটাসটি সরাসরি পদত্যাগ বা মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তি নিয়ে ছিল না, তবে তাঁর একটি মন্তব্যে তিনি ইঙ্গিত দেন যে, "জনবিচ্ছিন্ন গোষ্ঠীর অনেককে (যারা পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে) ভোগ করতে হবে।" এই ধরনের মন্তব্য তাঁর পদত্যাগের পেছনে প্রশাসনের সাথে অসন্তোষ বা বিরোধের আভাস দিচ্ছে।

বর্তমানে পদটি শূন্য হওয়ায়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় দ্রুততম সময়ে নতুন মহাপরিচালক নিয়োগের মাধ্যমে মাউশির প্রশাসনিক কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখার উদ্যোগ নেবে বলে জানা গেছে।

Tags

মাউশি অধ্যাপক-আজাদ-খান পদত্যাগ ডিজি শিক্ষা-মন্ত্রণালয় নিয়োগ-বিজ্ঞপ্তি মাউশি-ডিজি-পদত্যাগ
মন্তব্য করুন

বগুড়ার শেরপুরে ওয়াই-ফাই পাসওয়ার্ড নিয়ে শিক্ষকদের মারামারি, বিদ্যালয়ে পুলিশ

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হলো জ্ঞান ও শৃঙ্খলার কেন্দ্র। কিন্তু বগুড়ার শেরপুরে একটি বিদ্যালয়ে তুচ্ছ বিষয় নিয়ে দুই শিক্ষকের মধ্যে মারামারির ঘটনায় সেই শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হয়েছে। ওয়াই-ফাই পাসওয়ার্ড দেওয়াকে কেন্দ্র করে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি এক সময় এমন উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে ওঠে যে তা নিয়ন্ত্রণে আনতে বিদ্যালয়ে পুলিশ ডাকতে হয়।

ঘটনার বিবরণ:

রবিবার (১২ অক্টোবর) দুপুর আনুমানিক একটার দিকে বগুড়ার শেরপুর পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে এই অপ্রীতিকর ঘটনাটি ঘটে। বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ সাহেব আলী এবং ট্রেড ইনস্ট্রাক্টর মাহমুদুল হাসানের মধ্যে এই সংঘর্ষ শুরু হয়।

সংঘর্ষের কারণ ও পরিণতি: অভিযোগ অনুসারে, বিদ্যালয়ের ওয়াই-ফাই পাসওয়ার্ড দিতে রাজি না হওয়ায় সহকারী শিক্ষক সাহেব আলী প্রথমে ট্রেড ইনস্ট্রাক্টর মাহমুদুল হাসানকে মারধর করেন। ঘটনার সূত্রপাত এই পাসওয়ার্ড নিয়েই।

মাহমুদুল হাসানের ওপর হামলার পর পরিস্থিতি আরও গুরুতর হয়ে ওঠে। অভিযোগ ওঠে যে, মাহমুদুল হাসানের পক্ষ নিয়ে কয়েকজন 'বহিরাগত' বিদ্যালয়ে প্রবেশ করে সহকারী শিক্ষক সাহেব আলীকে পিটিয়ে আহত করেন। গুরুতর আহত অবস্থায় বর্তমানে সাহেব আলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন আছেন।

শিক্ষকদের বক্তব্য: এ বিষয়ে ট্রেড ইনস্ট্রাক্টর মাহমুদুল হাসান জানান, প্রধান শিক্ষকের নির্দেশ অনুযায়ী তিনিই বিদ্যালয়ের ওয়াই-ফাই পাসওয়ার্ড বসিয়ে থাকেন। প্রধান শিক্ষকের অনুমতি ছাড়া তিনি পাসওয়ার্ড দিতে রাজি না হওয়ায় সহকারী শিক্ষক সাহেব আলী তাঁর ওপর চড়াও হন এবং মারধর করেন। বহিরাগত আসার যে অভিযোগ উঠেছে, তা সঠিক নয় বলে তিনি দাবি করেন। তিনি বলেন, তাঁকে মারধর করার খবর শুনে তাঁর এক ভাই বিদ্যালয়ে এসেছিলেন।

কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপ: বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু সাঈদ শেখ জানান, ঘটনার পর বিদ্যালয় চত্বরে পুলিশ আসার পরই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। তিনি তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতিকে অবহিত করেছেন।

শেরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম মঈনুদ্দীন বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার পর পুলিশ ঘটনাস্থল ছেড়ে থানায় ফিরে গেছে। এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো পক্ষই থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেনি। তবে, অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।

মন্তব্য করুন

মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে নজিরবিহীন আর্থিক দুর্নীতি (পর্ব-০১)

মাত্র ২ মাসে শ্রমিক মজুরি বাবদ ৩ কোটি ১৮ লক্ষ টাকা ব্যয়, টেন্ডার ছাড়াই 'স্পট কোটেশন'!

ঢাকা: মিরপুরের মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় কলেজে উন্নয়নমূলক কাজের নামে শ্রমিকদের মজুরি বাবদ বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্ত প্রতিবেদনে দেখা যায়, মাত্র দুই মাসের মধ্যে শ্রমিকদের পারিশ্রমিক মজুরি খাতে ,১৮,৮৯,০৫৪/- (তিন কোটি আঠারো লক্ষ ঊননব্বই হাজার চুয়ান্ন) টাকা ব্যয় করা হয়েছে। এই বিপুল অঙ্কের অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা (PPR) সম্পূর্ণরূপে লঙ্ঘন করা হয়েছে।

কোটি কোটি টাকার মজুরি, টেন্ডার নেই

তদন্ত প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২0২৪ সালের ২০ ডিসেম্বর থেকে ২০২৫ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত (প্রায় দুই মাস) এডহক কমিটির নির্দেশে কোটি ৬৬ লক্ষ টাকার উন্নয়ন কাজ করা হয়। এই কাজের মধ্যে নির্মাণ মেরামতের জন্য ব্যবহৃত শ্রমিক মজুরি বাবদ ব্যয়িত অর্থের হিসাব নিম্নরূপ:

কাজের বিবরণ

ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নাম

ব্যয়িত টাকার পরিমাণ

রং করা (লেবার)

বান্না এন্টারপ্রাইজ

,৩০,৯২,৯৭৭/-

রাজমিস্ত্রী, কাঠ, সেনিটারী (লেবার)

মেসার্স শিলা এন্টারপ্রাইজ

৬১,২০,৪৬০/-

টাইলস, মোজাইক ইলেকট্রিক (লেবার)

তানভীর এন্টারপ্রাইজ

১৩,৭৭,৪৭৪/-

গ্রীল, অভিভাবক সেড (লেবার)

মেসার্স মোল্লা ওয়েল্ড

১২,৪৮,১৪৩/-

মোট শ্রমিক মজুরি ব্যয়

 

,১৮,৮৯,০৫৪/-

(এছাড়া মালামাল ক্রয় বাবদ আরও ,২৩,৭৪,৪৩৭/- টাকা নগদে ব্যয় করা হয়)

বিধি লঙ্ঘন করে স্পট কোটেশন

তদন্তে ডিআইএ নিশ্চিত করেছে যে, এই বিশাল অঙ্কের মজুরি প্রদানের ক্ষেত্রে কোনো প্রকার দরপত্র বা টেন্ডার আহ্বান করা হয়নি।

  • পিপিআর-এর লঙ্ঘন: পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা (PPR) অনুযায়ী, ,০০,০০০/- (ছয় লক্ষ) টাকার অধিক মজুরি প্রদানের ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতামূলক দরপত্রের মাধ্যমে সর্বনিম্ন দরদাতাকে কার্যাদেশ প্রদান করতে হয়।
  • ক্ষমতার অপব্যবহার: কিন্তু মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ লক্ষ টাকার সীমা অতিক্রম করে প্রায় সোয়া তিন কোটি টাকা ব্যয় করেছে 'স্পট কোটেশনের' মাধ্যমে। এই পদ্ধতিতে কাজ দেওয়ায় প্রতিযোগিতামূলক দর নিশ্চিত হয়নি, যা আর্থিক অনিয়ম অর্থ আত্মসাতের পথ সুগম করেছে বলে প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়।

বাতিল কমিটি দিয়ে কাজ করানোর অভিযোগ

তদন্ত প্রতিবেদন আরও জানায়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক নতুন এডহক কমিটি গঠনের নির্দেশ (১৮/১১/২০২৪) জারির পরও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জনাব মোঃ আখলাক আহম্মেদ পূর্বের (বাতিলকৃত) এডহক কমিটির মাধ্যমেই কার্যক্রম চালিয়ে যান। বাতিল কমিটির মাধ্যমে বিপুল অঙ্কের এই উন্নয়ন কাজ করানো হয়েছে, যা মন্ত্রণালয়ের আদেশ অমান্য করার শামিল।

রাজস্ব ফাঁকি

উন্নয়ন কাজের জন্য ঠিকাদারদের পরিশোধিত ,১২,১৮,০০০/- টাকার ওপর ধার্যকৃত ভ্যাট আয়কর সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া হয়নি। শ্রমিক মজুরি বাবদ ব্যয়িত বিপুল অঙ্কের অর্থের ওপরও এই রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হয়েছে। সরকারি কোষাগারে ফেরতযোগ্য মোট ৩৮,০২,২৫০/- (আটত্রিশ লক্ষ দুই হাজার দুইশত পঞ্চাশ) টাকা অবিলম্বে জমা দেওয়ার জন্য প্রতিবেদনে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লিখিত এই ঘটনা প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক এবং আর্থিক ব্যবস্থাপনায় চরম বিশৃঙ্খলা দুর্নীতির ইঙ্গিত দেয়, যেখানে একটি বাতিল কমিটি মাত্র দুই মাসে বিপুল অঙ্কের টাকা টেন্ডার ছাড়াই মজুরি খাতে ব্যয় করে সরকারি বিধিমালাকে পুরোপুরি উপেক্ষা করেছে।

 ( দ্বিতীয় পর্ব আসছে শিগগিরই, কারা কারা এই লুটপাটে জড়িত তাদেরও পরিচয় তুলে ধরা হবে )

 

মন্তব্য করুন

মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে গার্ল গাইডস ও রেঞ্জার কার্যক্রম গতিশীল করার সাত দফা নির্দেশনা

 

 

ভূমিকা: শিক্ষার্থীদের মধ্যে সেবা, নেতৃত্ব ও সুনাগরিকত্বের গুণাবলী বিকাশে দেশের সকল মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গার্ল গাইডস ও রেঞ্জার কার্যক্রম একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই কার্যক্রমকে আরও কার্যকর ও গতিশীল করতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) সম্প্রতি সাত দফা নির্দেশনা জারি করেছে। গত সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) জারি করা এই অফিস আদেশে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের এই নির্দেশনাগুলো যথাযথভাবে পালনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

মাউশির সাত দফা নির্দেশনা:

গার্ল গাইডস ও রেঞ্জার কার্যক্রমের মানোন্নয়ন ও সঠিক পরিচালনা নিশ্চিত করতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের জন্য নিম্নোক্ত সাতটি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে:

১. ইউনিট গঠন ও নিয়মিত কার্যক্রম: প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গার্ল গাইডস ও রেঞ্জার ইউনিট গঠন নিশ্চিত করতে হবে। ইউনিটগুলোকে নিয়মিত প্রশিক্ষণ, সেবামূলক কার্যক্রম এবং সভার আয়োজন করতে হবে।

২. বার্ষিক রিপোর্ট দাখিল: গার্ল গাইডস ও রেঞ্জার কার্যক্রমের বার্ষিক রিপোর্ট প্রতি বছর ৩১ জানুয়ারির মধ্যে সংশ্লিষ্ট আঞ্চলিক অফিসে এবং ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে মাউশিতে আবশ্যিকভাবে প্রেরণ করতে হবে।

৩. ত্রৈমাসিক রিপোর্ট দাখিল প্রক্রিয়া: প্রতি ত্রৈমাসিকের রিপোর্ট পরবর্তী মাসের ৫ তারিখের মধ্যে আঞ্চলিক অফিসে জমা দিতে হবে। আঞ্চলিক অফিসগুলো আবার এসব রিপোর্ট ১০ অক্টোবরের মধ্যে অধিদপ্তরের নির্ধারিত ই-মেইল (girlguides2025@gmail.com) ঠিকানায় পাঠাবে।

৪. প্রতিষ্ঠান প্রধানের দায়িত্ব: প্রতিষ্ঠান প্রধানকে নিয়মিতভাবে ইউনিট গঠন, প্রশিক্ষণ ও সেবামূলক কার্যক্রমের সভা আয়োজন নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি ত্রৈমাসিক ও বার্ষিক রিপোর্টগুলো নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে জমা দেওয়ার বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হবে।

৫. তহবিলের সঠিক ব্যবহার ও পরিশোধ: গার্ল গাইডস ও রেঞ্জার, গার্ল ইন স্কাউট এর তহবিলে আদায়কৃত ফি প্রতিষ্ঠান প্রধান ও গার্ল গাইডস ও রেঞ্জার গাইডারের যৌথ স্বাক্ষরে উত্তোলন করতে হবে এবং এই অর্থ কেবল গার্ল গাইডস ও রেঞ্জার কার্যক্রমেই ব্যয় করা যাবে। এছাড়া, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায়কৃত ফি সরকারি পরিপত্র অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট উপজেলা ও জেলা গার্ল গাইডস ও রেঞ্জারে নিয়মিত পরিশোধ করা আবশ্যক।

৬. কার্যক্রম পরিকল্পনা ও মনিটরিং: গার্ল গাইডস ও রেঞ্জার গাইডারকে এক বছরের জন্য কার্যক্রমের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা তৈরি করে গ্রুপ কমিটির অনুমোদন নিতে হবে এবং সে অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। প্রতিষ্ঠান প্রধান এই কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে কিনা তা নিয়মিত তদারকি করবেন।

৭. গাইডার নিয়োগ ও স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজে সম্পৃক্ততা: যে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গার্ল গাইডস ও রেঞ্জার গাইডার নেই, প্রতিষ্ঠান প্রধান অতি দ্রুত সংশ্লিষ্ট জেলা বা আঞ্চলিক কার্যালয়ে যোগাযোগ করে গাইডার নিয়োগের ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। এছাড়াও, শিক্ষাঙ্গনে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার কাজে গার্ল গাইডস ও রেঞ্জার সদস্যদের স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে সম্পৃক্ত করতে হবে।

মন্তব্য করুন

মাধ্যমিক ও কলেজ শিক্ষা অধিদপ্তর

ভেঙে হচ্ছে দুটি পৃথক অধিদপ্তর

মাউশিকে (মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর) ভেঙে দুটি পৃথক অধিদপ্তর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এর মধ্যে একটি হবে মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এবং অন্যটি হবে কলেজ শিক্ষা অধিদপ্তর

প্রধান উপদেষ্টা এই বিষয়ে সম্মতি দেওয়ার পর, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এখন এই দুটি পৃথক অধিদপ্তর গঠনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। অধিদপ্তর দুটির জন্য পৃথক জনবলকাঠামো (অর্গানোগ্রাম), কার্যতালিকা (অ্যালোকেশন অব বিজনেস) সহ পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাব প্রণয়নের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

আজ রোববার (১২ অক্টোবর, ২০২৫, ধরে নেওয়া হলো) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক অফিস আদেশে এই তথ্য জানানো হয়। এই কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের একজন যুগ্ম সচিবকে।

কমিটিকে আগামী ৩০ দিনের মধ্যে দুটি পৃথক জনবলকাঠামো প্রস্তুত করে মন্ত্রণালয়ে জমা দিতে বলা হয়েছে।

দীর্ঘদিনের দাবি ও বিতর্ক: মাউশিকে বিভক্ত করার এই উদ্যোগ নতুন নয়। ২০১০ সালের জাতীয় শিক্ষানীতিতেও মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরকে ভাগ করে 'মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর' এবং 'উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা অধিদপ্তর' করার কথা ছিল, যা তখন বাস্তবায়িত হয়নি। তবে, মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর ঠিকই গঠিত হয়েছিল। সাম্প্রতিক সরকারের আমলেও শিক্ষা সংস্কার প্রস্তাবে মাউশিকে দুই ভাগ করার বিষয়টি উঠে এসেছিল।

তবে, এই সিদ্ধান্ত নিয়ে শিক্ষা প্রশাসনে পরস্পরবিরোধী অবস্থান রয়েছে। বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা চান না মাউশিকে ভাগ করা হোক। অন্যদিকে, মাধ্যমিকের শিক্ষকেরা দ্রুত তাঁদের জন্য আলাদা 'মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর' করার পক্ষে।

মন্তব্য করুন

এইচএসসি ফলে ইংরেজি বিপর্যয়

দেশে বিদ্যালয়ের প্রাথমিক পর্যায় থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত দীর্ঘ ১২ বছর ইংরেজি ভাষা শিক্ষা বাধ্যতামূলক হওয়া সত্ত্বেও অধিকাংশ শিক্ষার্থীর মধ্যে ইংরেজিভীতি কাটছে না। মুখস্থ-নির্ভর শিক্ষণ পদ্ধতি এবং জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ায় এই ভাষা দ্রুত মস্তিষ্ক থেকে হারিয়ে যায়। যার ভয়াবহ প্রতিফলন দেখা গেছে ২০২৫ সালের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফলে।ৃ

ফলাফলে ভয়াবহ চিত্র

এবারের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় মোট অকৃতকার্য ৫ লাখ ৮ হাজার ৭০১ জন শিক্ষার্থীর প্রায় এক-তৃতীয়াংশের ভরাডুবি হয়েছে ইংরেজি বিষয়ে। ইংরেজিতে পাশের হার ৭৭ শতাংশ থেকে কমে ৫৮ শতাংশে নেমে এসেছে, যা গত দুই দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন। গত পাঁচ বছরে (২০২১-২০২৫) গড় পাশের হার প্রায় ৪০ শতাংশ কমেছে (২০২১ সালে ৯৫.২৬% থেকে ২০২৫ সালে ৫৭.১২%)।

আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এবার মোট পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৫৮.৮৩ শতাংশ পাশ করেছে। বিষয়ভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ইংরেজি, হিসাব বিজ্ঞান এবং আইসিটি—এই তিনটি বিষয়ে ফল সবচেয়ে খারাপ। ইংরেজিতে ফেল করেছেন ৩৮.৮ শতাংশ শিক্ষার্থী। ঢাকা ও বরিশালে পাশের হার ৭০ শতাংশের কাছাকাছি থাকলেও, যশোর বোর্ডে তা সর্বনিম্ন—মাত্র ৫৪.৮২ শতাংশ। বিশেষ করে, ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রে নম্বর পাওয়ার হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে।

দুর্বলতার মূল কারণ: অদক্ষ শিক্ষক ও মুখস্থ নির্ভরতা:

শিক্ষাবিদ ও শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা এই বিপর্যয়ের প্রধান কারণ হিসেবে প্রাথমিক পর্যায় থেকেই অদক্ষ শিক্ষক দ্বারা পাঠদান এবং মুখস্থ-নির্ভর শিক্ষণ পদ্ধতিকে দায়ী করেছেন।

  • শিক্ষকের অভাব ও অদক্ষতা: মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুলগুলোর ৮৪ শতাংশ ইংরেজি শিক্ষকের নেই ইংরেজিতে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি। অর্থাৎ, ফল বিপর্যয়ের অন্যতম নেপথ্যে রয়েছে দক্ষ শিক্ষকের অভাব।

  • প্রাথমিক স্তরে দুর্বল ভিত্তি: শিক্ষাবিদদের মতে, একটি শিশুর ইংরেজির ভিত্তি তৈরি হয় প্রাথমিক স্তরে। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ওয়েভ ফাউন্ডেশনের ২০২৩ সালের জরিপ অনুযায়ী, প্রাথমিকের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির প্রায় ১৬ ভাগ শিক্ষার্থী ইংরেজি বইয়ের একটি বর্ণও পড়তে পারে না

  • ১২ বছর পরেও কথোপকথনে অক্ষমতা: মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) এক গবেষণায় দেখা গেছে, শিক্ষাজীবনে ১২ বছরের বেশি ইংরেজি পড়েও অনেক শিক্ষার্থী ভাষাটিতে সাধারণ কথোপকথন চালাতে এবং সাধারণ বাক্য গঠনে হিমশিম খায়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের একজন অধ্যাপক এই পরিস্থিতির জন্য শিক্ষার্থীদের ইংরেজি-ভীতি, শিখন পদ্ধতির জটিলতা এবং শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের অভাবকে মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তিনি আরও বলেন, শিক্ষার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ মেধাবী মানুষের প্রয়োজন হলেও, শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি, অপর্যাপ্ত বেতন এবং উপযুক্ত সম্মানের অভাবের কারণে মেধাবীরা শিক্ষকতা পেশায় আকৃষ্ট হচ্ছে না, যা ইংরেজির মান খারাপ হওয়ার একটি বড় কারণ।

উত্তরপত্রে হতাশাজনক চিত্র:

দীর্ঘদিন ধরে এইচএসসি পরীক্ষার পরীক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী একজন শিক্ষক জানান, অনেক শিক্ষার্থীর উত্তরপত্রের দিকে তাকালে অর্থহীন ও অসংলগ্ন লেখা চোখে পড়ে। সঠিক বাক্য গঠন ও মৌলিক ব্যাকরণের উপস্থিতি থাকে না। বানান ভুল এতটাই বেশি যে তা পড়তে পরীক্ষকদের কষ্ট হয়। অনেক সময় মনে হয় শিক্ষার্থীরা যেন কখনো কলেজে যায়নি বা বই কেনেনি। তারা ই-মেইল, চিঠি, দরখাস্ত বা অনুচ্ছেদ লেখার মৌলিক নিয়ম সম্পর্কেও ধারণা রাখে না, যা ইঙ্গিত করে যে শিক্ষার্থীরা ইংরেজি বোঝার পরিবর্তে মুখস্থ বিদ্যা কাজে লাগিয়ে পরীক্ষা দিয়েছে।

অন্যান্য কারণ:

শিক্ষাবোর্ডগুলোর কর্মকর্তারা এই পরিস্থিতির জন্য আরও কিছু কারণ উল্লেখ করেছেন:

  • মূল্যায়নে কঠোরতা: দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত পরীক্ষায় সহানুভূতির নম্বর বা অতিরিক্ত নম্বর দেওয়ার প্রথা এবার পুরোপুরি বন্ধ করে কঠোরভাবে মূল্যায়ন করা হয়েছে, ফলে ফলাফলে প্রকৃত সক্ষমতার প্রতিফলন ঘটেছে।

  • অন্যান্য দুর্বলতা: মফস্বলের কলেজগুলোতে অনলাইন বা ডিজিটাল কনটেন্টভিত্তিক পড়াশোনার অভাব, শিক্ষকের ঘাটতি, পরীক্ষার্থীদের দুর্বল লেখনশৈলী এবং শিক্ষার্থীদের পড়ার টেবিল থেকে দূরে সরে যাওয়াও ফলাফলের ওপর বড় প্রভাব ফেলেছে বলে মনে করা হচ্ছে।

মন্তব্য করুন

চাকরি জাতীয়করণ চায় জমিয়াতুল মোদার্রেছীন

মাদরাসা শিক্ষক-কর্মচারীদের সর্ববৃহৎ অরাজনৈতিক সংগঠন বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন বেতন-ভাতার কোনো শতাংশ বৃদ্ধি নয়, বরং কর্মরত সকল মাদরাসা শিক্ষক-কর্মচারীর চাকরি জাতীয়করণের দাবি জানিয়েছে।

সংগঠনটির সভাপতি ও দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক আলহাজ্ব এ এম এম বাহাউদ্দীন বলেন, জমিয়াতুল মোদার্রেছীন ২০১৭ সালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শিক্ষক সমাবেশ করে এই দাবি জানিয়েছিল এবং দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা কাজ করবে।

তিনি জোর দিয়ে বলেন, "আমরা কোনো শতাংশের হিসেবে বেতন-ভাতা চাই না, আমরা চাই জাতীয়করণ করে শতভাগ সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে—তবে সেটি রাস্তায় দাঙ্গাবাজী করে নয়, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে।"

স্ট্যান্টবাজির আন্দোলন নয়, আলোচনার মাধ্যমে দাবি আদায়:

জমিয়াত সভাপতি আন্দোলনরত শিক্ষকদের যৌক্তিক দাবির প্রতি সমর্থন জানালেও বলেন, বর্তমানে যারা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তারা কেবল "স্ট্যান্টবাজি" করছেন। তিনি দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে বলেন, বর্তমান সরকার চাইলেও এখন কোনো বেতন-ভাতা বৃদ্ধি করতে পারবে না।

তিনি আরও বলেন, "ড. ইউনূসূ সাহেব যে পরিস্থিরি উপর, যে অর্থনৈতিক অবস্থায় দায়িত্ব নিয়েছেন সেখান থেকে তিনি চাইলেই কি দিতে পারবেন, কোনোভাবেই সম্ভব নয়। এটা আমাদের বুঝতে হবে। যারা এটা বুঝেও শিক্ষকদের রাস্তায় রেখে পরিবেশ নষ্ট করছেন তারা শুধু স্ট্যান্টবাজি ছাড়া আর কিছুই করছেন না।"

ভবিষ্যৎ সরকারের ওপর আস্থা:

এ এম এম বাহাউদ্দীন জানান, আগামীতে যারা রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসবেন তারা ইতোমধ্যে চাকরি জাতীয়করণ করার অঙ্গীকার করেছেন। তিনি বিশ্বাস করেন, তখন শিক্ষকদের বেতন-ভাতার জন্য দাবিও করতে হবে না, শিক্ষক-কর্মচারীরা যা চান তার চেয়েও বেশি পাবেন।

তিনি দৃঢ়তার সাথে বলেন, "আগামী দিনে দেশের প্রধানমন্ত্রী হবেন তারেক রহমান, ইনশাআল্লাহ। কেউ কোনো কিছু পরিবর্তন করতে পারবে না। তিনি ক্ষমতায় আসলে ২ হাজার নয়, ৫ হাজার টাকা করে চাইলেও শিক্ষকরা পাবেন।"

ক্লাস বন্ধ রেখে আন্দোলনের সমালোচনা:

রাজধানীর মহাখালীস্থ গাউসূল আজম কমপ্লেক্সে বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের উদ্যোগে আয়োজিত 'মাদরাসা শিক্ষার মান উন্নয়নে শিক্ষিকাদের করণীয়' শীর্ষক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি সাম্প্রতিক এইচএসসি ফলাফলে বিপর্যয়ের কথা উল্লেখ করে বলেন, এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য "পিক টাইম"। সামনে নির্বাচন থাকায় এমনিতেই প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। এই সময়ে দাবি-দাওয়ার নাম করে ক্লাস বন্ধ রেখে আন্দোলন করা হচ্ছে এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে সবকিছু বন্ধ রাখার অপচেষ্টা চলছে। রাস্তায় দাঙ্গাবাজী করে দাবি আদায়ের নামে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির চেষ্টা হচ্ছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

নারী শিক্ষকদের গুরুত্ব ও সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির দাবি:

ইনকিলাব সম্পাদক সমাজ গঠনে নারীদের ভূমিকা ও গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, আলেম সমাজ সব সময় নারী শিক্ষা ও নারীর অগ্রগতির জন্য কাজ করেছে, বাধা হচ্ছে নারী শিক্ষা নিয়ে রাজনীতি। তিনি নারী শিক্ষকদের সুযোগ-সুবিধা আরো বাড়ানোর দাবি জানান। দেশের বাইরে প্রশিক্ষণের জন্য নারীদের, বিশেষ করে চীনে পাঠানোর ব্যবস্থার কথা বলেন।

তিনি দক্ষিণ কোরিয়া ও চীনের উন্নয়নে মা ও নারী শিক্ষকদের অগ্রণী ভূমিকার কথা উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশেও প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানে অগ্রগতি আনতে হলে নারী শিক্ষক ও শিক্ষিত মায়েদের প্রয়োজন। এজন্য শিক্ষকদের দাবি-দাওয়া বেশি আসা দরকার নারী শিক্ষকদের কাছ থেকে, কারণ তাদের কষ্ট বেশি।

জামায়াতের আন্দোলনের সমালোচনা:

জমিয়াত সভাপতি মিথ্যাচারের সমালোচনা করে বলেন, এক সময় সাঈদী ও নিজামী সাহেবরা শহীদ মিনারকে 'কুফরি-শিরক' বলতেন। এখন সেই জামায়াতের নেতৃত্বে শহীদ মিনারে গিয়ে শিক্ষকদের নিয়ে আন্দোলন করছে।

জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের মহাসচিবের বক্তব্য: অনুষ্ঠানে জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের মহাসচিব অধ্যক্ষ শাব্বীর আহমদ মোমতাজী বলেন, তারা দীর্ঘদিন ধরেই শিক্ষক-কর্মচারীদের চাকরি জাতীয়করণের দাবি জানিয়ে আসছেন এবং আন্দোলন করছেন। তারা চান শিক্ষকরা সরকারি চাকরিজীবীদের মতো শতভাগ সুযোগ-সুবিধা পাক, তবে তারা সব সময় সরকারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে দাবি আদায়ের পক্ষে।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন- স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব রুহী রহমান এবং মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক দিলরুবা খান

মন্তব্য করুন
×