আবেদন নিষ্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রতার কারণে হাজার হাজার শিক্ষক-কর্মচারী মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। অনেকে চিকিৎসা ব্যয়, সন্তানদের লেখাপড়া, বিয়ে বা হজ-ওমরাহর খরচ জোগাতে হিমশিম খাচ্ছেন।
অবসরভাতা না পেয়ে অনিশ্চয়তায় ৮৮ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী
বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় ৮৮ হাজার অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক-কর্মচারী চার বছর ধরে অবসর ও কল্যাণ সুবিধা পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন। নিয়মিত চাঁদা দেওয়া সত্ত্বেও অবসরের পর তারা প্রাপ্য অর্থ পাচ্ছেন না। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী অবসরের ছয় মাসের মধ্যে ভাতা পরিশোধ করার কথা থাকলেও পর্যাপ্ত অর্থ না থাকায় তা বাস্তবায়ন করতে পারছে না শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
অবসর সুবিধা বোর্ড ও কল্যাণ ট্রাস্ট জানিয়েছে, জমে থাকা আবেদন নিষ্পত্তিতে এখনই প্রয়োজন প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু সম্প্রতি সরকার দিয়েছে মাত্র ২ হাজার ২০০ কোটি টাকা—যার মধ্যে ২ হাজার কোটি টাকা বন্ড আকারে অবসর সুবিধা বোর্ডে এবং ২০০ কোটি টাকা অনুদান হিসেবে কল্যাণ ট্রাস্টে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এই টাকায় পরিস্থিতি সাময়িকভাবে সামাল দেওয়া সম্ভব হলেও সংকট নিরসন হবে না। বর্তমানে একটি আবেদন নিষ্পন্ন হতে গড়ে আড়াই বছর সময় লেগে যাচ্ছে।
এদিকে, আবেদন নিষ্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রতার কারণে হাজার হাজার শিক্ষক-কর্মচারী মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। অনেকে চিকিৎসা ব্যয়, সন্তানদের লেখাপড়া, বিয়ে বা হজ-ওমরাহর খরচ জোগাতে হিমশিম খাচ্ছেন। কেউ কেউ ধারদেনা করে চলছেন, আবার অনেকে টাকা না পেয়ে মৃত্যুর পর উত্তরাধিকারীরা প্রাপ্য পাওয়ার জন্য ছুটছেন।
শিক্ষাবিদরা বলছেন, আদালতের নির্দেশ বাস্তবায়ন না হলে শিক্ষকদের পেশাদারিত্ব ও সমাজে তাদের মর্যাদা ক্ষুণ্ন হবে। তরুণ প্রজন্মও শিক্ষা পেশায় আগ্রহ হারাতে পারে। তাদের মতে, শিক্ষা খাতকে অগ্রাধিকার না দিয়ে অন্যান্য খাতে অতিরিক্ত ব্যয় করাতেই এই সংকট তৈরি হয়েছে।
অবসর সুবিধা বোর্ডের হিসাবে, বর্তমানে ৪৫ হাজার আবেদন অনিষ্পন্ন, যার জন্য প্রয়োজন ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি। অন্যদিকে, কল্যাণ ট্রাস্টে ৪২ হাজার ৬০০ আবেদন জমে আছে, যা নিষ্পত্তি করতে লাগবে প্রায় ৩ হাজার ৯৩০ কোটি টাকা। অথচ বোর্ডের মাসিক চাহিদা ৬৫ কোটি টাকা হলেও জমা হয় মাত্র ৫৫ কোটি টাকা, ফলে প্রতিবছর প্রায় ১২০ কোটি টাকার ঘাটতি তৈরি হচ্ছে।
চাকরিকালে কাটা টাকা
অবসর সুবিধার জন্য শিক্ষক-কর্মচারীদের মূল বেতনের ৬% এবং কল্যাণ সুবিধার জন্য ৪% টাকা কেটে রাখা হয়। সাম্প্রতিক সময়ে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকেও বছরে ১০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে—এর মধ্যে ৭০ টাকা অবসরের জন্য ও ৩০ টাকা কল্যাণের জন্য। অর্থাৎ, চাকরিকালে নিজেদের জমানো টাকা ফেরত পেতে এখন বছরের পর বছর ধরনা দিতে হচ্ছে শিক্ষকদের।
সমাধানের দাবি
অবসর সুবিধা বোর্ড ও কল্যাণ ট্রাস্টের কর্মকর্তারা বলছেন, সংকট সমাধানে প্রয়োজন এককালীন বিশেষ বরাদ্দ। নাহলে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের দুর্ভোগ দীর্ঘদিন চলতেই থাকবে।