ভাড়া বাড়িতে দাখিল ও আলিম মাদ্রাসা অনুমোদনের নতুন নীতিমালা
সরকার নতুন নীতিমালা জারি করে ভাড়া বাড়িতে দাখিল ও আলিম মাদ্রাসা স্থাপন, পাঠদান ও অ্যাকাডেমিক স্বীকৃতির অনুমতি দিয়েছে। এ লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালের পুরোনো নীতিমালা সংশোধন করে ‘বেসরকারি মাদ্রাসা (দাখিল ও আলিম) স্থাপন, পাঠদান ও অ্যাকাডেমিক স্বীকৃতি প্রদান নীতিমালা-২০২৫’ প্রণয়ন করেছে বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড।
ভাড়া বাড়িতে মাদ্রাসা অনুমোদন
নীতিমালায় বলা হয়েছে—
-
সিটি করপোরেশন, শিল্প এলাকা ও পৌরসভায় ভাড়া বাড়িতে মাদ্রাসা স্থাপন করা যাবে।
-
ভাড়ার চুক্তিপত্র কমপক্ষে ৬ বছরের হতে হবে।
-
মাদ্রাসার নামে ব্যাংকে অন্তত ৫ লাখ টাকার ডিপোজিট থাকতে হবে।
-
ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, ট্রাস্ট, মিশন, এনজিও, ফাউন্ডেশন বা দাতব্য সংস্থা এসব মাদ্রাসা পরিচালনা করতে পারবে।
দূরত্ব ও জনসংখ্যার শর্ত
-
সিটি করপোরেশন, শিল্প এলাকা ও প্রথম শ্রেণির পৌরসভায় দাখিল মাদ্রাসার মধ্যে ১ কিলোমিটার, আলিম মাদ্রাসার মধ্যে ২ কিলোমিটার দূরত্ব থাকতে হবে।
-
মফস্বলে দাখিল মাদ্রাসার জন্য দূরত্ব হবে ২ কিলোমিটার, আলিমের জন্য ৩ কিলোমিটার।
-
দাখিল মাদ্রাসা স্থাপনে সংশ্লিষ্ট এলাকায় ন্যূনতম ১০ হাজার মানুষ থাকতে হবে।
-
আলিম মাদ্রাসার ক্ষেত্রে ন্যূনতম জনসংখ্যা হতে হবে ৪০ হাজার।
পাঠদানের অনুমোদন
-
দাখিল সহশিক্ষা মাদ্রাসায় প্রতি শ্রেণিতে গড়ে ২৫ জন শিক্ষার্থী থাকতে হবে।
-
দাখিল বালিকা মাদ্রাসায় প্রতি শ্রেণিতে গড়ে ২০ জন শিক্ষার্থী থাকতে হবে।
-
আলিম সহশিক্ষা মাদ্রাসায় প্রতি শ্রেণিতে গড়ে ৩০ জন শিক্ষার্থী এবং আলিম বালিকা মাদ্রাসায় গড়ে ২৫ জন শিক্ষার্থী থাকতে হবে।
বিশেষ ছাড়ের বিধান
নীতিমালায় বলা হয়েছে, অনগ্রসর এলাকা, পাহাড়ি অঞ্চল, হাওর-বাঁওড়, চরাঞ্চল, দ্বীপ, বস্তি, নারী শিক্ষা বা সামাজিকভাবে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর ক্ষেত্রে শর্ত শিথিল করা যাবে।
-
সিটি করপোরেশন, শিল্প এলাকা ও প্রথম শ্রেণির পৌরসভায় জনসংখ্যার শর্ত ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শিথিলযোগ্য।
-
তবে সড়ক ও বিদ্যুৎ সংযোগ ছাড়া কোনো মাদ্রাসার অনুমোদন মিলবে না।
শিক্ষা বোর্ডের মন্তব্য
বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিঞা মো. নূরুল হক বলেন,
“অনেক প্রাইভেট মাদ্রাসা আগে অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানের নামে পরীক্ষা দিতো। এখন তারা নিজেদের নামে পরীক্ষা দিতে পারবে। সরকার আর্থিকভাবে ব্যয় বহন করছে না, অথচ এসব প্রতিষ্ঠান ভালো পারফর্ম করছে। তাই তাদের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তবে শর্ত থাকবে, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নিজস্ব ক্যাম্পাসে যেতে হবে।”
দেশে মাদ্রাসার বর্তমান চিত্র (সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী)
-
স্বতন্ত্র এবতেদায়ি মাদ্রাসা (প্রথম–পঞ্চম শ্রেণি): ৩,৪৩৩টি (এমপিওভুক্ত ১,৫১৯টি, শিক্ষক ৪,৪৩১ জন)
-
দাখিল মাদ্রাসা (ষষ্ঠ–দশম শ্রেণি): ৬,৫৯৩টি (এমপিওভুক্ত ৫,৩৭১টি, শিক্ষক ৭০,৯৮২ জন)
-
আলিম মাদ্রাসা (একাদশ–দ্বাদশ শ্রেণি): ১,৫৫৮টি (এমপিওভুক্ত ৯৮২টি, শিক্ষক ২০,০৮১ জন)
-
কামিল মাদ্রাসা (স্নাতকোত্তর স্তর): ২১৯টি (এমপিওভুক্ত ১৪৫টি, শিক্ষক ৫,০৭৯ জন)
-
এমপিওবিহীন মাদ্রাসা: প্রায় ১,৭৩০টি
সব মিলিয়ে, এমপিও ও নন-এমপিও উভয় ধরনের মাদ্রাসাই সরকারের অনুমোদন নিয়েই পরিচালিত হয়ে আসছে।