চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় গড় পাসের হার ৫৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে মাত্র ৬৯ হাজার ৯৭ জন শিক্ষার্থী। গত বছরের তুলনায় পাসের হার কমেছে প্রায় ১৮ শতাংশ এবং জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থী কমেছে ৭৬ হাজার ৮১৪ জন।
নিম্নমুখী এমন ফলাফলে অনেক শিক্ষার্থী মন খারাপের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির বিষয়ে শঙ্কায় পড়েছেন। কারণ, সামনে তাদের অপেক্ষা করছে কঠিন ‘ভর্তিযুদ্ধ’।
ভর্তিযুদ্ধের সামনে শিক্ষার্থীরা : দেশে সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজ মিলে উচ্চশিক্ষার স্তরে প্রায় ১৩ লাখ আসন রয়েছে। কিন্তু এবার পাস করেছেন মাত্র ৭ লাখ ২৬ হাজার ৯৬০ জন শিক্ষার্থী। অর্থাৎ, আসন ফাঁকা থাকবে ৬ লাখেরও বেশি।
তবুও প্রতিযোগিতা থাকবে শীর্ষস্থানীয় সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। ইউজিসি সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে দেশে ৫৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে; এর মধ্যে ৫৩টিতে চলছে নিয়মিত শিক্ষা কার্যক্রম। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার। সরকারি মেডিকেল কলেজ ও ডেন্টালে আরও প্রায় ৫ হাজার আসন রয়েছে।
ফলে এই ২০-২২টি সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রতিযোগিতা হবে সবচেয়ে তীব্র।
🎓 শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো
শিক্ষার্থীদের প্রধান টার্গেট বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর, জগন্নাথ ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ শীর্ষ ২০-২২টি বিশ্ববিদ্যালয়।
নটর ডেম কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আজিজুল ইসলাম বলেন, “প্রত্যাশা ছিল গোল্ডেন জিপিএ-৫। তা হয়নি। এখন লক্ষ্য বুয়েট— না হলে ঢাবি বা কুয়েট-চুয়েট।”
অন্যদিকে ভিকারুননিসা নূন কলেজের মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী তাহমিনা সুলতানা বলেন, “ঢাকাতেই পড়তে চাই। তাই ঢাবি প্রথম টার্গেট। না হলে রাজশাহী বা জাহাঙ্গীরনগরেও চেষ্টা করবো।”
🏫 বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য বিকল্প
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি না পেলেও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ রয়েছে।
ইউজিসির তথ্য অনুযায়ী—প্রাইভেট মেডিকেল কলেজে আসন: ৬,৩৪০টি প্রাইভেট ডেন্টাল কলেজে: ১,৩৫০টি আর্মড ফোর্স মেডিকেল কলেজে: ৩৫০টি
এছাড়া শতাধিক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স কোর্সে ১,৮৬,৮৯৯টি আসন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজে ২৩,৬৩০টি, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোতে ৮,৫৮,২৭৫টি (অনার্স ও পাস কোর্স মিলিয়ে) আসন রয়েছে।এছাড়া ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬৪,৫২৯টি, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮৭,৫৯৩টি, ইঞ্জিনিয়ারিং ও টেক্সটাইল কলেজে ১,৪৪০টি, নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কলেজে ৫,৬০০টি আসন রয়েছে।
📊 বিশেষজ্ঞের মতামত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. হাফিজুর রহমান বলেন, “সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেলে আসন সীমিত। ফলে সবাই সুযোগ পাবে না। শিক্ষার্থীদের উচিত বিকল্প সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া। সরকারেরও উচিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার মান নিয়ন্ত্রণে রাখা, যাতে সেখান থেকেও দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি হয়।”