মাউশির ডিজি অধ্যাপক ড. মুহম্মদ আজাদ খানের পদত্যাগ: 'স্বাস্থ্যগত কারণ' নাকি 'অপমানবোধ'?
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক ড. মুহম্মদ আজাদ খান তাঁর দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চেয়েছেন। গত ৭ অক্টোবর, মঙ্গলবার, তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিবের কাছে তাঁর পদত্যাগপত্র জমা দেন। যদিও পদত্যাগপত্রে 'স্বাস্থ্যগত কারণের' কথা উল্লেখ করা হয়েছে, তবে সংশ্লিষ্ট মহলে এই আকস্মিক পদত্যাগকে ঘিরে 'অপমানবোধের' একটি তীব্র গুঞ্জন তৈরি হয়েছে।
অব্যাহতির আনুষ্ঠানিক কারণ: স্বাস্থ্যগত সমস্যা
অধ্যাপক ড. মুহম্মদ আজাদ খান তাঁর পদত্যাগপত্রে উল্লেখ করেছেন যে, তিনি ২০ ফেব্রুয়ারি মহাপরিচালকের পদে যোগদান করেছিলেন। কিন্তু "স্বাস্থ্যগত কারণে দায়িত্ব পালন আমার পক্ষে কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। তাই আমি মহাপরিচালকের দায়িত্ব হতে অব্যাহতি প্রার্থনা করছি।"
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, তিনি তাঁর আবেদনের সমর্থনে চিকিৎসা সংক্রান্ত নথিপত্রও জমা দিয়েছেন। এই আনুষ্ঠানিক কারণ অনুসারে, শারীরিক অসুস্থতার কারণেই তিনি শিক্ষা প্রশাসনের শীর্ষ এই পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
পদত্যাগের নেপথ্য কারণ: নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি বিতর্ক
অধ্যাপক ড. মুহম্মদ আজাদ খান পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার মাত্র একদিন আগে, ৬ অক্টোবর, সোমবার, শিক্ষা মন্ত্রণালয় মাউশির মহাপরিচালক পদে নতুন নিয়োগের জন্য একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। এই ঘটনাটিই মূলত বিতর্কের মূল কারণ।
-
নজিরবিহীন ঘটনা: মাউশির ইতিহাসে এমন নজির নেই যে, বর্তমান ডিজি দায়িত্বে থাকা অবস্থায়ই নতুন ডিজি নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে।
-
'অপমানজনক' অনুভূতি: মাউশির একাধিক কর্মকর্তার নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন যে, কর্মরত ডিজির উপস্থিতিতে এমন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করাকে অধ্যাপক ড. আজাদ খান 'অপমানজনক' বা 'অপমানিত' বোধ করেছেন। এই অপমানবোধ থেকেই তিনি স্বেচ্ছায় পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন।
অর্থাৎ, যদিও পদত্যাগপত্রে স্বাস্থ্যগত কারণের কথা বলা হয়েছে, তবে ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে—নতুন ডিজি খোঁজার জন্য মন্ত্রণালয়ের 'নজিরবিহীন' বিজ্ঞপ্তিই তাঁর আকস্মিক অব্যাহতি চাওয়ার প্রধান কারণ।
ফেইসবুকে সাবেক ডিজির মন্তব্য
পদত্যাগের পরদিন, অধ্যাপক ড. আজাদ খান তাঁর ব্যক্তিগত ফেইসবুক অ্যাকাউন্টে একটি স্ট্যাটাস দেন, যা আরও আলোচনার জন্ম দিয়েছে। যদিও স্ট্যাটাসটি সরাসরি পদত্যাগ বা মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তি নিয়ে ছিল না, তবে তাঁর একটি মন্তব্যে তিনি ইঙ্গিত দেন যে, "জনবিচ্ছিন্ন গোষ্ঠীর অনেককে (যারা পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে) ভোগ করতে হবে।" এই ধরনের মন্তব্য তাঁর পদত্যাগের পেছনে প্রশাসনের সাথে অসন্তোষ বা বিরোধের আভাস দিচ্ছে।
বর্তমানে পদটি শূন্য হওয়ায়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় দ্রুততম সময়ে নতুন মহাপরিচালক নিয়োগের মাধ্যমে মাউশির প্রশাসনিক কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখার উদ্যোগ নেবে বলে জানা গেছে।
