স্কুল-কলেজ নির্মাণে কোটি কোটি টাকার অনিয়ম:
শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকৌশলীদের তদন্ত শুরু
শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের (ইইডি) আওতাধীন স্কুল ও কলেজের একতলা ভবন নির্মাণের কাজ নির্ধারিত ৯ মাসের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অনেক ভবনের কাজ চার বছরেও শেষ হয়নি। অথচ বরাদ্দ অর্থের ৯০ শতাংশই ঠিকাদারদের দেওয়া হয়েছে, আর কাজের মানও খুব নিম্নমানের।
অনেক প্রকৌশলী ও ঠিকাদারের সঙ্গে যোগসাজশে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। 이에 শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ গত ২৩ অক্টোবর ইইডির প্রধান প্রকৌশলীকে পাঁচ প্রকৌশলী ও ১১ ঠিকাদারের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতি তদন্তের নির্দেশ দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১২ নভেম্বর ইইডি আদেশ জারি করে। ১৭ নভেম্বর ওই পাঁচ প্রকৌশলী ও ১১ ঠিকাদার প্রধান কার্যালয়ে হাজির হতে নির্দেশিত হয়েছেন।
অনিয়মের অভিযোগে থাকা প্রকৌশলীদের মধ্যে রয়েছেন:
-
তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী-২ মো. আসাদুজ্জামান
-
তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (পিআরএল) মীর মুয়াজ্জেম হোসেন
-
নির্বাহী প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) মো. জরজিসুর রহমান
-
ঢাকা মেট্রোর উপসহকারী প্রকৌশলী এ কে এম মনিরুজ্জামান
-
উপসহকারী প্রকৌশলী জামিল হোসেন
একাধিক সূত্রের দাবি, বঙ্গবন্ধু প্রকৌশল পরিষদের নেতা ও ওএসডি প্রকৌশলী রায়হান বাদশার সঙ্গে আসাদুজ্জামান ও জরজিসুরের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। ফলে তাদের স্বপদে থাকা অবস্থায় তদন্ত কার্যক্রমের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ।
নবনিযুক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. তারেক আনোয়ার জাহেদী সাংবাদিককে জানান, “মন্ত্রণালয়ের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে আমরা তদন্ত কমিটি করেছি। কমিটি কাজ করছে।”
নাটোর জেলার একাধিক স্কুল-কলেজ ও মাদরাসার নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ জমা পড়েছে। উদাহরণস্বরূপ, বিলমারিয়া দাখিল মাদরাসার কার্যাদেশ দেওয়া হয় ২০২১ সালের ২২ জুন। ৭৬ লাখ ৫০ হাজার টাকার কাজের মাত্র ৩০ শতাংশ বাকি থাকলেও ঠিকাদারকে ৭০ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। ঠিকাদার কাজ বন্ধ করে পালিয়ে গেছেন, ফলে শিক্ষার্থীরা ক্লাস করতে পারছে না।
একাধিক ঠিকাদারের অভিযোগ, ঠিকাদারি কাজের সঙ্গে ‘লাইসেন্স বাণিজ্য’ চলছে। দিনাজপুর পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহ আলমের প্রতিষ্ঠান মেসার্স মা এন্টারপ্রাইজ দেশে একাধিক জেলায় একচেটিয়া কাজ পাচ্ছে এবং লাইসেন্স ভাড়া বাবদ অর্থ রাজনৈতিক ফান্ডে যাচ্ছে। এর সঙ্গে প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান যুক্ত।
অভিযোগে আরও বলা হয়, বিদ্যুৎ প্রকৌশলী জরজিসুর রহমানকে অভিজ্ঞতা, বিভাগ বা মেধাক্রম ছাড়াই যান্ত্রিক নির্বাহী প্রকৌশলী পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে।
নাটোরের কয়েকটি স্কুল ও কলেজের নির্মাণে অসংখ্য কোটি টাকা বিল পরিশোধ হলেও কাজ শেষ হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, ঠিকাদার ও প্রকৌশলী মিলিত হয়ে বিল ভাগ-বাটোয়ারা করেছেন।
তদন্ত কমিটি সোমবার সব পক্ষের বক্তব্য শুনবে এবং প্রয়োজনীয় তদন্ত শেষে প্রতিবেদন দেবে।