ডাকসু নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ, পুনর্মূল্যায়নের ইঙ্গিত ছাত্রদল প্রার্থীর

আবিদুল ইসলাম খান

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে পরাজিত সহ-সভাপতি (ভিপি) প্রার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবিদুল ইসলাম খান বলেছেন, নির্বাচনের সময় ছাত্রদল রাষ্ট্রের স্বার্থে ধৈর্য ও সংযমের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছে। তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, “ভোটার ও প্রার্থীদের অভিযোগের যথাযথ জবাবদিহি করতে যদি প্রশাসন ব্যর্থ হয়, তবে ডাকসু নির্বাচন পুনর্মূল্যায়নের সুযোগ থেকেই যায়।

” শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর কাকরাইলের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে “মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন শিক্ষা ও শিক্ষাঙ্গন” বিষয়ে আয়োজিত তারুণ্যের রাষ্ট্রচিন্তা শীর্ষক সংলাপের তৃতীয় অধিবেশনে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। আবিদ জানান, খুব শিগগিরই ছাত্রদলের পক্ষ থেকে নির্বাচনের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক অবস্থান জানানো হবে। তিনি বলেন, ২০১৯ সালের ডাকসু নির্বাচন নিয়ে এখনও আলোচনা হয়।

এবারকার নির্বাচনও সদ্য শেষ হয়েছে, যেখানে নানা অভিযোগ উঠেছে। যদি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশন এসব অভিযোগের জবাবদিহি করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে নতুন করে নির্বাচন আয়োজনের দাবি উঠতে পারে। তিনি আরও বলেন, “নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর আমরা পূর্বের মতো সংঘাতের পথে হাঁটিনি, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করিনি। ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছি। নতুন বাংলাদেশের নতুন ছাত্ররাজনীতির প্রচলনে ভূমিকা রাখতে চেয়েছি। ভোটে নানা অনিয়মের ফাঁদ পাতা হয়েছিল, সেখানে আমাকে ভিলেন বানানোর চেষ্টা করা হয়েছে।” ভিপি পদে হারের বিষয়ে আবিদুল ইসলাম বলেন, “এটিকে আমরা সরলভাবে পরাজয় বলতে চাই না। এর মধ্য দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি অদৃশ্য রাজনৈতিক শক্তি প্রভাব বিস্তার করছে।”

উল্লেখ্য, গত ৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত ডাকসু নির্বাচনে সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে বিজয়ী হন সাদিক কায়েম এবং সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে নির্বাচিত হন ফরহাদ হোসেন। তারা দুজনই ছাত্রশিবির-সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থী ছিলেন। ১০ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেট ভবনে নির্বাচন কমিশন চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করে।

মন্তব্য করুন

কুষ্টিয়ায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ‘মার্চ ফর গাজা’: ফিলিস্তিনের পক্ষে সংহতির পদযাত্রা

২৪ অক্টোবর গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের হামলায় বিধ্বস্ত দালান থেকে মরদেহ উদ্ধার করছেন ফিলিস্তিনিরা। ছবি: এএফপি
২৪ অক্টোবর গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের হামলায় বিধ্বস্ত দালান থেকে মরদেহ উদ্ধার করছেন ফিলিস্তিনিরা। ছবি: এএফপি

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ‘মার্চ ফর গাজা’ করে গাজার নিরীহ মানুষের প্রতি সহমর্মিতা দেখিয়েছে।

  • শুক্রবার (৩ অক্টোবর) জুমার নামাজের পরে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ থেকে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে পদযাত্রা শুরু করে। পদযাত্রা শেষে মসজিদ প্রাঙ্গণে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করা হয়।

  • শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, মসজিদুল আকসা রক্ষা করার জন্য তারা লড়াই করবে এবং মসজিদটি ছাড়বে না।

  • জামিয়তে তালাবায়ে আরাবিয়ার স্থানীয় নেতা সাজ্জাতুল্লাহ শেখ বলেন, বিশ্বের নানা মহলে বিরোধ থাকলেও তাওহিদ ও শিরক নিয়ে বড় লড়াই চলছে; ভবিষ্যতে তাওহিদ বিজয়ী হবে—এমন ভাবনা জানান।

  • আরো পড়ুন : শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দখলে রাজনৈতিক স্বার্থ, সতর্ক করেছেন উপদেষ্টা

  • তানভীর মণ্ডল বলেন, আল আকসা মুসলমানদের প্রথম কিবলা; ফিলিস্তিনের ইতিহাস ও আবেগ আমাদের সবার সঙ্গে জড়িত। তিনি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে চলমান হত্যাকাণ্ড ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং মুসলিম নেতাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।

  • শাখা ছাত্রশিবির সেক্রেটারি ইউসুফ আলী বলেন, দুই বছরের মধ্যে ইসরায়েলের হাতে প্রায় ৬৬,০০০-এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, অনেক নারী ও শিশু রয়েছেন। সাম্প্রতিক মানবিক নৌবহরে হামলারও কথা উল্লেখ করেন। তিনি বিশ্ব মুসলিমদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আবেদন করেন।

  • মসজিদের খতিব আশরাফ উদ্দিন খান বলেন, ফিলিস্তিনিদের কষ্টে যদি আমরা অনাসক্ত থাকি, তাহলে আমাদের ইসলাম প্রশ্নবিদ্ধ হবে; প্রয়োজনে রক্ত ও জীবন দিতেও প্রস্তুত থাকতে হবে—এমন বক্তব্য দেন।

মন্তব্য করুন

ভারতের বিরুদ্ধে খেলছে ১৮ কোটি মানুষ: ভিপি সাদিক

ভারতের বিরুদ্ধে শুধু ১১ জন না, ১৮ কোটি মানুষ খেলছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের ভিপি আবু সাদিক কায়েম।

বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) ঢাবি মহসিন হলের মাঠে বাংলাদেশ বনাম ভারতের ম্যাচ দেখতে এসে তিনি এই মন্তব্য করেন।

সাদিক বলেন, আমরা এতদিন ভারতের আধিপত্যের মধ্যে ছিলাম। কিন্তু জুলাই বিপ্লবের মধ্যে দিয়ে সে আধিপত্য ধ্বংস হয়ে গেছে। আমরা বিশ্বাস করি আজকে জিতব।

তিনি বলেন, আজকে শুধু মাত্র ভারতের বিরুদ্ধে ১১ জন খেলছে না, খেলছে ১৮ কোটি মানুষ।

মন্তব্য করুন

এইচএসসির নিম্নমুখী ফল, ভর্তিযুদ্ধে নামছে শিক্ষার্থীরা

সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ১৩ লাখ আসন; তবু শঙ্কা সেরা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে

চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় গড় পাসের হার ৫৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে মাত্র ৬৯ হাজার ৯৭ জন শিক্ষার্থী। গত বছরের তুলনায় পাসের হার কমেছে প্রায় ১৮ শতাংশ এবং জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থী কমেছে ৭৬ হাজার ৮১৪ জন।

নিম্নমুখী এমন ফলাফলে অনেক শিক্ষার্থী মন খারাপের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির বিষয়ে শঙ্কায় পড়েছেন। কারণ, সামনে তাদের অপেক্ষা করছে কঠিন ‘ভর্তিযুদ্ধ’।

ভর্তিযুদ্ধের সামনে শিক্ষার্থীরা : দেশে সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজ মিলে উচ্চশিক্ষার স্তরে প্রায় ১৩ লাখ আসন রয়েছে। কিন্তু এবার পাস করেছেন মাত্র ৭ লাখ ২৬ হাজার ৯৬০ জন শিক্ষার্থী। অর্থাৎ, আসন ফাঁকা থাকবে ৬ লাখেরও বেশি।

তবুও প্রতিযোগিতা থাকবে শীর্ষস্থানীয় সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। ইউজিসি সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে দেশে ৫৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে; এর মধ্যে ৫৩টিতে চলছে নিয়মিত শিক্ষা কার্যক্রম। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার। সরকারি মেডিকেল কলেজ ও ডেন্টালে আরও প্রায় ৫ হাজার আসন রয়েছে।
ফলে এই ২০-২২টি সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রতিযোগিতা হবে সবচেয়ে তীব্র।

🎓 শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো

শিক্ষার্থীদের প্রধান টার্গেট বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর, জগন্নাথ ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ শীর্ষ ২০-২২টি বিশ্ববিদ্যালয়।

নটর ডেম কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আজিজুল ইসলাম বলেন, “প্রত্যাশা ছিল গোল্ডেন জিপিএ-৫। তা হয়নি। এখন লক্ষ্য বুয়েট— না হলে ঢাবি বা কুয়েট-চুয়েট।”

অন্যদিকে ভিকারুননিসা নূন কলেজের মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী তাহমিনা সুলতানা বলেন, “ঢাকাতেই পড়তে চাই। তাই ঢাবি প্রথম টার্গেট। না হলে রাজশাহী বা জাহাঙ্গীরনগরেও চেষ্টা করবো।”

🏫 বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য বিকল্প

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি না পেলেও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ রয়েছে।

ইউজিসির তথ্য অনুযায়ী—প্রাইভেট মেডিকেল কলেজে আসন: ৬,৩৪০টি      প্রাইভেট ডেন্টাল কলেজে: ১,৩৫০টি        আর্মড ফোর্স মেডিকেল কলেজে: ৩৫০টি

এছাড়া শতাধিক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স কোর্সে ১,৮৬,৮৯৯টি আসন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজে ২৩,৬৩০টি, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোতে ৮,৫৮,২৭৫টি (অনার্স ও পাস কোর্স মিলিয়ে) আসন রয়েছে।এছাড়া ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬৪,৫২৯টি, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮৭,৫৯৩টি, ইঞ্জিনিয়ারিং ও টেক্সটাইল কলেজে ১,৪৪০টি, নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কলেজে ৫,৬০০টি আসন রয়েছে।

📊 বিশেষজ্ঞের মতামত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. হাফিজুর রহমান বলেন, “সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেলে আসন সীমিত। ফলে সবাই সুযোগ পাবে না। শিক্ষার্থীদের উচিত বিকল্প সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া। সরকারেরও উচিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার মান নিয়ন্ত্রণে রাখা, যাতে সেখান থেকেও দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি হয়।”

 

ধরন বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা মোট আসন মন্তব্য
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ৫৩ ৫০,০০০ উচ্চ প্রতিযোগিতা
সরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল - ৫,০০০ সীমিত আসন
প্রাইভেট মেডিকেল ও ডেন্টাল - ৭,৬৯০ বেশি খরচ
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ১০০+ ১,৮৬,৮৯৯ বিকল্প সুযোগ
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ২৬৪ কলেজ ৮,৫৮,২৭৫ তুলনামূলক সহজ ভর্তি
অন্যান্য (উন্মুক্ত, নার্সিং, টেক্সটাইল, মেরিন ইত্যাদি) - ১,০০,০০০+ বিভিন্ন সুযোগ

 “ভর্তিযুদ্ধে শীর্ষ ১০ বিশ্ববিদ্যালয়”
📍বুয়েট, 📍ঢাবি, 📍রাজশাহী, 📍চট্টগ্রাম, 📍জাহাঙ্গীরনগর, 📍জগন্নাথ, 📍শাহজালাল, 📍খুলনা, 📍বরিশাল ও 📍মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান দেখানো থাকবে।

মন্তব্য করুন

ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি আইন বাস্তবায়নের দাবিতে সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের লং মার্চ ঘোষণা

ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি আইন–২০২৫’ দ্রুত বাস্তবায়নের দাবিতে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে রাজধানীর সরকারি সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। আগামী সোমবার (১৩ অক্টোবর) শিক্ষার্থীরা শিক্ষাভবন অভিমুখে লং মার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করবেন।

গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষার্থীরা বলেন,“আমরা এখন এমন এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছি, যেখানে এক কদম পিছিয়ে আসা মানে বছরের পর বছর ধরে গড়ে ওঠা আশা ও আত্মত্যাগকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া।”

তারা আরও হুঁশিয়ারি দেন, বহু প্রতীক্ষিত এই অধ্যাদেশ অবিলম্বে জারি না হলে আন্দোলন আরও তীব্র আকার ধারণ করবে।

বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষার্থীরা বলেন,“এই আন্দোলন শুধু দাবি নয়, এটি আমাদের অস্তিত্বের লড়াই। রাজধানীর সরকারি সাত কলেজের ইতিহাসে এত সুশৃঙ্খল, পরিকল্পিত ও পরিণত আন্দোলন আগে দেখা যায়নি। আমরা আমাদের শেষ পদক্ষেপ নিতেও প্রস্তুত।”

এর আগে, গত ২৪ সেপ্টেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয় ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’ গঠনের জন্য একটি খসড়া অধ্যাদেশ প্রকাশ করে। খসড়া প্রস্তাব অনুযায়ী, সাত কলেজকে চারটি স্কুলে ভাগ করার পরিকল্পনা রয়েছে—

  • সায়েন্স স্কুলে থাকবে ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ ও বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ

  • আর্টস অ্যান্ড হিউম্যানিটিজ স্কুলে থাকবে সরকারি বাংলা কলেজ

  • বিজনেস স্কুলে অন্তর্ভুক্ত হবে সরকারি তিতুমীর কলেজ

  • ল অ্যান্ড জাস্টিস স্কুলে থাকবে কবি নজরুল সরকারি কলেজ ও সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ

প্রস্তাবিত কাঠামো অনুসারে শিক্ষার্থীরা প্রথম চার সেমিস্টারে সাধারণ নন-মেজর কোর্স করবে, এরপরের চার সেমিস্টারে নির্দিষ্ট বিষয়ে (ডিসিপ্লিনভিত্তিক) অধ্যয়ন করবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাস এমন স্থানে স্থাপন করা হবে, যা সব শিক্ষার্থীর জন্য যাতায়াত-সুবিধাজনক হবে। ক্লাস নেওয়ার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে দুপুর ১টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত।

খসড়া কমিটির সদস্য তানজিমুদ্দিন খান বলেন,“আমাদের দায়িত্ব ছিল খসড়া তৈরি করা। আমরা তা সম্পন্ন করেছি, তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্পূর্ণ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ার।”

উল্লেখ্য, সাত কলেজ আগে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ছিল। ২০১৭ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি এগুলোকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়। কিন্তু এরপর থেকেই নানা প্রশাসনিক ও একাডেমিক জটিলতা দেখা দেয়, যা নিয়ে শিক্ষার্থীরা একাধিকবার আন্দোলনে নামে। দীর্ঘদিনের সেই জটিলতার পর ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ঘোষণা দেয়, কলেজগুলোকে পুনরায় পৃথক করা হবে। পরে চলতি বছরের ১৪ আগস্ট পৃথকীকরণ আনুষ্ঠানিকভাবে সম্পন্ন হয়।

মন্তব্য করুন

২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা শুরু ২৭ মার্চ, রুটিন চূড়ান্ত

২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের সমন্বিত গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা আগামী বছরের ২৭ মার্চ থেকে শুরু হবে। প্রথম দিন 'সি' ইউনিটের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর এক সপ্তাহ বিরতি দিয়ে পর্যায়ক্রমে অন্যান্য ইউনিটের পরীক্ষা নেওয়া হবে।

বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ভবনে অনুষ্ঠিত এক সভায় এই পরীক্ষার তারিখ চূড়ান্ত করা হয়।

সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী ২৭ মার্চ, ৩ এপ্রিল এবং ১০ এপ্রিল—এই তিন দিনে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।

  • ২৭ মার্চ: 'সি' ইউনিটের (বাণিজ্য বিভাগ) ভর্তি পরীক্ষা।

  • ৩ এপ্রিল: 'বি' ইউনিটের (মানবিক বিভাগ) ভর্তি পরীক্ষা।

  • ১০ এপ্রিল: 'এ' ইউনিটের (বিজ্ঞান বিভাগ) ভর্তি পরীক্ষা।

তবে, কবে থেকে শিক্ষার্থীরা ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারবে, সেই তারিখ পরবর্তী সভায় নির্ধারণ করা হবে।

সভায় ইউজিসির পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্য অধ্যাপক ড. তানজিম উদ্দিন খান স্বাগত বক্তব্য রাখেন। এ সময় ইউজিসির সচিব ড. মো. ফখরুল ইসলাম এবং গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যরা উপস্থিত ছিলেন।

মন্তব্য করুন

শিক্ষকতা মহান পেশা, কিন্তু মান-মর্যাদায় পিছিয়ে বাংলাদেশের শিক্ষকরা

শিক্ষকতাকে দীর্ঘদিন ধরে মহান পেশা হিসেবে অভিহিত করা হলেও বাংলাদেশের শিক্ষকরা এখনো মান-মর্যাদা ও আর্থিক দিক থেকে পিছিয়ে রয়েছেন। প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয়—সব পর্যায়ের শিক্ষকই বেতন-ভাতা ও পদমর্যাদা নিয়ে অসন্তুষ্ট।

দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ৬৫ হাজার ৬২০টি, যেখানে শিক্ষক সংখ্যা প্রায় সাড়ে তিন লাখ। এর মধ্যে তিন লাখের বেশি সহকারী শিক্ষক এখনো তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীর মর্যাদায় আছেন। তাঁরা ১৩তম গ্রেডে বেতন পান—যেখানে মূল বেতন ১১ হাজার টাকা, মোট বেতন প্রায় ১৮ হাজার টাকার মতো। যদিও প্রধান শিক্ষকদের সম্প্রতি দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত করা হয়েছে, তবুও এখনো তাঁরা সমপদের পূর্ণ বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না।


 প্রাথমিক শিক্ষকদের আন্দোলন

সহকারী শিক্ষকদের সংগঠন ‘প্রাথমিক সহকারী সংগঠন ঐক্য পরিষদ’ আগামী ১৭ অক্টোবর থেকে অনশন কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে।
তাদের তিন দফা দাবি হলো—
► সহকারী শিক্ষকদের এন্ট্রি পদে বেতন ১১তম গ্রেডে নির্ধারণ,
► চাকরির ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড বাস্তবায়ন,
► প্রধান শিক্ষক পদে শতভাগ পদোন্নতি নিশ্চিত করা।

বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ বলেন,

“আমাদের প্রতিবার আশার বাণী দেওয়া হয়, কিন্তু বাস্তবায়ন হয় না। আমি ১৬ বছর চাকরি করছি, এখনো ১৩তম গ্রেডে বেতন পাই। শিক্ষকরা যদি আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী না হন, পাঠদানে মনোযোগী হবেন কিভাবে?”


বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চিত্র

বাংলাদেশে প্রায় ৯৭ শতাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বেসরকারি। এর মধ্যে প্রায় ৩০ হাজার প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত, যেখানে পাঁচ লাখ শিক্ষক-কর্মচারী আছেন।
এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের মধ্যে যাদের বিএড নেই, তাঁরা ১১তম গ্রেডে ১২,৫০০ টাকা মূল বেতন পান। আর বিএডধারীরা ১০ম গ্রেডে যান, যেখানে মূল বেতন ১৬,০০০ টাকা। তাঁদের বাড়িভাড়া ১,০০০ টাকা ও চিকিৎসা ভাতা ৫০০ টাকা।

কলেজ পর্যায়ের এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা নবম গ্রেডে ২২,০০০ টাকা মূল বেতন পান। তবে সরকারি চাকরিজীবীদের মতো পূর্ণাঙ্গ বাড়িভাড়া, চিকিৎসা ও অন্যান্য ভাতা তাঁরা পান না। সম্প্রতি উৎসব ভাতা মূল বেতনের ২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করা হয়েছে।


 নন-এমপিও শিক্ষকদের দুরবস্থা

দেশে এখনো ৬,৫০০ নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রায় ৮০ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছেন, যাঁরা কোনো সরকারি বেতন পান না।
এছাড়া অনার্স-মাস্টার্স কলেজে প্রায় ৫,৫০০ শিক্ষক এবং স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসায় প্রায় ২০ হাজার শিক্ষক একই অবস্থায় আছেন।
তাঁদের দীর্ঘদিনের দাবি— এমপিওভুক্তির আওতায় আনা এবং পূর্ণাঙ্গ ভাতা নিশ্চিত করা।

এরই মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য বাড়িভাড়া ভাতা মূল বেতনের ২০ শতাংশ করার প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।


 শিক্ষক নেতাদের বক্তব্য : 

বাংলাদেশ শিক্ষক ইউনিয়নের সভাপতি আবুল বাশার হাওলাদার বলেন,

“ইউনেসকোর ১৯৯২ সালের সনদে বলা হয়েছে, শিক্ষকরা থাকবেন সব পেশার ঊর্ধ্বে। বাংলাদেশ সেই সনদে স্বাক্ষর করেছে, কিন্তু আমাদের শিক্ষকরা এখনো বেতন-ভাতায় সবচেয়ে পিছিয়ে। অভাব-অনটনে ভালো শিক্ষাদান আশা করা যায় না।”তিনি আরও বলেন, “শিক্ষকদের অবহেলা, হেনস্তা, চাকরিচ্যুতি এখন নিত্যদিনের ঘটনা। আমরা চাই, আগামী দিনে সরকার যেই হোক না কেন, শিক্ষা খাতকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিক।”


🎓 বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের বাস্তবতা

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তথ্যমতে, বর্তমানে দেশে সরকারি-বেসরকারি মোট ১৭২টি বিশ্ববিদ্যালয় আছে—সরকারি ৫৬টি এবং বেসরকারি ১১৬টি।

কয়েকটি নামি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিক মানের বেতন দিলেও অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানেই শিক্ষকরা নামমাত্র বেতন পান।
সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা সরকারি স্কেল অনুযায়ী বেতন পেলেও তা বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক কম।


🌍 আন্তর্জাতিক তুলনায় বাংলাদেশের অবস্থান

দেশ

পদ/ মূল বেতন (প্রায়)

বাংলাদেশ

প্রভাষক২২,০০০ টাকাঅধ্যাপক৬৪,৬০০ টাকা

ভারত

সহকারী অধ্যাপক৫৫,০০০ টাকাসহযোগী অধ্যাপক৯০,০০০ টাকাঅধ্যাপক,১০,০০০ টাকা

পাকিস্তান / শ্রীলঙ্কা

তুলনামূলকভাবে উন্নত বেতন ভাতা

অধিকাংশ দেশে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে প্রভাষকের পদ নেই—শুরু হয় সহকারী অধ্যাপক থেকে। ফলে আন্তর্জাতিক মানে বাংলাদেশের শিক্ষকরা অনেকটাই পিছিয়ে।


 

শিক্ষকতা পেশা মহান হলেও বাংলাদেশের শিক্ষকরা এখনো মর্যাদা, পদোন্নতি ও আর্থিক নিরাপত্তায় পিছিয়ে। প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয়—সব স্তরেই রয়েছে বেতন বৈষম্য, অনিশ্চয়তা ও আন্দোলনের ইতিহাস।
ইউনেসকোর এবারের প্রতিপাদ্য— “শিক্ষকতা পেশা : মিলিত প্রচেষ্টার দীপ্তি”—এই আহ্বানটিই যেন বাস্তবে প্রতিফলিত হয়, এমনটাই প্রত্যাশা দেশের শিক্ষকদের।

মন্তব্য করুন
×